ইনসাইড পলিটিক্স

সক্রিয় হচ্ছে হেফাজতে ইসলাম


প্রকাশ: 27/02/2023


Thumbnail

নিজেদেরকে একটি ইসলামী সংগঠন হিসেবে পরিচয় দেয়া এবং সেইসঙ্গে রাজনৈতিক দল হিসেবে সংগঠনটিকে পরিচয় না দিলেও ২০১৩ সালের ৫ই মে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে যথেষ্ট প্রভাব ফেলেছিল হেফাজতে ইসলাম। এ ছাড়াও বিভিন্ন সময়ে দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক ইস্যুকে কেন্দ্র করে হেফাজতের বিভিন্ন তৎপরতা বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিভিন্নভাবে প্রভাব ফেলেছে। আসন্ন দ্বাদশ নির্বাচনকে সামনে রেখে আবার সক্রিয় হচ্ছে হেফাজতে ইসলাম। তবে হেফাজতে ইসলাম ক্ষমতাসীন সরকারি দল বা সরকার বিরোধী জোট- কোন পথে হাটছে এই নিয়ে শুরু হয়েছে নানা আলোচনা। একাধিক সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, হেফাজতে ইসলাম ‘রাজনীতি করবে না’ কিংবা ‘রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে বক্তব্য দিয়ে সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলবে না’- এমন শর্তে বাংলাদেশ সরকারের কাছে ‘মুচলেকা’ দিয়ে জেল-হাজতে থাকা সংগঠনের নেতা-কর্মীদের জামিন চেয়েছিল। যা সরকার অধ্যাবধি আমলে নেয়নি। যে কারণেই দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে ফের সক্রিয় হচ্ছে হেফাজতে ইসলাম।    

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সমসাময়িক সময়ে হেফাজতে ইসলামের অনেক নেতা-কর্মীই জেলে রয়েছেন। সেই নেতা-কর্মীদের মুক্তির দাবিতে হেফাজতে ইসলাম সক্রিয় হতে পারে। তবে বিভিন্ন সময়ে হেফাজতে ইসলামকে সরকার বিরোধী তৎপরতা করতেই দেখা গেছে। দ্বাদশ নির্বাচনকে সামনে রেখে এ সময়ে হেফাজত মাঠে নামলে অবশ্যই সরকার বিরোধীদের পথেই হাটবে। তবে নেতা-কর্মীদের মুক্তি ও মামলা প্রত্যাহারের শর্তে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে সরকারকে ‘বিব্রত না করা’র যে অঙ্গীকার করেছিল, সেই অঙ্গীকার হেফাজতে ইসলাম ভাঙতে পারে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।   

সূত্র জানায়, সাম্প্রতিক সময়ে হেফাজতে ইসলামের একাধিক নেতা-কর্মী কারাগারে থাকলেও আসন্ন দ্বাদশ নির্বাচনকে ঘিরে সক্রিয় হয়ে ওঠেছে সংগঠনটি। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি (বৃহস্পতিবার) বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রসমাজ- এর ঢাকা মহানগরের কর্মী সম্মেলন করেছে হেফাজতে ইসলাম। কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সভাপতি মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেছেন, ‘ইসলাম ও জাতিসত্তা বিরোধী সুদূর প্রসারী কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের অংশ হিসেবেই শিক্ষানীতি সিলেবাস নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। ভবিষ্যত প্রজন্মের নৈতিক ভীত দূর্বল করে দিতে এবং মেরুদণ্ডহীন একটি দূর্বলচিত্ত জাতি তৈরির প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে আধিপত্যবাদী গোষ্ঠীর এদেশিয় এজেন্টেরা এহেন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এই অশুভ শক্তির কালো হাত ভেঙে দিতে ছাত্রসমাজকে প্রস্তুত থাকতে হবে।’

এদিকে সম্প্রতি সংগঠনটির মহাসচিব আল্লামা শায়েখ সাজিদুর রহমান গণমাধ্যমে এক বিবৃতি দিয়েছেন। চলতি বছরের ২৬ জানুয়ারি ( বৃহস্পতিবার ) গণমাধ্যমে দেওয়া সেই বিবৃতিতে দাবি করেছেন, হেফাজত কোনো ‘মুচলেকা’ দেয়নি। এক্ষেত্রে গ্রেপ্তার নেতা-কর্মীদের মুক্তির বিষয়ে সরকার নমনীয় মনোভাব দেখাচ্ছে। তবে মামুনুল হকের বিষয়ে সরকারের জোর আপত্তি আছে। 

বিবৃতিতে শায়েখ সাজিদুর রহমান বলেন, ‘কয়েকটি গণমাধ্যমে হেফাজতকে জড়িয়ে কিছু সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ সরকারের কাছে মুচলেকা দিয়েছে। একই সঙ্গে হেফাজত রাজনীতি না করার বিষয়ে সরকারকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে। শাইখুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফী রহ. হেফাজতকে প্রতিষ্ঠাই করেছিলেন অরাজনৈতিক ও ধর্মীয় আধ্যাত্মিক সংগঠন হিসেবে। হেফাজত কোনোকালেই নিজেদের রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট করেনি, আগামীতেও করবে না। যেহেতু হেফাজত অরাজনৈতিক সংগঠন এবং অতীতেও রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল না। তাই নতুন করে রাজনীতির সঙ্গে জড়িত না হওয়ার বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দেয়ার প্রশ্নই অবান্তর।’


অন্যদিকে সম্প্রতি হেফাজতে ইসলামের দেওয়া অন্য এক বিবৃতিতে জাতীয় প্রেসক্লাবে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন হিজাব টুপি ও দাঁড়ি নিয়ে যে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেছেন- তার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানায় হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। সংগঠনের আমির আল্লামা শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী ও মহাসচিব আল্লামা শায়েখ সাজিদুর রহমান এক বিবৃতিতে বলেন, ‘রাশেদ খান মেনন ইসলাম ও কোরআন-সুন্নাহকে নিয়ে কটাক্ষ করে বাংলাদেশের মুসলমানদের অন্তরে আঘাত দিয়েছেন। হিজাব টুপি ও দাঁড়ি নিয়ে কুরুচিপূর্ণ এসব মন্তব্য একজন রাজনীতিবিদের জন্য বেমানান। তাকে এই বক্তব্য অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে।’

এছাড়াও গত ২৬ ফেব্রুয়ারি (রোববার) রাজধানীর খিলগাঁওয়ে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ- এর ঢাকা মহানগর কমিটির এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে ঈদের আগে কারাবন্দি আলেমদের মুক্ত করে দেওয়ার দাবি জানিয়েছে হেফাজতে ইসলামের নেতারা। বৈঠকে সংগঠনটির মহাসচিব সাজিদুর রহমান বলেন, দীর্ঘদিন যাবৎ কারাগারে বন্দি অবস্থায় দুর্বিষহ জীবন কাটাচ্ছেন আলেমরা। আগামী ঈদুল ফিতরের আগে বন্দি আলেমদের মুক্তি চাই। 

বৈঠকে হেফাজত মহাসচিব আরও বলেন, পাঠ্যবইয়ের সমস্যাগুলো নিয়ে আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলাম। সাক্ষাতে তিনি আমাদের আশ্বস্ত করেছিলেন সমস্যাগুলো সমাধান করা হবে। হেফাজতসহ দেশের ইসলামপন্থিদের দাবিকে গুরুত্ব দিয়ে পাঠ্যপুস্তক থেকে বিতর্কিত দুটি বই প্রত্যাহার করে নেওয়ায় প্রধানমন্ত্রীকে আমরা ধন্যবাদ জানাই। একইসঙ্গে পাঠ্যপুস্তকগুলোতে আরও যেসব বিতর্কিত বিষয় রয়েছে, তাও দ্রুত প্রত্যাহার করে নেওয়ার জোর দাবি জানাচ্ছি।

এ সব বিষয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বক্তৃতা, বিবৃতি দেওয়া রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর কাজ। একটি ইসলামী সংগঠন রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে বক্তৃতা, বিবৃতি দিতে পারে না। এ ক্ষেত্রে হেফাজতে ইসলাম রাজনৈতিক সংগঠন না হলেও পরোক্ষভাবে রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করছে। মূলত কারাবন্দি নেতাদের মুক্তির দাবিই হেফাজতকে রাজনৈতিক অঙ্গনে টেনে আনছে। এছাড়া পাঠ্যবই নিয়ে হেফাজতে ইসলামসহ অনেক ইসলামী সংগঠনই আপত্তি তুলেছিল। সেই ভুল সংশোধনে ইতিমধ্যে উদ্যাগ নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কাজে কাজেই এই ইস্যুটি নিয়ে হেফাজতসহ ইসলামী সংগঠনগুলোর কোনো ধরনের তৎপরতা থাকার কথা নয়। তবে হেফাজতে ইসলাম সরকারের পক্ষে অবস্থান নিচ্ছে না বিপক্ষে অবস্থান নিচ্ছে- এটা সম্পূর্ণই সময়ের ব্যাপার। এখন সে সময়ের জন্য অপেক্ষা করতে হবে এবং অপেক্ষার প্রহর শেষে সময়ই বলে দিবে- কোন পথে হাটছে হেফাজত?


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭