ইনসাইড পলিটিক্স

নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের সামনে পাঁচ চ্যালেঞ্জ


প্রকাশ: 24/02/2023


Thumbnail

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাকি আর এক বছরেরও কম সময়। টানা চতুর্থবারের মতো ক্ষমতায় আসার জন্য আওয়ামী লীগ চেষ্টা করছে। আর সেই লক্ষ্যে নির্বাচনী প্রচারাভিযানও শুরু হয়েছে। আগামীকাল আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যাচ্ছেন গোপালগঞ্জে। সেখানে তিনি জনসভায় ভাষণ দেবেন। ১১ মার্চ তাঁর ময়মনসিংহের জনসভায় ভাষণ দেয়ার কথা রয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এ ভাষণ নেতা-কর্মীদের মধ্যে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করছে। সাধারণ মানুষকে উজ্জীবিত করছে। 

আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন যে, গত ১৪ বছরে বাংলাদেশের যে উন্নয়ন হয়েছে, সে উন্নয়নের কথা ঠিকঠাক মতো জনগণের কাছে প্রচার করতে পারলেই জনগণ আওয়ামী লীগকে আবারও ভোটে জয়যুক্ত করবে। এর কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু আওয়ামী লীগের অনেকেই মনে করছেন, সঠিকভাবে আওয়ামী লীগের অর্জনগুলো জনসমক্ষে তুলে ধরার চেষ্টা হচ্ছে না। তবে নির্বাচনের আগে উন্নয়নের বাইরেও আওয়ামী লীগের জন্য অনেকগুলো চ্যালেঞ্জ রয়েছে। কিছু অস্বস্তির জায়গা রয়েছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। নির্বাচনের আগে যে পাঁচ চ্যালেঞ্জ আওয়ামী লীগকে মোকাবেলা করতে হবে, তার মধ্যে রয়েছে;

১. বেপরোয়া ছাত্রলীগ এবং অঙ্গ সংগঠন: আওয়ামী লীগের অন্যতম অঙ্গ-সংগঠন ছাত্রলীগের বেপরোয়া আচরণ সরকারের জন্য বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। কিছু দিন পরপরই বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগের অনভিপ্রেত ঘটনা আওয়ামী লীগের জন্য অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই সমস্ত ছোট ছোট ঘটনাগুলো বড় অবয়বে আওয়ামী লীগের ইমেজ নষ্ট করছে বলে অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। নির্বাচনের আগে ছাত্রলীগের লাগাম টেনে ধরা আওয়ামী লীগের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। 

২. দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি: দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি আওয়ামী লীগের জন্য নির্বাচনের আগে অন্যতম বড় একটি অস্বস্তির নাম। বিশেষ করে সামনে রোজা, এই রোজার মধ্যে মূল্যস্ফীতি যদি বাড়তে থাকে, তাহলে জনগণের মধ্যে এক ধরনের অসন্তোষ দানা বেঁধে ওঠতে পারে বলে ধারনা করা হচ্ছে। নির্বাচনের আগে এটি শেষ রমজান। কাজেই আগামী রমজানকে ঘিরে যেন দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং দ্রব্যমূল্য মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে থাকে, সেটি আওয়ামী লীগের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। 

৩. দুর্নীতি এবং অর্থ পাচার: নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের জন্য আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ হলো দুর্নীতি এবং অর্থ পাচার। অর্থপাচার নিয়ে সরকারের মধ্যেও এক ধরনের ক্ষোভ-অসন্তোষ রয়েছে। কিছু চিহ্নিত মহলের লাগামহীন অর্থ পাচার এবং অর্থনীতিকে সঙ্কটে ফেলেছে বলেও কেউ কেউ মনে করছেন। আর এটির লাগাম টেনে ধরার জন্য সরকারকে এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে বরে অনেকের ধারনা। কারণ এটি যদি না করা যায়, তাহলে আওয়ামী লীগের জন্যও পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে বলে অনেকেই ধারনা করছেন।

৪. আন্তর্জাতিক ভারসাম্য: রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে স্পষ্ট বিভাজন ঘটেছে। আওয়ামী লীগ সরকার এখন পর্যন্ত ভারসাম্যমূলক অবস্থার মধ্যে রয়েছে। কিন্তু এই ভারসাম্যমূলক অবস্থা নির্বাচন পর্যন্ত কতোটুকু রাখতে পারবে এবং শেষ পর্যন্ত নির্বাচনের আগে আন্তর্জাতিক চাপ কতটুকু থাকবে, সেটিই দেখার বিষয়। মনে করা হচ্ছে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে যে চাপ সৃষ্টি করছে, সেটি মূলত রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে এবং বাংলাদেশ যেন রাশিয়ার দিকে ঝুঁকে না পড়ে সেটি হলো একটি বড় চ্যালেঞ্জ। সেই ক্ষেত্রে নির্বাচনের আগ পর্যন্ত আওয়ামী লীগকে রাশিয়া-চীনের কাছ থেকে একটু দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। অন্যদিকে পশ্চিমা বলয়ের আস্থা অর্জন করতে হবে। সে কাজটি আওয়ামী লীগ কিভাবে করবে সেটিই এখন দেখার বিষয়।

৫. বিদ্যুৎ পরিস্থিতি: শীতের আগে বিদ্যুৎ সঙ্কট দেখা দিয়েছিল এবং ব্যাপকভাবে লোডশেডিং হচ্ছিল। এখন বিদ্যুৎ পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক হয়েছে। কিন্তু অনেকেই মনে করছেন যে, শীতের কারণে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে, কারণ শীতে বিদ্যুতের চাহিদা কম থাকে। কিন্তু আবার গ্রীষ্ম শুরু হলেই নতুন করে লোডশেডিং হতে পারে- এমন ধারনা করা হচ্ছে এবং সেই লোডশেডিং সরকারকে একটি অস্বস্তির মধ্যে ফেলতে পারে বলেও মনে করা হচ্ছে। 

এই পাঁচ অস্বস্তি কাটিয়ে আওয়ামী লীগকে আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে হবে এবং টানা চতুর্থবারে মতো জয়ী হওয়ার জন্য চেষ্টা করতে হবে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭