ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

প্রেতাত্মারা প্রিয়জনের সঙ্গে থাকতে চায় কয়দিন?

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 19/02/2018


Thumbnail

হিন্দুদের পারলৌকিক ক্রিয়া সাধারণত সম্পন্ন হয় ১০ বা ১৩ দিনে। ইসলাম ধর্মমতে ৪০ দিন পরে সম্পন্ন হয় পারলৌকিক কাজ। খ্রিস্ট ধর্ম অনুযায়ী কবরস্থ হওয়ার প্রাক্কালে সম্পন্ন হয় সমবেত প্রার্থনা। সেখানে শোক পালনের সময়কালটি একান্ত ভাবেই ব্যক্তিগত। প্রায় প্রতিটি ধর্মেই রয়েছে মৃতের আত্মার উদ্দেশে স্মরণ-ভোজ বা ফিউনেরাল ফিস্ট। এটা মৃতকে অসম্মান করার জন্য নয়, তাঁর আত্মাকে তৃপ্ত করার প্রতীক হিসেবেই আয়োজিত হয়।

কেন এই শোকপালন? জীবিত নিকটজন শোক পালন করলেই কি আত্মা মায়ামুক্ত হয়? এর কোনো উত্তর আমাদের কাছে নেই। তবু অনুমান করা যায়, শোক পালনের এই সময়কালটি নির্দিষ্ট হয় আত্মাকে এটুকু বোঝানোর উদ্দেশ্যে যে, সে বিগত। পরলোক বিশেষজ্ঞরা জানান, সেই বিদেহী আত্মাই তার নিকটজনের কাছে ঘোরাফেরা করে, যারা নিজের মৃত্যুকে টের পায়নি। বিশ্বাস করতে পারেনি, সে ইহলোক ত্যাগ করেছে। পরলোক বিশেষজ্ঞরা বিবিধ অ্যাস্ট্রাল প্লেনের কথা বলেন। আত্মা সেই সব স্তর পরিভ্রমণ করে বলেও তাঁরা জানান। তাঁদের এই সিদ্ধান্ত দাঁড়িয়ে রয়েছে প্ল্যানচেট বা সিয়াঁস-সংক্রান্ত অভিজ্ঞতার উপরে। মজার ব্যাপার, বিভিন্ন সময় ও কালের বিভিন্ন প্যারানর্মালবিদ একই বর্ণনা দিয়ে গিয়েছেন, দিয়ে চলেছেন।

কিন্তু এতেও বোঝা সম্ভব নয়, ঠিক কতদিন বিদেহী আত্মা প্রেতাবস্থায় বিচরণ করে। হিন্দু ধর্মে বিধান রয়েছে নিকটজনের মৃত্যুর বাৎসরিক শ্রাদ্ধের । তা হলে কি এক বছর সময় লাগে মায়ার বাঁধন কাটতে? না, তেমন কোনও নির্ধারিত সময়ের কথাও তো কেউ বলেননি! প্যারনর্মালবাদীদের একাংশ জানান, মৃতেরা জীবিতদের কোনও দিনই ছেড়ে যান না। তাঁরা ‘সাথে সাথে’-ই ঘোরেন। তবে তাঁদের অবস্থান ঘটে অন্য টাইম অ্যান্ড স্পেস-এ। এই যুক্তিকেই ব্যবহার করেছেন জে কে রাওলিং তাঁর ‘হ্যারি পটার’ সিরিজে। হ্যারির প্রয়াত মা-বাবা, তার গডফাদার সিরিয়াস ব্ল্যাক— সকলেই হ্যারির সঙ্গেই থাকে। কেবল একটা আবছা পর্দা বিরাজ করে তাদের মাঝখানে।

এই কারণেই কি বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় দেখা দেন বেশ কিছু নামকরা মানুষের প্রেতাত্মা? ‘নেয়ার ডেথ এক্সপেরিয়েন্স’ বিষয়ে দীর্ঘ গবেষণা করেছেন মার্কিন দেশের রেমন্ড মুডি। তাঁর কথায় ১৯৭৭ সালে প্রয়াত সঙ্গীত তারকা এলভিস প্রিসলির প্রেতাত্মাকে নাকি আজও দেখা যায় মেমফিস অঞ্চলে। ফরাসি বিপ্লবে নিহত রাণি মারি আঁতানোয়েৎকেও নাকি অনেকেই দেখেছেন প্যরিসের কোনো কোনো জায়গায়। এঁরা কি অনুভব করেননি এঁদের মৃত্যুকে? নাকি উত্তর দেওয়ার জন্যে এঁরা কেউ ফিরে আসেননি।

৫০০০ বছর আগে প্রয়াত মিশরীয় লেখক আমেনহোটেপের আত্মার কথাও এই প্রসঙ্গে উঠে আসে। তিনিই বিখ্যাত ‘বুক অফ ডেড’-এর রচয়িতা। তাঁর প্রেতকে প্রত্যক্ষ করেছেন, এমন দাবি করা মানুষের সংখ্যাও কম নয়। অথচ প্রাচীন মিশরীয়রাই বিশ্বাস করতেন, ৪০ দিন বিদেহী আত্মা তার নিকটজনের কাছে ঘোরাফেরা করে।

হিন্দুরা মৃতের দেহাবশেষ নদীতে বিসর্জন দেয়। খ্রিষ্টানরা তাদের মৃতদেহ কবরস্থ করে। মুসলমানরাও মৃতদেহ কবরস্থ করে। দেহাস্থি বিসর্জনের অর্থ, দেহ সংক্রান্ত সংস্কার থেকে মৃতের আত্মাকে মুক্তি দেওয়া। কিন্তু তার পরেও প্রেতরা ফিরে আসে।

কেন ফিরে আসে প্রেত? মায়া ছাড়াও আর একটি বিষয়ের কথা বলেন অতিপ্রাকৃতবাদীরা। অনেক সময়েই নিজের অসম্পূর্ণ কাজ শেষ করতে প্রেতরা ফিরে আসে— এমন মতকেও ফেলে দেওয়া যায় না।

মায়া ছাড়াও, ঈর্ষা, প্রতিশোধস্পৃহা ইত্যাদিও প্রেতকে আটকে রাখে জীবিতের জগতে। ‘মুক্তি’-র বিষয়টা নির্ভর করে তার হাতেই। এমন কথা অনেকেই মনে করেন। কিন্তু যদি পরলোক ইহলোকের সঙ্গে সঙ্গে থাকা এক সমান্তরাল জগৎ হয়ে থাকে, যদি প্রয়াতরা জীবিতের পাশাপাশিই থেকে যান, তা হলে ক্ষতি কোথায়? বরং এমন কনসেপ্ট তো জীবিতকেই আশ্বাস জোগায় তার চরম নিঃসঙ্গতার মুহূর্তে, তার সংকটের কালে। এ থেকেই জীবিত আর মৃতদের নিয়ে গড়া যায় এক সামগ্রিক জগতের কল্পনা। যা হয়তো অনেক অবসাদ থেক‌ে রক্ষা করে জীবিতদের। হয়তো প্রয়াতদেরও। সে খবর আমরা পাবো না।

সূত্রঃ এবেলা

বাংলা ইনসাইডার/এএফ/জেডএ

 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭