এডিটর’স মাইন্ড

পর্দার আড়ালে আওয়ামী লীগ-বিএনপি'র ৫ সমঝোতা প্রস্তাব


প্রকাশ: 03/03/2023


Thumbnail

বাইরে আন্দোলনের হুমকি এবং সরকার ফেলে দেওয়ার আন্দোলন। কিন্তু ভিতরে ভিতরে চলছে একটি সমঝোতার পথ। আর এই সমঝোতার জন্য পর্দার আড়ালে নানামুখী আলাপ-আলোচনা চলছে প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের মধ্যে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি সরাসরি এসব সংলাপে যুক্ত না থাকলেও এই সব আলাপ-আলোচনার বিষয়টি সম্পর্কে দুই দলের শীর্ষ নেতারা অবহিত। আগামী নির্বাচনে যেন বিএনপি অংশগ্রহণ করে সেই লক্ষ্যেই এই রাজনৈতিক সমঝোতার চেষ্টা বলে একাধিক সূত্র বাংলা ইনসাইডারকে জানিয়েছে। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, পশ্চিমা দেশের কূটনীতিকরা চাইছেন আগামী নির্বাচন হোক অংশগ্রহণমূলক অবাধ সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ। আর সেটি করতে গেলে সকল দলের অংশগ্রহণ অন্তত জরুরী। বিশেষ করে বিএনপি অংশগ্রহণ না করলে এই নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে না বললেও কেউ কেউ মনে করছেন। একই রকম অভিমত ব্যক্ত করেছেন নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন কমিশন তার দায়িত্ব গ্রহণের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে সুস্পষ্টভাবে বলেছে, তারা চায় নির্বাচনে সকল দল অংশগ্রহণ করুক এবং সব দল অংশগ্রহণ না করলে নির্বাচন বিতর্কিত হবে বলেও তারা মন্তব্য করেছেন।

এসব মন্তব্যের আড়ালে বিএনপি যেন নির্বাচনে আসে সেজন্য একটি রাজনৈতিক সমঝোতার চেষ্টা করা হচ্ছে। কি আছে এই রাজনৈতিক সমঝোতায়? একাধিক সূত্র বাংলা ইনসাইডারকে জানিয়েছে, পাঁচ দফা সমঝোতা প্রস্তাব নিয়ে সরকার এবং বিরোধী দলের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে। পাঁচ দফা সমঝোতা প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে:

১. বেগম খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাওয়ার সুযোগ দান করা।

২. নির্বাচনের আগের মন্ত্রিসভার ছোট করা এবং অন্তত অর্ধেক মন্ত্রী রাখা, যারা আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন না।

৩. নির্বাচন কমিশনকে আরও ক্ষমতা প্রদান করা এবং নির্বাচনকালীন সময়ে সেনাবাহিনী নিয়োগের ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনকে প্রদান।

৪. নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণ এবং সর্বোচ্চ সুযোগ-সুবিধা দেওয়া।

৫. নির্বাচনকালীন সময়ে প্রশাসনের যত চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ রয়েছে তা বাতিল করা এবং প্রশাসনকে নিরপেক্ষ করা।

এই ৫ দফা প্রস্তাব যদি শেষ পর্যন্ত বাস্তবায়িত হয় তাহলে বিএনপি নির্বাচনে যাবে এমন কথা কেউ কেউ বলছেন। তবে বিএনপির পক্ষ থেকে এ ধরনের বক্তব্যকে সম্পূর্ণ অস্বীকার করা হয়েছে। 

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, নির্বাচন নিয়ে সমঝোতার কোনো প্রশ্নই ওঠে না। আমাদের সমঝোতার একটিই পথ। তা হলো নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি।

অন্যদিকে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেছেন, নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে সংবিধান অনুযায়ী এবং কোন দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলো না করলো সেটি আওয়ামী লীগের দেখার বিষয় নয়।
 
বাইরে তারা যাই বলুক না কেন, নির্বাচনের মাঠে সমঝোতার প্রধান ইস্যু হচ্ছে খালেদা জিয়ার মুক্তি। বিভিন্ন বিএনপির নেতার সঙ্গে কথা বলে দেখা গেছে, তারা মনে করছেন, ২০১৮ এর নির্বাচনে যদি খালেদা জিয়ার মুক্তির ইস্যুটিকে নিয়ে দর কষাকষি করা হতো, সেটি তাদের জন্য লাভজনক হতো। কিন্তু সেটি না করে বিএনপির ওই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা ছিল তাদের জন্য ঐতিহাসিক ভুল। এবার বিএনপি নির্বাচনে যাবার প্রধান শর্ত হিসেবে রাখছে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং সমস্ত হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার। তবে খালেদা জিয়ার মুক্তির বিনিময়ে নির্বাচনে যাওয়া নিয়ে বিএনপির মধ্যেই এক ধরনের মতবিরোধ রয়েছে। তারা মনে করছে, খালেদা জিয়ার শর্তযুক্ত মুক্তি বা নির্বাচনে যাওয়ার শর্তে খালেদা জিয়ার মুক্তি- এগুলো বিএনপির আরও সর্বনাশ ডেকে আনবে। বিএনপির একমাত্র পথ আন্দোলন তীব্র করা এবং সরকারকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি মানতে বাধ্য করা। কিন্তু সেটি বিএনপি আদৌ অর্জন করতে পারবে কিনা তা নিয়ে বিএনপির মধ্যে রয়েছে সংশয় সন্দেহ এবং অনিশ্চিয়তা।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭