ইনসাইড বাংলাদেশ

ঢাকাকে কী বার্তা দিলো মস্কো?


প্রকাশ: 23/02/2023


Thumbnail

রাশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত কামরুল আহসানকে গত মঙ্গলবার (২১ফেব্রুয়ারি) মস্কোতে তলব করা হয়েছিল। এ নিয়ে দেশের কূটনৈতিক অঙ্গনে চলছিল নানা আলোচনা- সমালোচনা। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ পরিস্থিতিতে রুশ জাহাজ ‘উরসা মেজর’র ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা থাকার কারণে জাহাজটিকে বাংলাদেশে ঢুকতে দেওয়া হয়নি বলেই রাশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূতকে তলব করা হয়েছে বলে জানিয়েছিল কূটনৈতিক সূত্র। এ নিয়ে বাংলাদেশের সাথে রাশিয়ার দ্বি-পাক্ষিক সম্পর্কে কোনো প্রভাব পড়ছে কি না তা নিয়েও কুটনৈতিক মহলে চলছিল নানা জল্পনা-কল্পনা।

কিন্তু বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত কামরুল আহসানকে ডেকে নিয়ে ঢাকাকে কী পদক্ষেপ নেওয়ার বার্তা দেওয়া হয়েছে সে বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি প্রেস ব্রিফিং-এর আয়োজন করা হয়। বৃহস্পতিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) সাপ্তাহিক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ও জনকূটনীতি বিভাগের মহাপরিচালক সোহেলী সাবরীন জানিয়েছেন নিষেধাজ্ঞার আওতাভুক্ত রাশিয়ান জাহাজ বাংলাদেশের বন্দরে ভিড়তে না দেওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ঐতিহাসিক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কথা বিবেচনায় রেখে ঢাকাকে পদক্ষেপ গ্রহণের বার্তা দিয়েছে মস্কো। এতে বাংলাদেশের সাথে রাশিয়ার দ্বি-পাক্ষিক সম্পর্কে কোনো প্রভাব পড়বে না। 

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সেহেলী সাবরীন মনে করছেন, রাশিয়ার জাহাজকে বাংলাদেশে ভিড়তে না দেওয়ার ঘটনায় দুই দেশের সম্পর্কে কোনো প্রভাব পড়বে না। তার ভাষায়, আমাদের বোঝাপড়া এতোটাই ভালো যে আমরা মনে করি না, জাহাজের একটি বিষয় নিয়ে দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান দ্বি-পাক্ষিক এবং বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ক্ষেত্রে কোনো বিরূপ প্রভাব পড়বে! জাহাজ সম্পর্কিত সমস্যাটি ছয় সপ্তাহের আগে। কিন্তু আমাদের রাষ্ট্রদূতকে আলোচনার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে ২১ ফেব্রুয়ারি। সুতরাং আমরা মনে করি, আমাদের বিদ্যমান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা কোনো বিরূপ প্রভাব ফেলবে না।

আরও পড়ুন: ভূ-রাজনীতির প্রভাব: মার্কিন-রাশিয়া দ্বন্দ্ব; বাংলাদেশ কেন? 

সাপ্তাহিক প্রেস ব্রিফিংয়ে সোহেলী সাবরীন জানান, রাশিয়ার উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশের বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ও রাশিয়ার ঐতিহাসিক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কথা বিবেচনায় রাখার অনুরোধ জানান। তিনি এ ঘটনায় রাশিয়ার উদ্বেগের বিষয়টি বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট পৌঁছে দিতে রাষ্ট্রদূতকে অনুরোধ করেন। রাষ্ট্রদূত রাশিয়ার ৬৯টি জাহাজকে বাংলাদেশে ভিড়তে না দেওয়ার সরকারি নির্দেশনার বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরেন। কেন জাহাজকে ভিড়তে দেওয়া হয়নি, সে প্রসঙ্গে বলেছেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত। 

মুখপাত্র বলেন, রাশিয়া বাংলাদেশের পরীক্ষিত বন্ধু। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার সময় আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক গ্রহণযোগ্যতার ক্ষেত্রে রাশিয়ার ভূমিকা আছে। জাতিসংঘে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে গৃহীত প্রস্তাবে আমাদের পক্ষে রাশিয়ার সমর্থন ছিল। সেটা একবার না দুই দু'বার ছিল। রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের সময়েও বিশ্বব্যাপী যে অর্থনৈতিক মন্দা পরিস্থিতি তখনও কিন্তু গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপে বাংলাদেশ রাশিয়া একযোগে কাজ করে যাচ্ছে।

এসব বিষয়ে কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, মস্কো ঢাকাকে যে বার্তা দিয়েছে তা বিশ্লেষন সমসাময়িক প্রেক্ষাপটে একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। ১৯৭১ সাল থেকে রাশিয়া বাংলাদেশের পরীক্ষিত বন্ধু। এই বন্ধুত্বের ক্ষেত্রে রাশিয়া বাংলাদেশ দীর্ঘদিন থেকে পারস্পারিক উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে কাজ করছে। সম্প্রতি বাংলাদেশের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার ওপর আমেরিকার নিষেধাজ্ঞাকে কেন্দ্র করেও রাশিয়া বাংলাদেশের পক্ষ অবলম্বন করেছিল। সেই ক্ষেত্রে বাংলাদেশের কাছে রাশিয়ার গুরুত্ব অধিক হওয়ার কথা থাকলেও বিশ্ব রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু আমেরিকার নিষেধাজ্ঞা থাকার কারণেই বাংলাদেশসহ অনেক দেশই আমেরিকার নিষেধাজ্ঞায় থাকা রাশিয়ার ৬৯টি জাহাজ তাদের দেশের সীমানায় প্রবেশের অনুমতি দেয়নি। সেই ক্ষেত্রে এটাই অনুমান যায়, যেহেতু অন্যান্য দেশগুলোও একই ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে, সেহেতু বাংলাদেশের সিদ্ধান্তও সঠিক। যেহেতু অন্যান্য দেশের সাথে রাশিয়ার সম্পর্কের অবনতি হয়নি, সেহেতু বাংলাদেশের সাথেও রাশিয়ার সম্পর্কের অবনতির কোনো লক্ষণ নেই।

আরও পড়ুন: আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে বাংলাদেশ: কী ভাবছে রাশিয়া?

সাপ্তাহিক প্রেস ব্রিফিংয়ে- রাশিয়ার সেই জাহাজটি (উড়সা মেজর) অন্য দেশেও ভিড়তে না পারা প্রসঙ্গে মুখপাত্র সেহেলী সাবরীন জানান, যে জাহাজটিতে মালামাল আসতে পারেনি, সেটি কিন্তু শুধু বাংলাদেশের বন্দরে অবতরণ করতে পারেনি- তা নয়। সেটি তারা (রাশিয়া) অন্য গন্তব্যে আরও অনেক দেশে অবতরণ করতে চেয়েছিল, কিন্তু তারা (রাশিয়া) সেটা পারেনি। সুতরাং এটা শুধু আমাদের ক্ষেত্রে নয়।

রাশিয়ার জাহাজগুলোতে যে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া আছে, সেগুলো আন্তর্জাতিক নয়; যুক্তরাষ্ট্রের। সুতরাং বাংলাদেশ কেন এটি মানছে? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে মুখপাত্র জানান, অন্যান্য রাষ্ট্রগুলো কিন্তু একই পদক্ষেপ নিয়েছে। উরসা মেজরের পর আরও রাশিয়ার জাহাজ কিন্তু বাংলাদেশে এসেছে, সেগুলো নিষেধাজ্ঞা বহির্ভূত জাহাজ। বাংলাদেশ বাণিজ্য নির্ভর দেশ। আমরা কিন্তু বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে সকল দেশের সঙ্গে সম্পর্ক বিদ্যমান রাখছি এবং আমদানি রপ্তানির ক্ষেত্রে সবার সঙ্গে একটি সুসম্পর্ক বজায় রেখে জাতীয় স্বার্থ নিশ্চিতের জন্য কাজ করছি। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের বাণিজ্য অনেক বেশি। যুক্তরাষ্ট্রে আমাদের ৮০ পারসেন্ট এক্সপোর্ট আছে।

কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বিশ্ব বাণিজ্যের কেন্দ্রবিন্দু আমেরিকা। আমেরিকাসহ অন্যান্য দেশুগুলোর সাথে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক রয়েছে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের যে পররাষ্ট্রনীতি রয়েছে, তা মেনেই বিশ্ব বাণিজ্য চালিয়ে আসছে বাংলাদেশ। অন্যদিকে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধকে কেন্দ্র করে আমেরিকা চাইছে বাংলাদেশকে তার বলয়ে নিয়ে যেতে। কিন্তু বাংলাদেশ তার পররাষ্ট্রনীতি অনুসরন করে নিরপেক্ষ ভূমিকায় রয়েছে। তাছাড়া আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে ইউক্রেন এবং রাশিয়ার মধ্যে যে যুদ্ধাবস্থা চলছে, তাতে আমেরিকা ইউক্রেনের পক্ষ নিলেও বাংলাদেশ আমেরিকা বা রাশিয়া বা ইউক্রেন কারো পক্ষেই অবস্থান নেয়নি। তাছাড়া এটি বাংলাদেশের কোনো অভ্যন্তরীণ সমস্যাও নয়। বৈদেশিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সবার সাথে সুসম্পর্ক রেখে যেভাবে এগিয়ে যাওয়া যায়, সেভাবেই এগিয়ে চলেছে। সুতরাং এ ক্ষেত্রে রাশিয়া এবং বাংলাদেশের দ্বি-পাক্ষিক সম্পর্কের কোনো প্রভাব পড়ার কথা নয়। তবে এখন দেখার বিষয় হচ্ছে বাংলাদেশকে নিয়ে কী ভাবছে রাশিয়া?



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭