ইনসাইড থট

‘নতুন প্রজন্মের মুক্তিযোদ্ধাদের আমি আগাম সালাম জানাচ্ছি’


প্রকাশ: 27/02/2023


Thumbnail

মার্চ মাস শুরু হতে যাচ্ছে। মার্চ মাস আমাদের স্বাধীনতার মাস। এই মার্চ মাসের ১৭ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন সর্বযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৭ই মার্চ এবং ২৬শে মার্চ, এই দুটি তারিখের জন্যই মার্চ মাস অত্যান্ত ঐতিহাসিক গুরুত্ব বহন করে।

১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ সর্বযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন। একজন ক্ষুদ্র মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সেই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করার সৌভাগ্য হয়েছিল আমার। মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন এমন অনেকে এখনও জীবিত আছেন। তবে আমাদের নতুন প্রজন্ম, তারা শুধু মুক্তিযুদ্ধের গল্পই শুনেছে। তারা চাইলেও এখন আর মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে পারবে না। তরুণ তরুণীদের অনেককেই আমি এ নিয়ে দুঃখপ্রকাশ করতে দেখেছি।

দেশকে স্বাধীন করতে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় যেমন অনেক সাহসী মুক্তিযোদ্ধা তৈরি হয়েছে, তেমনি মুক্তিযুদ্ধকে শেষ করে দেয়ার জন্য বাঙালি জাতির চিন্তা চেতনাকে শেষ করে দেয়ার জন্য রাজাকার আলবদরও তৈরি হয়েছে। পাকিস্তানিরা আমাদের দেশ দখল করে রেখেছিল সেটা আলাদা জিনিস। কিন্তু তারচেয়ে বেশি গুরুত্ব বহন করে মুক্তিযোদ্ধারা এবং এই রাজাকার আলবদররা। একজন মুক্তিযোদ্ধাকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে টিকে থাকতে হলে তাকে প্রতিনিয়ত মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বুকে ধারণ করতে হয় এবং মুক্তিযুদ্ধের চর্চা করতে হয়। কিন্তু একজন রাজাকার বা আলবদর একবার রাজাকার বা আলবদর হলে মৃত্যু পর্জন্ত তার বা তার বংশধরদের আর কোন কিছু করতে হয় না।

আমাদের এবারের মুক্তিযুদ্ধের মাসটি একটি কারণে আরও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই সময় দেখা যাচ্ছে যে, এই রাজাকার আলবদরের সন্তানেরা যেমন সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরির সন্তানেরা, গোলাম আযমের সন্তানেরা, এরকম যারা যারা মুক্তিযুদ্ধের সন্তানেরা আছে তারা অধিকাংশই দেশের বাইরে যেয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বুলন্ঠিত করার জন্য, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিকৃত করার জন্য তাদের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে এবং এই প্রচেষ্টা খুব সংগঠিতভাবেই চলছে। তারা বিদেশে টিভি চ্যানেল খুলেছে, ইউটিউব চ্যানেল খুলেছে। এখন যে ডিজিটাল যুগ, এই ডিজিটাল যুগের সম্পূর্ণ সুবিধা আমরা মুক্তিযোদ্ধারা কিংবা আমাদের সন্তানেরাও অতটা কাজে লাগাচ্ছে না, যতটা কাজে লাগাচ্ছে এই রাজাকার আলবদরের সন্তানেরা। এ কারণেই জীবন সায়ান্যে এসে একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমি নতুন প্রজন্মকে আহ্বান জানাবো মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধরে রাখার জন্য, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আসল মূল্যবোধকে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য, সমস্ত দেশে এবং বিদেশে সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করতে তাদেরকে অনেক উৎসাহ নিয়ে ডিজিটাল সুযোগ সুবিধার পূর্ণ ব্যবহার করতে। প্রয়োজনে দেশের ভেতর স্টাডি সার্কেল তৈরি করতে হবে। যাতে তারা মুক্তিযুদ্ধ কেন হয়েছিল কখন হয়েছিল সে সম্পর্কে জানতে পারে। এখনও অনেক রাজাকার আলবদরের সন্তানেরা বলে ওটাতো গণ্ডগোলের বছর। ১৯৭১ বছরটিকে তারা ভুলিয়ে দিতে চায়।

সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে এখন খুব সহজেই নতুন প্রজন্মকে উদ্বুদ্ধ করা যায়, সহজেই অনুপ্রাণিত করা যায়। এই জায়গাটায় আমাদের নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের ব্যাপারে আরও সজাগ হতে হবে। যেমন বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বলতে হবে, বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চ নিয়ে বলতে হবে, বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনের গুরুত্ব বোঝাতে হবে, পুরো মার্চ মাসে যে সকল ঘটনা সম্পর্কে তাদের জানাতে হবে। শুধুমাত্র বঙ্গবন্ধুকে কেন্দ্র করেই যদি ইতিহাস সোশ্যাল মিডিয়াতে প্রকাশ পায় তাহলেও নতুন প্রজন্ম উদ্বুদ্ধ হবে। মুক্তিযুদ্ধের সময় বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ বাজিয়েও মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। সেখানে বঙ্গবন্ধুই ছিলেন কেন্দ্রীয় চরিত্র এবং একমাত্র চরিত্র যাকে ঘিরে সমস্ত মুক্তিযুদ্ধটি পরিচালিত হয়েছে এবং যার ফলে আমরা একটি স্বাধীন দেশ পেয়েছি। এই কারণেই মার্চ মাসটি আমাদের কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে নতুন প্রজন্মকে আমাদের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। তারা মুক্তিযুদ্ধে আংশগ্রহন করতে পারেনি ঠিকই তবে তাদের কাজের মাধ্যমে তারা হয়ে উঠবে নতুন প্রজন্মের মুক্তিযোদ্ধা। আমি এই নতুন প্রজন্মের মুক্তিযোদ্ধাদের আগাম সালাম জানাচ্ছি। তাদের কাজের মাধ্যমেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস প্রজন্মের পর প্রজন্ম টিকে থাকবে এবং আমরা আশাবাদী আমাদের নতুন প্রজন্ম কিছুতেই বিফল হতে পারে না।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭