প্রকাশ: 04/03/2023
২০২০ সালের ২৫ মে জর্জ ফ্লয়েড চিৎকার করে বলবার চেষ্টা করেছিল " আমি নিঃশ্বাস নিতে পারছি না। " সময়টা ছিল কোভিড -১৯ মহামাররির সূচনা লগ্নে। প্রায় ৯ মিনিট ধরে যুক্তরাষ্ট্রের মিনোসোটার এক পুলিশ জর্জকে তার হাঁটুর নিজেই চেপে রেখে হত্যা করেছিল। কালো মানুষগুলো এভাবেই সমাজের সাদা মানুষগুলোর হাটুর চাপে প্রাণ হারায় যুগে যুগে। আন্দোলন হয় " ব্ল্যাক লাইফ ম্যাটার্স " ব্যানারে। উন্নত দেশ দাবি করলেও সামাজিক ন্যায্যতা ও পরিবেশ ন্যায়পরতা সেখানে গুমরে গুমরে কাঁদে। বাঁচাও বাঁচাও ধ্বনি সেখানেও পাহাড় -পর্বতে, সুউচ্চ ইমারতের দেয়ালে দেয়ালে প্রতিধ্বনিত হয়।
গত কয়েকদিন আমার কষ্ট হচ্ছে নিঃশ্বাস নিতে। কারণ চারিদিকে কেবল ধুলা আর ধুলা। এরই মাঝে প্রথম আলো
ঢাকা শহরের বাতাসের অবস্থা নিয়ে লিখেছে। আজ বাংলার ইনসাইডার একইভাবে ঢাকার বায়ুর দূষণ নিয়ে লিখেছে। পরিবেশ বিপর্যয় ও দুর্বৃত্তায়ণ কারনিক সম্পর্কে সম্পর্কিত। তবে
দিন দিন যে ভাবে দুর্বৃত্তায়ণ হচ্ছে একদিন তাদের হাত থেকে কেউই রক্ষা পাবে না। ধুলো
-বালির হাত থেকে পানি ছিটিয়ে কিংবা উঁচু দেয়াল নির্মাণ করে সাময়িক স্বস্তি পাওয়া গেলেও
সংকট আরও গভীরতর হতে যাচ্ছে। সবুজ সোনার বাংলা হচ্ছে হরিৎ -বাদামি দুর্গন্ধময়
বুড়িগঙ্গা।
নিউ ইয়র্ক থেকে প্রবাসী বন্ধু ও তার স্ত্রী
বইমেলা দেখার জন্য দুদিন আগে টিকেট কেটে ঢাকায় এসেছেন। তাদের সঙ্গে দেখা হলে সেই একই কথা। ধুলোয় গলা আটকে যাচ্ছে। নিঃস্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। তারা ভয়ে কিছু খেতেও চায়না। ওরা জানে দেশটা কেমন বদলে গেছে।দিনরাত
পরিশ্রম করে সেখানে তারা বাড়ি বানিয়েছে আর তার পাশেই উঠেছে কোন একজন আমলা, ব্যাংকার,
ব্যাবসায়ী কিংবা রাজনীতিবিদ।
লুট -পাচার করা টাকা দিয়ে তিনি রাজা সেজেছেন সেখানেও। তবুও কয়েক
যুগ আগে চলে যাওয়া বন্ধুরা স্মৃতিচারণ করতে পরিবার -পরিজন , সন্তানদের নিয়ে ফিরে আসে একটু ভালো অনুভূতি নিয়ে প্রবাসে ফিরে যাবার জন্য। কিন্তু আমরা কি তাদের কোনো আশার আলো দেখাতে পারছি? যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে কেবল নিউ ইয়র্ক , টরন্টো , লন্ডন বা মেলবোর্ন থেকে বইমেলায় আসছে না , মানুষ এখন টেকনাফ , তেঁতুলিয়া থেকে বাংলা একাডেমির বইমেলাতে আসছে, ভারী করে নির্মল বাতাস।
নগর এই চাপ আর সহ্য করতে পারছে না! আগে চিন্তা করতো বুড়ো
বুড়ি হয়ে শেষ জীবনে বাংলাদেশে থাকবে।
সেজন্য একটা ফ্লাট কিনতো। এখন আর
সেভাবে চিন্তা করে না। বাংলাদেশ এখন তাদের অচেনা।
এই শহরটাকে দেখার এখন দুই জন মেয়র আছেন। ওনাদের বাজেট আছে , জনবল আছে । কিন্তু তার পরেও নেই
নেই হাহাকার। কেবল ভাঙা গড়া চলছে সারা শহর ধরে সারা বছর। ধুলো আবর্জনা ময়লা এসবের মাঝেই বসবাস করছেন দুই কোটির উপরে মানুষ। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নির্মাণ কাজ থেকে কন্টাক্টারের অধিক মুনাফা অর্জন
বাসনা এবং কর্পোরেশনের অসৎ কর্মকর্তার লোভ শহরকে জঞ্জালের জঙ্গল বা দূষণের নগরে পরিণিত করেছে। এসবে সঙ্গে আছে পরিকল্পনার অভাব
ও পরিকল্পনায় দূরদৃষ্টিসম্পন্ন বিজ্ঞজনের মতামতের সুযোগ না থাকা বা প্রশাসনের উপেক্ষা
করবার প্রবণতা। যাদের সামর্থ আছে ঘর থেকে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত গাড়িতে উঠে, বসে থাকেন যানজটে, মোবাইলে ফেইসবুক বা অনুরূপ কিছু নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। গন্তব্যে পৌঁছে গেলে স্বস্তির নিঃস্বাস ফেলেন। কিন্তু যাদের এরকম সুযোগ নেই তাদের জীবনে কবে মুক্তি আসবে তার কোনো সম্ভাবনা তারা দেখতে পাচ্ছেন না। ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ সমাজের লুটেরাদের জন্য আশীর্বাদ। নির্মাণ খরচ বাড়ানোর সুবর্ণ সুযোগ। কমছে কেবল মানুষের দাম , তাদের গড় আয়ু। একটি পরিসংখ্যানে দেখছিলাম ঢাকার মানুষের গড় আয়ু কমেছে ৫থেকে
৭ বছর পরিবেশ দূষণের কারণে। সমাজ ব্যবস্থা এমন হয়েছে যে, এটা বললে হয়তো বলা হবে আমি মিথ্যা ও গুজব রটাচ্ছি। আমি উন্নয়ন দেখতে পাচ্ছি
না, কিংবা না দেখার ভান করছি হয়তো। সমস্যাকে ছাইচাপা দিয়ে কাংখিত সাফল্য অর্জন সম্ভব কি ?
সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের একটি সাক্ষাৎকার দেখছিলাম। তিনি উদ্বিগ্ন কিভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস গুলিস্তানের বাজারে পরিণিত হয়েছে। প্রবাসী বন্ধুদের সেটাই দেখালাম । দেখে যাও বন্ধু তোমার প্রিয় ক্যাম্পাস কেমন আছে। রাত ১২ টার পরেও এখানে মানুষ গিজ গিজ করে। ছাত্র -ছাত্রীরা এখন বিসিএস নিয়ে ব্যস্ত। শিক্ষা, জ্ঞান, আলো সম্পর্ক এখন চাকরিকেন্দ্রিক। আসল অন্যায্যতার চিত্র পেতে যেকোন বিশ্ববিদ্যালয়ের টয়লেটে যেতে হবে। আমাদের তরুণ সমাজ কিভাবে আছে, তা দেখার জন্য দূরে কোথাও যাওয়ার প্রয়োজন নেই
-বিশ্ববিদ্যালয়ে
তাদের হলগুলোতে গেলেই দারিদ্র, নিপীড়ন, অবহেলা, বৈষম্য, প্রভৃতি
স্বাস্থ্য ও পরিবেশ অন্যায্যতার সত্যতা মিলবে।
বাজার অর্থনীতি আমাদেরকে দিয়েছে শতাধিক প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় আর উইকেন্ড বা ইভিনিং প্রোগ্রাম। আমার সহকর্মীরা সেখানে ছুটতে ছুটতে নিজের বিভাগের কথা ভুলে যান। আর সঙ্গে আছে – এম. ফিল -পিএইচডি বাণিজ্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা গবেষণা চুরি করে পদোন্নতি নিয়ে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে নিয়ে যাচ্ছে গরিবের সম্পদ। বললে একটি দল উল্টো বলে যেখানে হাজার হাজার কোটি টাকা চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে -সেখানে আপনি আছেন এই সব চুনোপুটি শিকারে ! নামি-দামি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের মুখে এসব যখন শুনতে হয়, তখন অনুমান করা যায় সমাজ কতটা ভয়ানক সংকটে দিন পার করছে!
এরই মাঝে আবার আসছে ভর্তি পরীক্ষা। সেখানে শুরু হয়েছে গুচ্ছ নিয়ে সংকট। স্বায়ত্তশাসনকে গলাটিপে হত্যার পরিকল্পনা থেকেই গুচ্ছ চিন্তা সেটা মুখে অস্বীকার করলেও ওটাই বাস্তবতা। একজন সরকারি কর্মকর্তা দাবি করেন তিনি রাষ্ট্রের প্রতিনিধি। সুতরাং, আপনি উপাচার্য বা অধ্যাপক যাই হন, আপনি গ্রেড ১ পান বা গ্রেড ৩ পান, আপনি সচিবের শিক্ষক হন বা জেনারেলের বাবা হন, তাতে কিছু আসে যায় না। সরকারি কর্মকর্তাকে স্যার
( Sir- Servant I remain ) বলতে হবে - মানে আমি আপনার দাস। এবং এই চেতনাধারী সরকারি কর্মকর্তার সংখ্যা দিনই দিন বাড়ছে। ফলে আগামী দিন আমরা ভয়াবহ একটি পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে যাচ্ছি! সেখান থেকে পরিত্রাণ পেতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মপরিবেশ উন্নয়ন সবচে জরুরি।
সমাজ সংস্কারের কথা বলে সক্রেটিসকে
প্রাণ দিতে হয়েছে, ধর্মীয় সংস্কারের বিরুদ্ধে কথা বলার জন্য ব্রুনোকে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। একদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসনকে কেড়ে নিতে যে অপচেষ্টা চলছে, অপরদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের
শিক্ষকরা কে অপব্যাবহার করছেন। আগামীতে
শিক্ষকদের দশা সক্রেটিস -ব্রুনোর মতো যে হবে না- সেটা কিভাবে বলি ? ফুলপুরীরা কি নিরাপদ? সম্প্রতি আবার শুরু হয়েছে প্ররোচনা- দুই নেত্রী হলো আসল সমস্যা। নারী শিক্ষকদের সন্মান নিয়ে যেখানে কোনো কোনো কর্তৃপক্ষ খেলায় মাতেন, সেখানে ফুলপুরীরা কি নিরাপদ? আজ আদালতকে নির্দেশনা দিতে হচ্ছে প্রভোষ্ট, হাউস টিউটরদেরকে দায়িত্ব পালনে। এখন যেমন বরেণ্য শিক্ষকরা উপাচার্য হতে চান না, তেমনি বরেণ্য শিক্ষকদেরকে প্রভোষ্ট করা হয় না। শুনেছি
কোনো কোনো হলের প্রভোস্ট যোজন -যোজন দূরে থাকেন - এটা কোন ধরনের রাজনীতি আমার বোধগম্য নয়! মাননীয় শিক্ষা মন্ত্রীকে তাই অনুরোধ করতে চাই - গুচ্ছ নিয়ে নয়,
শিক্ষার গুণগত মান,পরিবেশ ও ফুলপুরীদের নিরাপত্তা হোক আপনার ভাবনা। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসন
মুক্তির প্রকৃত পথ। গুচ্ছ সেই পথকে সংকুচিত করবে।
মানুষরূপী দানবরা টার্গেট করেছে আপনাদের মতো নারী মন্ত্রী, নারী শিক্ষক, নারী শিক্ষার্থী -
তাই ফুলপুরীরা আক্রান্ত হচ্ছে। সংকুচিত হয়ে আসছে নারীদের ভুবন - বাঁচাও বাঁচাও করে তারা চিৎকার করছে। তাদের নিঃশ্বাস নেয়ার পরিসর কমছে। ওই যে একটি দল সংখ্যায় কম হলেও ব্যানার হাতে দাঁড়িয়েছিল – “নারী রাষ্ট্রপতি চাই না” দাবি নিয়ে ! তাদের হুমকিকে যতটা ছোট ভাবছেন, বিষয়টা ততটা হালকা নয় কিন্তু !
প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান
বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭