ইনসাইড বাংলাদেশ

ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ প্রশ্নে জাতিসংঘ: বাংলাদেশের ভূমিকা?


প্রকাশ: 25/02/2023


Thumbnail

গতকাল শুক্রবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে জাতিসংঘে একটি প্রস্তাব পাস হয়েছে। এতে জাতিসংঘ সনদের সঙ্গে সংগতি রেখে অবিলম্বে ইউক্রেন থেকে রুশ সেনা প্রত্যাহারের আহ্বান জানায় সংস্থাটি। তবে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে গতকাল বৃহস্পতিবারের (২৩ফেব্রুয়ারি) ভোটাভুটিতে নিরব ভূমিকায় অবতীর্ণ হয় বাংলাদেশ। অর্থাৎ বাংলাদেশ পক্ষে বা বিপক্ষে কোনো ভোট দেয়নি। এই ভোটাভোটিতে শুধু বাংলাদেশ নয় চীন, ভারত, পাকিস্তানসহ মোট ৩২টি দেশ এই ভোটদানে বিরত ছিল। এই নিয়ে দেশের কূটনৈতিক মহলে শুরু হয়েছিরল নানা আলোচনা। 

কূটনৈতিক মহল মনে করেছিল, এই ভোট দানে বিরত থাকার কারণে রাশিয়ার সাথে বাংলাদেশের সম্পর্কের একটা টানাপোড়েন হতে পারে। এর আগে আমেরিকার নিষেধাজ্ঞায় থাকা একটি জাহাজ ‘উড়সা মেজর’- কে বাংলাদেশে প্রবেশের অনুমতি দেয়নি বাংলাদেশ। পরে এই কারণে রাশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতকে তলব করেছিল মস্কো। কূটনেতিক মহলে গুঞ্জন ওঠেছিল, এই বুঝি বাংলাদেশের বন্ধুপ্রতীম দেশ রাশিয়ার সাথে বাংলাদেশের সম্পর্কের ফাঁটল হয়ে গেলো। আবার কূটনৈতিকদের মধ্যে কেউ কেউ ভিন্ন মতামতও পোষণ করেছিলেন। তাঁরা বলেছেন, এক্ষেত্রে বাংলাদেশ সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। একদিকে আমেরিকার নিষেধাজ্ঞা, অন্যদিকে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ। কোনোটিই বাংলাদেশের সাথে সম্পৃক্ত নয়। অন্যদিকে বাংলাদেশের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার উপরও আমেরিকার নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। বাংলাদেশের মূল বিষয় হচ্ছে কিভাবে এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেয়া যায়।       

এদিকে, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ বন্ধে জাতিসংঘের প্রস্তাবে বাংলাদেশের ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকায় বাংলাদেশ এবং রাশিয়া সম্পর্কের ব্যাপারে কূটনৈতিকদের নেতিবাচক মন্তব্য করার ফলাফল হাটছে উল্টোরথে। যুদ্ধ বন্ধ করে রাশিয়াকে ইউক্রেন ত্যাগ করার আহ্বান জানিয়ে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে আনীত রেজুলেশনে ভোটদানে বিরত থাকায় বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানিয়েছে মস্কো। শুক্রবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাতে ঢাকাস্থ রাশিয়ান দূতাবাস এক টুইট বার্তায় বাংলাদেশকে এই ধন্যবাদ জানায়। টুইটে বলা হয়, ভোটদানে বিরত থাকার জন্য বাংলাদেশকে ধন্যবাদ।     

ইউএন নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের জরুরি বিশেষ অধিবেশনে প্রস্তাবের পক্ষে ভোট পড়েছে ১৪১টি। ইউক্রেন, পোল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ পশ্চিমা দেশগুলোর প্রায় সবই অবিলম্বে রুশ সেনা প্রত্যাহারের প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছে। আর প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট পড়েছে সাতটি। এই সাতটি দেশ হলো- রাশিয়া, বেলারুশ, উত্তর কোরিয়া, সিরিয়া, মালি ইরিত্রিয়া ও নিকারাগুয়া।

অন্যদিকে সাধারণ পরিষদের প্রস্তাবটিতে ভোটদানে বিরত ছিল ৩২টি দেশ। এই তালিকায় উল্লেখযোগ্য কয়েকটি দেশ হলো- বাংলাদেশ, চীন, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, আলেজিরিয়া, বলিভিয়া, ইরান, কিউবা, ইথিওপিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, সুদান, ভিয়েতনাম, জিম্বাবুয়ে।

সূত্রমতে, গত বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে হামলা শুরু করে রাশিয়া। এর মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর প্রথমবারের মতো সর্বাত্মক যুদ্ধ প্রত্যক্ষ করে ইউরোপবাসী। যুদ্ধের প্রথম বর্ষপূর্তি হয় শুক্রবার (২৪ ফেব্রুয়ারি)। এর আগে যুদ্ধ বন্ধ ও অবিলম্বে রুশ সেনা প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়ে প্রস্তাব পাস করে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ। সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে জার্মানির উত্থাপন করা ১১ প্যারার এই প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ইউক্রেনের ভূখণ্ড থেকে ‘অবিলম্বে, সম্পূর্ণ এবং নিঃশর্তভাবে’ নিজেদের সমস্ত সেনা সরিয়ে নিতে হবে রাশিয়াকে। যত দ্রুত সম্ভব, শত্রুতা বন্ধ করতে হবে।

এসব বিষয়ে কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, রাশিয়া বাংলাদেশের পরীক্ষিত বন্ধু। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার সময় আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক গ্রহণযোগ্যতার ক্ষেত্রে রাশিয়ার ভূমিকা আছে। জাতিসংঘে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে গৃহীত প্রস্তাবে আমাদের পক্ষে রাশিয়ার সমর্থন ছিল। সেটা একবার না দুই দু'বার ছিল। রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের সময়েও বিশ্বব্যাপী যে অর্থনৈতিক মন্দা পরিস্থিতি তখনও কিন্তু গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপে বাংলাদেশ রাশিয়া একযোগে কাজ করে যাচ্ছে। সুতরাং ভোট দেওয়া না দেওয়ার মতো ক্ষুদ্র বিষয় নিয়ে রাশিয়া-বাংলাদেশের সম্পর্কের ফাঁটল হতেই পারে না। তবে এই ক্ষেত্রে বাংলাদেশের নিরব ভূমিকা পালন করা ছিল যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত। বর্তমান বাংলাদেশের মূল বিষয় হলো বাংলাদেশি কর্মকর্তাদের ওপর আমেরিকার যে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, তা প্রত্যাহার করিয়ে নেওয়া। সেজন্য বাংলাদেশকে পশ্চিমা দেশগুলোর আস্থা অর্জন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদিও বাংলাদেশ জাতিসংঘের প্রস্তাবে ভোট দিয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর বলয়ে যেতে পারতো। কিন্তু নিরপেক্ষতাই বাংলাদেশের মূলনীতি। ‘সবার সাথেই বন্ধুত্ব- কারো সাথেই বৈরিতা নয়’- এই নীতিতেই চলছে বাংলাদেশ। এখন দেখার বিষয় জাতিসংঘের প্রস্তাবে ভোট প্রদানে বাংলাদেশের বিরত থাকার ব্যাপারে কী ভাবছে পশ্চিমা দেশুগুলো?


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭