ইনসাইড আর্টিকেল

মাতৃভাষার মর্যাদা সমুন্নত থাকুক যুগে যুগে


প্রকাশ: 28/02/2023


Thumbnail

ভাষার মাস ফেব্রুয়ারির শেষ দিন আজ। প্রতিবছর বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে শেষ হয় এ মাসটি; কিন্তু হিসেব করে দেখা হয়নি কোনো দিন, কী পেলাম আর কী হারালাম! কেবল ভাষার মাসেই আমরা স্মরণ করি মহান ভাষা শহীদদের। ভাষার মাস এলেই কেবল আমাদের মনে শোক উদ্বেলিত হয়। কিন্তু এই ভাষার মাস চলে গেলেই আমরা ভুলে যাই মাতৃভাষার মর্যাদা, ভুলে যাই মহান ভাষা শহীদদের। আজ ২৮ ফেব্রুয়ারি, ভাষার মাসের শেষ দিন। সেইসঙ্গে আজই শেষ হচ্ছে অমর একুশে বইমেলা, শেষ হচ্ছে অমর একুশে বইমেলার মহামেলার দিন। তাই বাঙালি জাতির কাছে এই অকুতি, শুধু ভাষার মাসেই নয় প্রতিটি দিবসেই সমুন্নত থাকুক মাতৃভাষার মর্যাদা। 

মাতৃভাষা বাংলা মায়ের গর্ব, বাঙালি জাতির অহঙ্কার। শহীদের স্মরণে এ মাসেই অনুষ্ঠিত হয় একুশের বইমেলা। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের হাজার হাজার তরুণ-তরুণী, শিশু-কিশোর, যুবক-বৃদ্ধ, নারী-পুরুষের মিলনমেলা একুশের বইমেলা। লেখক ও পাঠকের প্রয়াস এবং এক বিন্দু পরশ নিতে বছরে একবার সমবেত হন তারা একুশের এ বইমেলায়। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের ফসল একুশের বইমেলা সাধারণ কোনো মেলা নয়; এ মেলা ভাষা শহীদদের আত্মত্যাগ ও সংগ্রামকে সমর্থন করার মহামিলন, মহাআন্দোলন। ভাষা শহীদদের স্মৃতিচারণ এবং অন্যায়কে পদদলিত করে সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করতে বাঙালি উদ্ভাসিত হয় একুশের এ মেলায়। যার ঐতিহ্য সুদূর প্রসারী, যার গভীরতা বহুদূর ব্যাপ্ত।

প্রতি বছর আমাদের মাঝে এসে উপস্থিত হয় ভাষার মাস ফেব্রুয়ারি। আবেগে আপ্লুত হয়ে আমরা অনেক কিছু বলি, অনেক কিছু করি; কিন্তু তারপরও অব্যক্ত কিছু কথা অগোচরে রয়ে যায়। বঞ্চিতের সে কথা কে শুনবে? একুশের রক্তস্নাত পথ বেয়ে ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলা একাডেমি, যার উপহার একুশের বইমেলা। হাজারো ভাষা প্রেমিকের আগমন ঘটে একুশের এ মিলন মেলায়, আগমন ঘটে বহু লেখক-লেখিকারও। সব মিলিয়ে একুশের এই বইমেলা পরিণত হয় বিজয়ের আনন্দ-মহামেলায়। এ বছরের বইমেলা বাংলা একাডেমি ছাড়িয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেও সম্প্রসারিত হয়েছিল। সংবাদটি নিশ্চয়ই আনন্দের। তবে যাদের নিয়ে এ আয়োজন তাদের দিকটাও আমাদের বিবেচনায় রাখা প্রয়োজন। আজ অমর একুশে বইমেলার মহান এই মিলন মেলার শেষ দিন।    

বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে শহীদদের সঠিক পরিসংখ্যান আমাদের জানা নেই। তবে রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত পাঁচ ভাষা শহীদ রফিক, জব্বার, বরকত, শফিউর ও সালামের নামই শুধু আমরা জানি। আমরা বাংলা ভাষা ও ভাষা শহীদদের নিয়ে হৃদয়-নিংড়ানো অনেক দরদের কথা বলে থাকি এ মাসেই। কিন্তু ভাষার মাস চলে গেলেই ভুলে যাই আমাদের মহান ভাষা শহীদদের। মাতৃভাষাকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ আজ বিশ্বের দরবারে পরিচিত, বিরল সম্মানে ভূষিত একটি দেশ। কিন্তু যাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে বিরল এ সম্মান অর্জিত হলো; তাদের যথাযথ মূল্যায়ন করা প্রয়োজন। সর্বস্তরে বাংলা ভাষা ব্যবহারের মাধ্যমে প্রতিটি দিবসে স্মরণ করা উচিৎ মহান ভাষা শহীদদের। 

ফেব্রুয়ারিকে যখন আমরা ভাষার মাস বলছি, তখন অবশ্যই এটা ভাষা নিয়ে আলাপ-আলোচনা করার প্রাসঙ্গিক সময়। এই মাসে আমরা মোটা দাগে কতগুলো জিজ্ঞাসার মুখোমুখি হই। যেমন, যে বাংলাকে আমরা রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছি, সেই ভাষার এখন কী অবস্থা? মর্যাদার দিক থেকে সর্বস্তরে বাংলা ভাষা চালু করার যে জাতীয় অঙ্গীকারটি প্রায়ই উচ্চারিত হয়, তা কতটা বাস্তবায়িত হয়েছে? মাতৃভাষা বাংলার প্রতি আমাদের রাষ্ট্র ও সমাজের, বিশেষত নবীন প্রজন্মের দৃষ্টিভঙ্গি কী? শিক্ষার্থী সমাজ, শিক্ষিত কর্মজীবী সমাজ, অফিস–আদালত, শিল্প–ব্যবসা, সেবা প্রতিষ্ঠান, সামাজিক–সাংস্কৃতিক সংগঠন, সামগ্রিকভাবে নাগরিক সমাজ বাংলা ভাষাকে কীভাবে মূল্যায়ন করে?

এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে আমাদের আশাভঙ্গের দুঃখ বোধ হয়। আমরা বলি, মাতৃভাষা বাংলা আমাদের অনাদরের শিকার হয়েছে এবং হচ্ছে। কেউ কেউ বলেন, মাতৃভাষার প্রতি আমাদের আচরণ এখন বিমাতাসুলভ। এটা করা হয় ইংরেজি ভাষার প্রতি আমাদের আগ্রহের সঙ্গে বাংলার তুলনা করতে গিয়ে। শিক্ষিত তরুণ সমাজের কাছে আজ বাংলার গুরুত্ব নেই, কারণ বাংলা ভাষার জ্ঞান ও দক্ষতা তাদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করে না। সেটা করে ইংরেজি ভাষা। 

আন্তর্জাতিক যোগাযোগ ও ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ইংরেজির প্রাধান্য শুধু বাংলাদেশের বাস্তবতা নয়, এটি একটি বৈশ্বিক বাস্তবতা। কিন্তু তার ফলে ফরাসি, জার্মান, রুশ, চীনা, জাপানি ইত্যাদি ভাষাভাষী মানুষের কাছে নিজ নিজ মাতৃভাষার গুরুত্ব, মর্যাদা, সমাদর কিছুই কমছে না। তাহলে বাঙালির কাছে মাতৃভাষা বাংলার মর্যাদা ও সমাদর কেন কমেছে  এবং আরও কমে যাচ্ছে? ভাষার মাসের শেষ দিবসে জাতির কাছে প্রশ্ন রেখে গেলাম, সেইসঙ্গে মাতৃভাষা বাংলার মর্যাদা সমুন্নত রাখার দাবি জানিয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে গেলাম। মহান ভাষা শহীদ, আমর হোক। মাতৃভাষার মর্যাদা সমুন্নত থাকুক যুগে যুগে।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭