ইনসাইড পলিটিক্স

‘হেফাজতে ইসলাম’র কী খবর?


প্রকাশ: 26/02/2023


Thumbnail

২০১৩ সালের ৫ মে, বাংলাদেশের রাজেনৈতিক ইতিহাসে একটি স্মরণীয় দিন। দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে বাংলাদেশে কওমি মাদ্রাসা ভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম লংমার্চ এবং ঢাকা অবরোধের মতো কর্মসূচি নিয়ে আলোচনায় ওঠে এসেছিল। কয়েকজন ব্লগারের বিরুদ্ধে ইসলাম ধর্ম নিয়ে কটূক্তি করার অভিযোগসহ ১৩ দফা দাবি তুলে সংগঠনটি এ ধরণের কর্মসূচি করেছিল। ২০১৩ সালের ৫ই মে হেফাজতে ইসলাম- এর ঢাকা অবরোধ এবং শাপলা চত্বরে অবস্থান নেওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ব্যাপক সহিংসতাও হয়েছিল। সেই সূত্রে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে একটি আলোচিত নাম ‘হেফাজতে ইসলাম’। 

এছাড়াও হেফাজতে ইসলামের প্রয়াত আমির আল্লামা শাহ আহমেদ শফী ‘তেতুল তত্ত্ব’র কথা বলে আলোচিত হয়েছিলেন। সেইসঙ্গে কওমি মাদ্রাসা ভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে হাস্যরসের মাধ্যমে একটি পরিচিত নাম হয়ে ওঠেছিল। ২০২০ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা ৪০ মিনিটে পুরান ঢাকার আজগর আলী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আল্লামা শাহ আহমেদ শফী মৃত্যুবরণ করেন ৷ তার মৃত্যুর পর দলটির নতুন আমির কে হবেন?- এই নিয়েও দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন এবং গণমাধ্যমও ছিল আলোচনা মুখর। পরে সংগঠনটির বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে ক্রমশ আলোচনা বাড়লেও হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হককে গ্রেপ্তারের পর থেকে দলটির কর্মকাণ্ড নিয়ে তেমন কোনো আলেচনা চোখে পড়েনি। ২০২১ সালের ১৮ এপ্রিল ( রোববার ) বেলা একটার দিকে মামুনুল হককে মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানিয়েছিলেন ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম।

সাম্প্রতিক সময়ে হেফাজতে ইসলামের একাধিক নেতা-কর্মী জেল-হাজতে থাকলেও আসন্ন দ্বাদশ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সক্রিয় হেয়ে ওঠেছে সংগঠনটি। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ( বৃহস্পতিবার ) বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রসমাজ- এর ঢাকা মহানগরের কর্মী সম্মেলন করেছে হেফাজতে ইসলাম। কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সভাপতি মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেছেন, ‘ইসলাম ও জাতিসত্তা বিরোধী সুদূর প্রসারী কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের অংশ হিসেবেই শিক্ষানীতি সিলেবাস নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। ভবিষ্যত প্রজন্মের নৈতিক ভীত দূর্বল করে দিতে এবং মেরুদণ্ডহীন একটি দূর্বলচিত্ত জাতি তৈরির প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে আধিপত্যবাদী গোষ্ঠীর এদেশিয় এজেন্টেরা এহেন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এই অশুভ শক্তির কালো হাত ভেঙে দিতে ছাত্রসমাজকে প্রস্তুত থাকতে হবে।’

অন্যদিকে সম্প্রতি হেফাজতে ইসলামের দেওয়া এক বিবৃতিতে জাতীয় প্রেসক্লাবে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন হিজাব টুপি ও দাঁড়ি নিয়ে যে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেছেন- তার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানায় হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। সংগঠনের আমির আল্লামা শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী ও মহাসচিব আল্লামা শায়েখ সাজিদুর রহমান এক বিবৃতিতে বলেন, ‘রাশেদ খান মেনন ইসলাম ও কোরআন-সুন্নাহকে নিয়ে কটাক্ষ করে বাংলাদেশের মুসলমানদের অন্তরে আঘাত দিয়েছেন। হিজাব টুপি ও দাঁড়ি নিয়ে কুরুচিপূর্ণ এসব মন্তব্য একজন রাজনীতিবিদের জন্য বেমানান। তাকে এই বক্তব্য অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে।’

তবে হেফাজতে ইসলাম ‘রাজনীতি করবে না’ কিংবা ‘রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে বক্তব্য দিয়ে সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলবে না’- এমন শর্তে বাংলাদেশ সরকারের কাছে ‘মুচলেকা’ দিয়েছে- এমন কথাও শোনা গেছে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে। এই মুচলেকা দেওয়ার কারণেই হেফাজতে ইসলামের তৎপরতা খুব একটা দেখা য়ায়নি বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তাঁরা বলছেন, গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, নেতা-কর্মীদের মুক্তি ও মামলা প্রত্যাহারের শর্তে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে সরকারকে ‘বিব্রত না করার অঙ্গীকার’ করেছে হেফাজতে ইসলামের নেতারা।

অন্যদিকে সম্প্রতি এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সংগঠনটির মহাসচিব আল্লামা শায়েখ সাজিদুর রহমান। চলতি বছরের ২৬ জানুয়ারি ( বৃহস্পতিবার ) তিনি গণমাধ্যমে দেওয়া এক বিবৃতিতে দাবি করেছেন, হেফাজত কোনো ‘মুচলেকা’ দেয়নি। উদ্দেশ্যমূলকভাবে প্রোপাগান্ডা ছড়ানো হচ্ছে। এক্ষেত্রে গ্রেপ্তার নেতা-কর্মীদের মুক্তির বিষয়ে সরকার নমনীয় মনোভাব দেখাচ্ছে। তবে মামুনুল হকের বিষয়ে সরকারের জোর আপত্তি আছে। 

গত ডিসেম্বরে ( ২০২২ সাল ) কওমি মাদ্রাসা ভিত্তিক সংগঠনটির নেতাদের একটি প্রতিনিধি দল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাতের পর- এ সংগঠনটির যেসব নেতাকর্মী বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতার বা আটক রয়েছেন তাদের মুক্তির প্রক্রিয়া শুরুর আশা করছে সংগঠনটির নেতা-কর্মীরা। সেইসঙ্গে হেফাজত নেতা-কর্মীদের প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাতের বিষয়টিকে হেফাজতের প্রতি সরকারের নমনীয় মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ হিসেবেই দেখছে সংগঠনটি। 

বিবৃতিতে শায়েখ সাজিদুর রহমান বলেন, ‘কয়েকটি গণমাধ্যমে হেফাজতকে জড়িয়ে কিছু সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ সরকারের কাছে মুচলেকা দিয়েছে। একই সঙ্গে হেফাজত রাজনীতি না করার বিষয়ে সরকারকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে। শাইখুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফী রহ. হেফাজতকে প্রতিষ্ঠাই করেছিলেন অরাজনৈতিক ও ধর্মীয় আধ্যাত্মিক সংগঠন হিসেবে। হেফাজত কোনোকালেই নিজেদের রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট করেনি, আগামীতেও করবে না। যেহেতু হেফাজত অরাজনৈতিক সংগঠন এবং অতীতেও রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল না। তাই নতুন করে রাজনীতির সঙ্গে জড়িত না হওয়ার বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দেয়ার প্রশ্নই অবান্তর।’

প্রতিষ্ঠার পর থেকেই হেফাজতে ইসলামকে নিয়ে ষড়যন্ত্র হচ্ছে দাবি করে শায়েখ সাজিদুর রহমান বলেন, ‘সেই ষড়যন্ত্র এখনো বন্ধ হয়নি। কেউ কেউ নিজেদের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য হেফাজতকে নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। কিছু গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে উদ্দেশ্যমূলকভাবে হেফাজতকে নিয়ে প্রোপাগান্ডা ছড়ানো হচ্ছে।’

উল্লেখ্য, গত বছরের ৩ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে রয়েল রিসোর্টের একটি কক্ষে কথিত স্ত্রীসহ মামুনুল হককে অবরুদ্ধ করে স্থানীয় ছাত্রলীগ-যুবলীগ। পুলিশ গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার সময় হেফাজতে ইসলামের কর্মীরা এবং স্থানীয় মাদ্রাসার ছাত্ররা রিসোর্টে হামলা চালিয়ে তাঁদেরকে ছিনিয়ে নেয়। ঘটনার ১৫ দিন পর গত বছরের ১৮ এপ্রিল মামুনুল হককে মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসা থেকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর তেজগাঁও বিভাগের পুলিশ। রয়েল রিসোর্ট- কাণ্ডের ২৭ দিন পর ৩০ এপ্রিল সোনারগাঁ থানায় হাজির হয়ে কথিত স্ত্রী মামুনুল হকের বিরুদ্ধে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণের অভিযোগে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা করেন। ধর্ষণের অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পেয়ে ১০ সেপ্টেম্বর মামুনুল হকের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। এরপর ৩ নভেম্বর  মামুনুল হকের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালে ধর্ষণের মামলায় অভিযোগ গঠন করা হয়। ওই মামলায় বর্তমানে কারাগারে আছেন হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭