ইনসাইড পলিটিক্স

‘খালেদা’ আতঙ্কে বিএনপি


প্রকাশ: 24/02/2023


Thumbnail

বিএনপি এখন সরকারের বিরুদ্ধে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন করছে। ধাপে ধাপে এই আন্দোলন সারাদেশে ছড়িয়ে দেয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে দলটি। কিন্তু এর মধ্যেই বিএনপিতে নতুন আতঙ্ক শুরু হয়েছে। এই আতঙ্কের নাম খালেদা আতঙ্ক। বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ভূমিকা কী হবে? তাকে নিয়ে সরকার কি করছে এ নিয়ে বিএনপির মধ্যে নানা জল্পনা-কল্পনা এবং আতঙ্ক বিরাজ করছে। 

গত এক সপ্তাহে বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে কোনো বিএনপি নেতা যোগাযোগ করতে পারেননি। এমনকি বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসক যারা বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার শারীরিক ব্যাপারে নিয়মিত যোগাযোগ করতেন তারাও বেগম জিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি। বরং শামীম ইস্কান্দার এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে লিভার, হার্ট বিশেষজ্ঞ এবং মেডিসিন বিশেষজ্ঞদেরকে নিয়মিত নিয়ে যাচ্ছেন ফিরোজায় এবং সেখানেই বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসা সংক্রান্ত বিষয়গুলো সম্পন্ন করা হচ্ছে। শামীম ইস্কান্দার বিএনপির কোনো নেতার সঙ্গে কথা বলছেন না। কিন্তু শামীম ইস্কান্দার এর সঙ্গে ফিরোজায় কে বা কারা যাচ্ছেন—এই নিয়ে বিএনপির মধ্যে নানারকম আলাপ-আলোচনা এবং গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে। 

বিএনপির একজন নেতা মনে করছেন, নির্বাচনের আগে বেগম খালেদা জিয়াকে ‘টোপ’ হিসেবে ব্যবহার করতে চায় সরকার। বেগম খালেদা জিয়াকে রাজনীতিতে সক্রিয় করে তাকে দিয়ে নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দেওয়ার একটি পরিকল্পনার কথা বিএনপির কোনো কোনো নেতা জানতে পেরেছেন বলে জানিয়েছেন। তবে কেউই প্রকাশ্যে কথা বলেননি। তবে বিএনপির একজন নেতা স্বীকার করেছেন যে, তিনি শঙ্কার কথা লন্ডন পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার কাছে বলেছেন। উল্লেখ্য যে, ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত খালেদা জিয়া কারাগারে যান। এরপর ২৯ অক্টোবর জিয়া চ্যারিটিব্যাল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বেগম খালেদা জিয়া আবারও দণ্ডিত হন। দুটি মামলায় তার ১৪ বছরের কারাদণ্ড রয়েছে। দীর্ঘ দুই বছরের বেশি সময় কারাগারে থাকার পর ২৪ মার্চ, ২০২০ সালে বেগম খালেদা জিয়াকে জামিনে মুক্ত করা হয়। এই জামিনে মুক্ত করতে গিয়ে বেগম খালেদা জিয়ার ওপর ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ প্রয়োগ করা হয়। ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ অনুযায়ী সহকারি নির্বাহী আদেশে যেকোনো ব্যক্তিকে বিশেষ কারণে সাজা স্থগিত করে জামিন দেয়া যেতে পারে। প্রথম দফায় ৬ মাস করে এখন পর্যন্ত প্রায় তিন বছর বেগম খালেদা জিয়া জেলের বাইরে ফিরোজা রয়েছেন। এর মধ্যে তিনি কয়েক দিন হাসপাতালে ছিলেন। এ সময় থেকে তিনি রাজনীতি থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রেখেছেন। কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে তাকে দেখা যাচ্ছে না। এমনকি বক্তৃতা-বিবৃতি দেয়ার ক্ষেত্রেও তিনি মৌনব্রত পালন করছেন। এই কারণে হঠাৎ করে আওয়ামী লীগের নেতারা বেগম খালেদা জিয়ার রাজনীতি নিয়ে বিতর্ক করছেন কেন তা নিয়ে বিএনপির মধ্যে প্রশ্ন উঠছে।

বিএনপি মনে করছে যে, নির্বাচনের আগে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ খালেদা জিয়াকে নিয়ে খেলতে পারেন। খালেদা জিয়ার ব্যাপারে বিএনপির নেতাদের তিনটি ভাবনা রয়েছে। প্রথমত, বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানো হবে—এরকম একটি সমঝোতা করে তিনি নির্বাচনের ঘোষণা দেবেন এবং নির্বাচনের পরে তিনি বিদেশে যাবেন। দ্বিতীয় শঙ্কা হল; বেগম খালেদা জিয়া বিএনপির রাজনীতিতে জড়িত হয়ে তারেক জিয়াকে দল থেকে বহিষ্কার করবেন এবং তিনি তাঁর ঘনিষ্ঠ কোনো ব্যক্তিকে দলের নেতৃত্ব দেবেন এবং তিনি নির্বাচনে যাবেন। তৃতীয়তঃ বেগম খালেদা জিয়াকে রাজনীতি করতে দেওয়ার ব্যাপারে আন্তর্জাতিক মহলের কোনো চাপ আছে সেই জন্য সরকার এখন তার রাজনৈতিক প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বলছেন। তবে যে কারণেই হোক না কেন খালেদা জিয়াকে তারা এখন পড়তে পারছেন না। খালেদা জিয়ার ভাবনার কথাও বিএনপি এখন জানে না। কাজেই খালেদা জিয়াকে যদি রাজনীতির মাঠে নামানো হয় তবে তিনি সরকারের পক্ষে খেলতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিশেষত দীর্ঘদিন কারাগারে থাকার পর কারা-আতঙ্কে ভোগা বেগম খালেদা জিয়া হয়তো শেষ পর্যন্ত সরকারের কাছে আত্মসমর্পণ করবেন—এমন ধারণা বিএনপির মধ্যে। আর তাই বিএনপি নেতারা এখন খালেদা আতঙ্কে ভুগছেন।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭