নিয়মিত বাঁধাকপি খেলে যত উপকার

বাঁধাকপি দিয়ে নানা রকম মুখরোচক খাবার তৈরি করা যায়। বাঁধাকপি নিয়মিত খাওয়া শুরু করলে অনেক উপকার পাওয়া যায়। বিশেষ করে আবহাওয়া পরিবর্তনের সময় শরীরকে চাঙ্গা রাখতে এই সবজি ঘরোয়া ওষুধ হিসেবে কাজ করে। এতে প্রচুর ভিটামিন এবং মিনারেল রয়েছে । এছাড়াও বাঁধাকপিতে ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, সালফার, ফসফরাস এবং ফলেটের মতো উপকারি উপাদানও রয়েছে,যা আমাদের শরীরের গঠনে নানাভাবে সাহায্য করে থাকে। এখন প্রশ্ন হল কীভাবে খেলে সবজিটি থেকে সর্বোচ্চ উপকার পাওয়া যেতে পারে? বিশেষজ্ঞদের মতে রান্না করার সময় অল্প হলেও এই সবজির উপকারি উপাদান অনেকাংশেই নষ্ট হয়ে যায়। এর কারণে রান্না করে নয়,বরং বাঁধাকোপির রস বানিয়ে তা খাওয়া উচিত। আর যদি একান্ত রস বানাতে না পারেন,তাহলে সেদ্ধ করে খান। এভাবে খেকে সবজির সঠিক গুনাগুন পাওয়া যাবে।

নিয়মিত বাঁধাকপি খেলে আরো যেসব উপকার পাওয়া যায় তা হলোঃ

১. দেহের প্রদাহ কমায়: বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত বাঁধাকপি খাওয়া শুরু করলে, দেহে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদানের মাত্রা বাড়তে শুরু করে। ফলে স্বাভাবিকভাবে দেহের প্রদাহ কমতে শুরু করে। সেই সঙ্গে দেহের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোর বিভিন্ন ধরনের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কাও কমে যায়।

২. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা: শরীরকে নানাবিধ জীবাণু এবং ফরেন বডির হাত থেকে বাঁচাতে আমাদের শরীরের বেশি কিছু কোষ রাত দিন কাজ করে । কোষগুলো যখন কাজ করতে করতে দুর্বল হয়ে পরে,তখনই শরীরে নানা রোগ বাসা বাধে। বাঁধাকোপির রস খেলে আমাদের দেহের এই কোষ গুলোকে চাঙ্গা করে। । কারণ এই প্রকৃতিক উপদানাটি ইমিউন সিস্টেমকে এত মাত্রায় শক্তিশালী করে তোলে যে ছোট-বড় কোনও রোগই দেহে বাসা বাধতে পারে না।

৩. ত্বকের সৌন্দর্য বাড়ায়: সারা দিন দূষণ এবং খাবারের মাধ্যমে নানাবিধ ক্ষতিকর টক্সিক বা বিষ আমাদের শরীরে প্রবেশ করতে থাকে। এই বিষাক্ত উপাদানেরা রক্তে মিশে যাওয়ার পর যেমন শরীরের প্রতিটি কোণায় পৌঁছে যায়।এর প্রভাব ত্বকের উপরে পড়তে থাকে । ধীরে ধীরে ত্বকের সৌন্দর্য কমে যায়। সেই সঙ্গে নানাবিধ ত্বকের রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও বাড়ে। এমন অবস্থায় নিয়মিত যদি বাঁধাকোপি খাওয়া যায়, তাহলে দারুন উপকার পাওয়া যায়। কারণ এই সবজিটিতে থাকা সালফার এবং ফসফরাস ত্বকের ভিতরে জমতে থাকা বর্জ্য পদার্থদের বের করে দেয়। সেই সঙ্গে ত্বকের পুষ্টির ঘাটতিও দূর করে। ফলে ধীরে ধীরে ত্বক উজ্জ্বল এবং প্রাণচ্ছ্বল হয়ে ওঠে।

৪. শরীরে পুষ্টির ঘাটতি দূর হয়: বাঁধাকোপিতে প্রচুর মাত্রায় ভিটামিন এবং অন্যান্য খনিজ উপাদান থাকে, যেমন- ভিটামিন সি, এ,বি১,বি২,বি৬,ই এবং কে। এই ভিটামিন উপাদানগুলো শরীরে নানা উপকার করে। সেই সঙ্গে নানা রোগের আশঙ্কাও কমায়। প্রসঙ্গত, বাঁধকোপিতে ভিটামিন সি রয়েছে যা দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

৫. দৃষ্টিশক্তির উন্নতি ঘটায়: বাঁধাকোপিতে বিটা-ক্যারোটিন নামক উপাদান রয়েছে। যা চোখের রেটিনার ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। এর ফলে ম্যাকুলার ডিজেনারেশনের আশঙ্কা হ্রাস পায়। সেই সঙ্গে চোখের ছানির সমস্য়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও যায় কমে।

৬. লিভার ফাংশনের উন্নতি ঘটে: শরীরকে চাঙ্গা রাখতে যে যে অঙ্গগুলির কোনও বিকল্প হয় না,লিভার তাদের অন্যতম। সেই কারণেই তো চিকিৎসকেরা লিভারের প্রতি একটু বেশি মাত্রায় খেয়াল রাখার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এর জন্যই বাঁধাকোপি খাওয়া জরুরি। কারণ এই সবজিটি শরীরে ইনডোল-৩ কার্বোনাইল নামে একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্টর মাত্রা বাড়তে শুরু করে ,যা শরীরকে বিষ মুক্ত করার পাশাপাশি লিভার ফাংশনের উন্নতিতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

৭. শরীরকে বিষ মুক্ত করে: বাঁধাকোপির রসে উপস্থিত ভিটামিন কে এবং সি আমাদের শরীরের অন্দরে উপস্থিত ক্ষতিকর টক্সিক উপাদানদের বের করে দেয়। ফলে একদিকে যেমন কোষেদের কোনও ধরনের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা হ্রাস পায়, তেমনি ক্যান্সারের মতো রোগ হওয়ার সম্ভাবনাও কমে। হার্টকে দীর্ঘদিন কর্মক্ষম রাখতেও এই দুই ভিটামিন দুটি বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

৮. ওজন কমাতে সাহায্য করে: অতিরিক্ত ওজন আজ অভিশাপের সমান। কারণটা খুব সহজ! মাত্রাতিরিক্ত ওজন মানেই তার লেজুর হবে ডায়াবেটিস, কোলেস্টেরল এবং হার্টের রোগের মতো মারণ ব্যাধি। তাই ওজন যদি বাড়তে শুরু করে, তাহলে বাঁধাকোপির রস খাওয়া শুরু করলে দ্রুত ওজন কমে যাবে। নিয়মিত এই সবজিটি খেলে ইনটেস্টটাইনের কর্মক্ষমতা বাড়তে শুরু করে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটে। আর এমনটা হলে মেদ বৃদ্ধির আশঙ্কা একেবারে কমে যায়। সেই সঙ্গে নানাবিধ পেটের রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও কমে।

তাই আমাদের শরীরকে সুস্থ ও সবল রাখতে হলে নিয়মিত বাঁধাকপি খেতে হবে।

সূত্র: বাংলাবোল্ডস্কাই
বাংলা ইনসাইডার/এএফ /জেডএ