ইনসাইড গ্রাউন্ড

লেগ স্পিনার সংকট কি দূর করবেন হাথুরু?


প্রকাশ: 26/02/2023


Thumbnail

যদি প্রশ্ন করা হয় বিশ্বসেরা লেগ স্পিনার কে? তাহলে সবার আগে উঠে আসবে অস্ট্রেলিয়ার কিংবদন্তি বোলার শেন ওয়ার্নের নাম। লেগ স্পিন দিয়ে শেন ওয়ার্ন নিজেকে এমন উচ্চতায় নিয়ে গেছেন যেখানে যাওয়া অন্য বোলারদের কাছে রীতিমতো স্বপ্ন। পাকিস্তানের শহীদ আফ্রিদি ও ভারতের অনিল কুম্বলে লেগ স্পিনে দিশেহারা করেছিলেন প্রতিপক্ষ ব্যাটারদের। লেগ স্পিনে দীর্ঘদিন প্রতিনিধিত্ব করেছেন নিজ নিজ দেশকে। বর্তমানেও লেগ স্পিনারদের ছড়াছড়ি দেখা যায় ক্রিকেট খেলুড়ে দেশগুলোতে। আফগানিস্তান, শ্রীলঙ্কা, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড এমনকি নেপালের মতো দেশেও রয়েছে লেগ স্পিনার। আধুনিক ক্রিকেটে লেগ স্পিনারদের সবার উপরে আছেন আফগানিস্তানের তারকা ক্রিকেটার রশিদ খান। আছেন অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডাম জাম্পা, ক্রিকেটে পিছিয়ে থাকা দেশ নেপালেও আছে সন্দ্বীপ লামিচানের মতো লেগ স্পিনার। অর্থনৈতিক দুর্দশায় বিপর্যস্ত পাকিস্তান- শ্রীলঙ্কায় ও দেখা যায় বিশ্বমানের লেগ স্পিনারদের। তবে ১৭ কোটি দেশের জনপ্রিয় ইনভেন্টের মধ্যে ক্রিকেট সবার উপরে থাকলেও এ দেশে নেই বিশ্বমানের কোন লেগ স্পিনার। কালেভদ্রে কয়েকজন উঠে আসলেও থাকেন অবহেলিত উপেক্ষিত।

সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তন হয়েছে বাংলাদেশ দলের খেলার ধরণ। ক্রিকেটের দুই ফরম্যাট টেস্ট ও  টি-টোয়েন্টিতে পিছিয়ে থাকলেও ওয়ানডেতে বাংলাদেশ এখন ক্রিকেট বিশ্বে শক্তিশালী দল। বিশ্বচ্যাম্পিয়ন দেশগুলো সমীহ করে বাংলাদেশকে। ঘরের মাঠ এবং বিদেশে সব খানে একদিনের ক্রিকেটে টাইগাররা এখন বেশ শক্তিশালী। বিশ্বমানের ব্যাটসম্যান তামিম-মুশফিকের সাথে আছেন বিশ্ব মানের পেসার তাসকিন আহমেদ ও মুস্তাফিজুর রহমান। আছেন দেশ সেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানও। তবে যেটা নেই সেটা হলো লেগ স্পিনার। সব দেশেই এখন  লেগ স্পিনার দেখা যায়। সেই ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে।জাতীয় দলের আশে-পাশে তো নেই। পাইপ লাইনেও লেগ স্পিনারের সংখ্যা হাতে গুনা। অনেক সময় লেগ স্পিনার নিয়ে কাজ করতে দেখা গিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডকে তবে তাতে আসেনি আশানুরূপ কোন ফল।

গত এক দশকে জুবায়ের হোসেন লিখন,আমিনুল ইসলাম বিপ্লব, মিনহাজুল আফ্রিদি,রিশাদ হোসাইনের মত হাতে গুনা কয়েকজন লেগ স্পিনারের আর্বিভাব হয়েছে বাংলাদেশের ক্রিকেটে। এর মধ্যে জুবায়ের ও বিপ্লব জাতীয় দলে খেললেও এখন নিয়মিত নন। তাই বর্তমানে লেগ স্পিনার শূন্য বাংলাদেশ দল। ২০১৪ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে অভিষেক ঘটে জুবায়ের হোসেন লিখনের। লেগ স্পিনে ইতিহাস লিখতে জাতীয় দলে আসলেও হতে পারেননি নিয়মিত। বাংলাদেশের হয়ে ছয় টেস্ট, তিন ওয়ানডে আর এক টি-টোয়েন্টিতে থেমে আছে লিখনের ক্যারিয়ার। ৬ টেস্টে  লিখন নিয়েছেন ১৬ উইকেট। এর মধ্যে আছে একটি পাঁচ উইকেটও। ২০১৫ সালে দল থেকে বাদ পড়ার পর তার দিকে আর নজর দেয়নি বিসিবি। লিখনের মতোই আমিনুল ইসলাম বিপ্লব জাতীয় দলে এসেছিলেন লেগ স্পিনে বিপ্লব ঘটাতে। তবে বিপ্লব ঘটানোর জন্য পর্যাপ্ত সময় কি পেয়েছেন আমিনুল??? জাতীয় দলের হয়ে সুযোগ পেয়েছেন মাত্র ১০ টি-টোয়েন্টিতে। দেশের হয়ে আর বেশি ম্যাচ খেলার ভাগ্যে জুটেনি লিখন-বিপ্লব দুইজনের। ঘরোয়া লিগের ম্যাচেও হয়ে থাকেন অবহেলার শিকার। দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ফ্র‍্যাঞ্চাইজি ভিত্তিক টুর্নামেন্ট এর সর্বশেষ আসরে এই দুই লেগ স্পিনার ছিলেন না কারোর পছন্দের তালিকায়। ফলে অবিক্রীত থেকে গেছেন দুজনেই।

জুবায়ের হোসেন লিখন কিংবা আমিনুল ইসলাম বিপ্লবরা তৈরি হলেও থাকেন অবহেলিত ক্রিকেটারের তালিকায়। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটতো বটেই ঘরোয়া লিগেও উপেক্ষিত থাকেন উদীয়মান সব লেগ স্পিনাররা। সবশেষ বিপিএলেও  আমিনুল-জুবায়েররা দল না পাওয়া এর বড় এক উদাহরণ। প্রশ্ন হলো যদি পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা কিংবা খেলার সুযোগ নাই পায় তাহলে কি ভাবে উঠে আসবে লেগ স্পিনার। কিংবা তরুণ যারা রশিদ খান হাসারাঙ্গাদের দেখে লেগ স্পিনার হওয়ার স্বপ্ন দেখেন তাদের প্রতিভা কিভাবে বিকাশ করবেন। শুধুই কি জাতীয় দলের নেট প্র‍্যাক্টিসে আটকে থাকবে তাদের প্রতিভা। ২০২২ সালে বিসিবি ঘোষণা দিয়েছিলো ঘরোয়া লিগের প্রতিটা দলে লেগ স্পিনার থাকা বাধ্যতামূলক। তবে সেটি ঘোষণা পর্যন্তই রয়ে গেলো,বাস্তবতা বা আলোর মুখ দেখাতে পারেনি কেউই। বাস্তবতা হলো একজন লেগ স্পিনারকে গড়ে তোলার জন্য যা যা করা উচিৎ তাঁর কিছুই আসলে করা হয়না। ঠিক মত ম্যাচ খেলার সুযোগও তারা পাননা। বাংলাদেশের ক্রিকেটে একজন লেগ স্পিনারের আক্ষেপ মেটাতে হলে বিপ্লব, যুবায়ের, আফ্রিদিদের যত্ন নেয়া প্রয়োজন। ঘষে-মেজে তাদের সেরাটা বের করে আনা প্রয়োজন। একজন আদর্শ লেগ স্পিনারের বল টার্ন করানো, বাউন্স দেওয়া এসব বিষয়ে পরিপক্ক করতে হলে ম্যাচ খেলার সুযোগ দেয়া প্রয়োজন। সুযোগ ছাড়া তো আর কোনো ভাবেই লেগ স্পিনারদের মান যাচাই সম্ভব নয়।

দ্বিতীয় দফায় বাংলাদেশ দলের কোচ হয়ে এসেছেন চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। তার আসার কয়েক দিন আগেই টাইগারদের কোচ রঙ্গনা হেরাথের তত্বাবধানে করা হয়েছিলো লেগ স্পিন হান্ট। ক্রিকেট বোর্ডের অধীনে থাকা লেগ স্পিনারদের ডেকেছেন নেটে। সেখানে পুরোদমে অনুশীলন করেছেন বোলাররা। উদ্দেশ্য একটাই লেগ স্পিনার বের করা। জাতীয় দলের ডিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ সুজন কিংবা বিসিবি বস নাজমুল হাসান পাপন লেগ স্পিনার সংকট কাটাতে বেশ তৎপর। তাদের সাথে একমত দলের প্রধান কোচ হাথুরুও। কারণ দলে একজন লেগ স্পিনার শুধুমাত্র প্রতিপক্ষদের জন্য নয় নিজ দলের ব্যাটারদের অনুশীলনে ও কার্যকরী ভূমিকা রাখে। দেশের অভিজ্ঞ ব্যাটার মুশফিক মাহমুদউল্লাহর স্পিন দুর্বলতা চোখে পড়ার মতো। ওপেনার তামিম ইকবাল ও আছেন এ তালিকায়। একজন বিশ্বমানের লেগ স্পিনার টাইগারদের সাথে যুক্ত হলে তামিম-মুশফিকের দুর্বলতা গুলোও কাটানো যায় সহজেই।

চলতি বছরের শেষে ভারতে অনুষ্ঠিত হবে আইসিসি ওয়ানডে বিশ্বকাপ। এশিয়ার মাটিতে ইংল্যান্ড অস্ট্রেলিয়াকে ভুগতে দেখা যায় স্পিনে। আর আসন্ন ওয়ানডে বিশ্বকাপে ভালো করতে হলে টাইগার দলে প্রয়োজন বিশ্বমানের স্পিনারদের। দলে সাকিব-মিরাজদের মতো অপস্পিনার থাকলেও নেই লেগ স্পিনার। তাই বিশ্বকাপের আগেই লেগ স্পিন সংকট কাটানো উচিত বাংলাদেশের। কারণ বর্তমানে ওয়ানডে বেশ শক্তিশালী দল হওয়ায় আসন্ন বিশ্বকাপের যোগ্য দাবিদার বাংলাদেশ। বিশ্বকাপের দাবিটা আরও জোরালো হত যতি দলে একজন লেগ স্পিনার থাকতো। আশার কথা হচ্ছে ইংল্যান্ড সিরিজ সামনে রেখে জাতীয় দলের প্রস্তুতি ম্যাচে লিগ স্পিনার আমিনুল ও রিশাদ কে খুব গুরুত্ব দিয়েছেন হাথুরু।  ব্যাটে বলে অনুশীলনে দুইজনকেই স্বাধীনতা দিয়েছেন নতুন এই কোচ। তাই আশা করা যায় নতুন কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের অধীনে খুঁজে পাওয়া যাবে এমন প্রতিভা যিনি দূর করবেন লেগ স্পিন সংকট। নতুন প্রতিভা চিনতে ভুল করেন না হাথুরু এটা তিনি অতীতে ও প্রমাণ দিয়ে গেছেন। তবে সংকট কাটাতে কি ধরণের উদ্যোগ নিবেন হাথুরু সেটাই দেখার বিষয়।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭