ইনসাইড গ্রাউন্ড

তামিম-সাকিব দ্বন্দ্বে অশনি সংকেত জাতীয় দলে


প্রকাশ: 26/02/2023


Thumbnail

বাংলাদেশ ক্রিকেটের আকাশে ভর করেছে শঙ্কার কালো মেঘ। বৈশাখের কোন এক বিকেলে হুট করে চারদিক এলোমেলো করে দেয়া বাতাস যেন আছড়ে পড়েছে দেশের ক্রিকেটে। যে ঝড় মুহুর্তেই সব লন্ডভন্ড করে দিতে পারে। কিংবা আসন্ন ঝড়ের চোখরাঙানি দিয়ে মিলিয়ে যায় নিজের খেয়ালে। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের এক সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ জাতীয় দলের মাথার উপর থাকা সেই কালবৈশাখী ঝড়ের ছবি হয়ে উঠেছে সুস্পষ্ট। জাতীয় দলের দুই সিনিয়র ক্রিকেটার তামিম ইকবাল ও সাকিব আল হাসানের দ্বন্দ্বের বিষয়টি এখন দিনের আলোর মতো পরিষ্কার।

ক্রিকেট পাড়ায় সে গুঞ্জন অবশ্য অনেকদিনের। তবে ক্রিকবাজকে দেয়া বোর্ড সভাপতির সাক্ষাৎকারের পর দলের সবচেয়ে বড় দুই তারকার বিবাদের বিষয়টি এখন পাড়ার চায়ের দোকান থেকে নামী-দামি রেস্তোরা কিংবা বৈকালিক বা সান্ধ্যকালীন আড্ডার আলোচনার বিষয়বস্তু। কি নিয়ে দ্বন্দ্ব সাকিব-তামিমের?

সে প্রশ্নের উত্তর দেয়াটা কঠিনই। সাকিব আল হাসান বাংলাদেশ ক্রিকেটের পোষ্টার বয়। তামিম ইকবাল বাংলাদেশের সবচেয়ে সফলতম ওপেনার ও দেশসেরা ব্যাটসম্যান। একজন দলকে নেতৃত্ব দেন এক দিনের ক্রিকেটে। আরেকজন নেতৃত্ব দেন টেস্ট ও টি-টোয়েন্টিতে। দুইজনের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের বয়স দেড় দশকেরও বেশি। ফলে স্বভাবতই প্রশ্ন উঠছে, দলের দুই সিনিয়র ও অভিজ্ঞ ক্রিকেটারের বৈরীতার কারণ এবং দলে এর সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে।

তামিম ও সাকিব- একসময় তাদের বন্ধুত্ব নিয়েই চর্চা হতো মিডিয়া থেকে সর্বত্র। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দুজনে বাংলাদেশ ক্রিকেটকে অনেক স্মরণীয় মুহুর্ত উপহার দিয়েছেন। তবে সময়ের পরিক্রমায় সেই বন্ধুত্ব এখন রূপ নিয়েছে শীতলতায়। একটু একটু করে বেড়েছে তিক্ততার পারদ। দলের প্রয়োজনে মাঠে কিংবা ড্রেসিংরুমে যোগযোগ রক্ষা করতে হলেও, সেটি যে শুধু আনুষ্ঠানিকতার সেটি বলা যায় চোখ বন্ধ করেই। তবে এই তিক্ততা একদিনে তৈরি হয়নি। গত দুই বছরে নানা ঘটনা এবং ইস্যুতে সৃষ্টি হয়েছে বিভাজন। যা দুজনকে দাড় করিয়েছে দুই বিপরীত মেরুতে। নিজেদের মধ্যে ভাবের আদান-প্রদান তো বন্ধ হয়েছেই, টিম হোটেল বা কোন অনুষ্ঠানে এর প্রভাব দৃশ্যমান। কোন আলোচনায় একজন থাকলে, অনুপস্থিত থাকেন অন্যজন। যার সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী জাতীয় দলের বাকি ক্রিকেটাররা। দুই সিনিয়রের মন জুগিয়ে চলতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে বাকিদের। অজানা এক ভয়ে তটস্থ থাকতে থাকতে ক্লান্ত ক্রিকেটাররাও। মাঠের খেলার বাইরেও চাপ কাঁধে নিয়েই পথ চলতে হচ্ছে তাদের।

ক্রিকেট বোর্ড এই বিবাদ নিরসনের চেষ্টা করলেও, খুব একটা লাভ হয়নি। বিসিবির একাধিক পরিচালক ও কর্মকর্তা দুজনের সাথে আলোচনা করে জটিলতার অবসান নিরসনের চেষ্টা করলেও, ব্যর্থ হয়েছেন সকলেই। বাইরে থেকে দুজনের সম্পর্কের এই চিত্র খুব একটা বোঝা না গেলেও, যারা ভেতরের খোঁজখবর রাখেন- তাদের সকলেই জানেন এই গ্রুপিং এর বিষয়টি। এমনকি বিসিবি সভাপতির অনুরোধেও গলেনি সে বরফ। যা দ্বিধা বিভক্তি এনেছে বাংলাদেশ দলের ড্রেসিংরুমে। কেউ ওয়ানডে অধিনায়কের ছায়াতলে থাকেন, কেউ থাকেন টি-টোয়েন্টি ও টেস্ট অধিনায়কের সু-দৃষ্টিতে। ফলে নিরবেই দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে অস্বাস্থ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে ড্রেসিংরুমে।

ক্রিকেটে দুজনের নিবেদন নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই। দুজনের এই দ্বন্দ্ব অনেকগুলো প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। তবে মাঝেমধ্যেই বিভিন্ন সিরিজে থেকে তাদের কোন এক জনের ছুটি নেয়া বা বিশ্রামে যাওয়ার বিষয়টিও কি তাহলে ব্যক্তিগত? আবার দুজনই খেলেন দুজনের নেতৃত্বে। ফলে সমান্তরালে আরেকটি প্রশ্ন চলে আসে পারফরম্যান্স সীমিত রাখার বিষয়টিও। যদি তেমনটি হয়, তাহলে ব্যক্তি সম্পর্কের জেরে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে দল ও দেশের ক্রিকেট। সেই সাথে তরুণ ক্রিকেটারদের সামনেও কি নেতিবাচক দৃষ্টান্ত রেখে যাচ্ছেন না দুই সিনিয়র ক্রিকেটার?

দ্বিতীয় মেয়াদে চান্দিকা হাথুরুসিংহকে বাংলাদেশ দলের হেড কোচের দ্বায়িত্ব দেয়ার সময় একজন কড়া হেডমাষ্টারের কথা বলা হয়েছিলো বোর্ডের পক্ষ থেকে। মাঠ ও মাঠের বাইরে শৃঙ্খলার বিষয়টিকে কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছিলো। তখন সে বিষয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া এবং কিছু প্রশ্ন থাকলেও- এখন দুইয়ে দুইয়ে চার মেলানোটা কঠিন কিছু নয়। তবে কি পূর্ণ সময় দলের সাথে থাকার পাশাপাশি দুই বড় তারকার দ্বন্দ্বের অবসানের জন্যই নিয়ে আসা হয়েছে লঙ্কান এই কোচকে। তবে উদ্দেশ্য যাই হোক না কেন, তামিম-সাকিবের এই মনোমালিন্যের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব দলকে যে ক্ষতিগ্রস্থ করছে- সেটি তো অস্বীকার্য।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭