ইনসাইড পলিটিক্স

নির্বাচনে আসছে জামায়াত: ১২০ আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত!


প্রকাশ: 25/02/2023


Thumbnail

বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিলেও গত বছরের (২০২২ সাল) ২৪ ও ৩০ ডিসেম্বরের পর আর কোনো কর্মসূচিতে অংশ নেয়নি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে ফেরানোসহ ১০ দফা দাবিতে বিভাগীয় শহরগুলোতে শনিবারের (৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩) সমাবেশের দিনও হাত গুটিয়ে বসেছিল জামায়াত। ৩০ ডিসেম্বর রাজধানীর বায়তুল মোকাররমে জড়ো হওয়ার ঘোষণা দিয়ে সেখানেও যায়নি জামায়াতের নেতা-কর্মীরা। পরে মালিবাগে ঝটিকা মিছিল করতে গিয়ে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনায় ৫ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয় জামায়াতের ১৫ জনকে। এ ঘটনাতেও বিএনপির পক্ষ থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি।

এদিকে যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে বিএনপি রাজধানীসহ বিভাগীয় শহর এবং ইউনিয়নগুলোতেও পদযাত্রা কর্মসূচি করেছে, কিন্তু সেখানেও ছিল না জামায়াত। এই নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রশ্ন ছিল আসলে কি করছে জামায়াত? কেউ কেউ ধারনা করেছিলেন, ভিন্ন পন্থা অবলম্বন করছে জামায়াত। ২০১৩ সালে হাইকোর্টের রায় অনুসারে নির্বাচন কমিশনে জামায়াতের নিবন্ধীকরণ অবৈধ বলে ঘোষিত হয়। সেইসঙ্গে নির্বাচন কমিশন জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করার পর, ভোটে অংশ নেওয়ার নিবন্ধন পেতে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি (বিডিপি) নামে নতুন দল গঠন করে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) আবেদন করে জামায়াত। ভোটের রাজনীতির কারণে সরকার জামায়াতকে পুরোপুরি নিষিদ্ধও করতে পারছে না বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। 

সম্প্রতি জামায়াতের রাজনীতি নিয়ে পাওয়া গেছে চমকপ্রদ তথ্য। ভেতরে ভেতরে দল গোছানোর পাশাপাশি নির্বাচনেরও প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। নিবন্ধন বাতিল হলেও একাদশ সংসদের মতো আগামী নির্বাচনেও অংশ নেবে দলটি। যদিও জামায়াতের নেতারা বলছেন, তাদের দল বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না। জামায়াতের জোরেশোরে নির্বাচন প্রস্তুতি নেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে দলটির নেতারা বলেছেন, জামায়াত নির্বাচনমুখী একটি রাজনৈতিক দল। সব সময়ই মাঠপর্যায়ে প্রার্থী যাচাই-বাছাই চলে। ইতিমধ্যে তারা ১২০টি আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করেছেন। 

অন্যদিকে গত ১৩ ডিসেম্বর জঙ্গি সম্পৃক্ততার অভিযোগে জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট। নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার সঙ্গে জামায়াতের কোনো সংশ্লিষ্টতা রয়েছে কি না- তা খতিয়ে দেখতেই তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের সিটিটিসি শাখা। শফিকুর রহমানের ছেলে রাফাত চৌধুরী নতুন এই জঙ্গি সংগঠনের সিলেট আঞ্চলের সমন্বয়ক বলে প্রমাণ পায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। পরে জানা গেছে, তার ছেলে রাফাত চৌধুরীসহ আরও বেশ কয়েকজনের জঙ্গী সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ততার পেছনে ডা. শফিকুর রহমানের প্রত্যক্ষ ইন্দন রয়েছে। এ ছাড়াও, তিনি এই সংগঠনকে পৃষ্ঠপোশকতা করছেন। এই ঘটনার পর থেকেই জামায়াতের আর কোনো খোঁজ খবরও দেশের রাজনৈতিক অঙ্গণে দেখা যায়নি। 

সূত্র জানায়, ১৯৮৬ সালের ৭ মে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামী ৭৬টি আসনে মনোনয়ন দিয়েছিল। ওই নির্বাচনে দলটি ১০টি আসনে বিজয়ী হয়। ১৯৮৮ সালের ৩ মার্চ চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করে জামায়াত। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে জামায়াত ১৮টি আসনে বিজয়ী হয়। এই নির্বাচনে দলটি ২২২ জন প্রার্থী দিয়েছিল।

১৯৯৬ সালের ১২ জুন অনুষ্ঠিত সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াত তিনটি আসনে জয়ী হয়। ২০০১ সালের ১ অক্টোবর নির্বাচনে জামায়াত ১৭টি আসন পায়। মহিলা আসনগুলো থেকে চারটি আসনে জয়ী হয় তারা। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াত দুটি আসনে বিজয়ী হয়। ওই নির্বাচনে দলটি জোটগতভাবে ৩৯টি ও চারটিতে এককভাবে নির্বাচন করে। ২০১৮ সালের ৮ ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশন (ইসি) বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। ২০০৮ সালের ৪ নভেম্বরে জামায়াতে ইসলামীকে নিবন্ধন দেওয়া হয়েছিল। ২০০৯ সালে হাইকোর্টে দায়ের করা রিট মামলার রায়ে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করা হয়। সে কারণে নির্বাচন কমিশন জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করে।

জামায়াত আগামীতে আওয়ামী লীগ কিংবা বিএনপির মতো কোনো দলের ক্ষমতায় যাওয়ার সিঁড়ি হবে না দাবি করে সংগঠনটির নেতারা জানান, এককভাবে নির্বাচন করলেও আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে জামায়াত অংশ নেবে না। নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে সক্রিয় থাকবে।

জামায়াতের নির্বাহী পরিষদ সদস্য মতিউর রহমান আকন্দ জানান, নির্বাচনের প্রস্তুতি কোনো অস্বাভাবিক বিষয় নয়। দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে তারা আন্দোলন করছেন। এ আন্দোলনকে সফল করার পর নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আসবে।

সূত্র জানায়, তৃণমূলে দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম নিয়ে বেশি ব্যস্ত রয়েছেন দলটির নেতারা। দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা বিভিন্ন জেলায় যাচ্ছেন নেতাকর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা মহানগর জামায়াতের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, আমরা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। তবে তা আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে নয়। কারণ বর্তমান সরকারের অধীনে বিগত দিনে যে দুটি সংসদ নির্বাচন হয়েছে তাতে জনগণ ভোট দিতে পারেনি। আগামী নির্বাচন বর্তমান সরকারের অধীনে হলে সে নির্বাচনে জনগণ ভোট দিতে পারবে না। সে জন্য আমরা এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাব না।

জানা গেছে, বিএনপি অধ্যুষিত হিসেবে পরিচিত বগুড়ার সাতটি আসনের মধ্যে পাঁচটিতেই প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে। অন্য দুটিতেও প্রস্তুতি শুরু করেছে জামায়াত। প্রার্থী চূড়ান্ত করার আগে বিভিন্ন আসনে জরিপ পরিচালনা করছে দলটি। জরিপের রিপোর্ট অনুযায়ী দলটির নির্বাচন পরিচালনা কমিটি দেশের বিভিন্ন আসনে প্রার্থী নির্বাচন করতে শুরু করেছে। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি জেলায় আসন এবং প্রার্থীর নাম নির্বাচন করে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাদের মাঠে কাজ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পাঁচ সদস্যের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান হিসেবে রয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ মুহাম্মাদ ইজ্জত উল্লাহ। আরও রয়েছেন দলের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, হামিদুর রহমান আজাদ ও সাবেক শিবির সভাপতি ইয়াসিন আরাফাত। যে সব উপজেলায় দলটির চেয়ারম্যান কিংবা ভাইস চেয়ারম্যান আছে সে সব নির্বাচনী এলাকায় প্রার্থী চূড়ান্ত করা হচ্ছে।

এ সব বিষয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, নতুন নামে রাজনৈতিক দল গঠন করতে যাচ্ছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী দল জামায়াত। বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি (বিডিপি) নামে একটি দলের নিবন্ধনের জন্য নির্বাচন কমিশনে আবেদন করা হয়েছে, যার সব নেতাই জামায়াতের। নতুন এ দলের চেয়ারম্যান হিসেবে রয়েছেন ডেমরা থানা জামায়াতের আমির অ্যাডভোকেট আনোয়ারুল ইসলাম চান এবং সাধারণ সম্পাদক হিসেবে রয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখার কর্মপরিষদ সদস্য ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক নেতা মো. কাজী নিজামুল হক। আনোয়ারুল ইসলাম চান নির্বাচন কমিশনে আবেদন জমা দেওয়ার পর সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেছিলেন, জামায়াতের সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই। এখন দেখার বিষয় নির্বাচনে আসতে চাইলে নিবন্ধন বাতিল করা দল নিয়ে নিয়ে কিভাবে নির্বাচনে অংশ নেয় জামায়াত? 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭