ক্লাব ইনসাইড

বেলা বোসের খোঁজে জাবির মুক্তমঞ্চে অঞ্জন দত্ত


প্রকাশ: 03/03/2023


Thumbnail

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চ রাঙাতে আসছেন দুই বাংলার নন্দিত গায়ক অভিনেতা, পরিচালক ও লেখক অঞ্জন দত্ত। এবার নাটক-সিনেমা বা নিজের লেখা কোনো বই নিয়ে  নয়, অঞ্জন আসবেন সংগীতপ্রেমীদের প্রিয় শিল্পী হিসেবে।

আজ শুক্রবার (৩-রা মার্চ) সন্ধ্যায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩১ ব্যাচের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের আয়োজনে পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চে সংগীত পরিবেশনা করবেন দুই বাংলার নন্দিত গায়ক অঞ্জন দত্ত।

গত কয়েক দশকে  হাতেগোনা যে কয়েকজন শিল্পী গভীর আবেশে শ্রোতাদের আবিষ্ট করে রেখেছেন, তাঁদের মধ্যে অঞ্জন দত্ত অন্যতম। অঞ্জন দত্তের গান বর্তমান জেনারেশনের শ্রোতা শ্রেনীর অনেক দিনের সঙ্গী। তাঁর করা অনেক গানই শ্রোতা মনে বুদ্‌বুদ তুলে আসছে। মনে হয় অঞ্জন যেন শ্রোতাদের মনের  কথাগুলোই গানে গানে বলছেন।

অঞ্জনের গানে পাহাড়ি রাস্তায় আঁকাবাঁকা শরীরের আলো, ফুটপাথের কলে স্নান করার সময় ঝলমল করে ওঠা কিশোরের শরীর, অফিস ফেরত ক্লান্ত মধ্যবিত্তের নাছোড় আশাবাদ আর অনন্ত সাতের দশক। তিনি থিয়েটার করেন, সিনেমা বানান, গান বাঁধেন, আরও কত কী! বেড়ে ওঠার শহর দার্জিলিং ফিরে ফিরে এসেছে তাঁর গানে, ‘আমার শৈশবের দার্জিলিংটা’ বা ‘কাঞ্চনজঙ্ঘা’—এগুলোর মধ্যে শ্রোতারা যেন দেখতে পান পাহাড়ঘেরা দার্জিলিংয়ের অপরূপ প্রকৃতি।


শ্রোতা মনে সাড়া জাগানো অঞ্জনের তুমুল জনপ্রিয় গান,  বেলা বোস তুমি শুনতে পাচ্ছো কি?... দশ বারো বার রং নম্বর পেরিয়ে তোমায় পেয়েছি...। গানের সেই বেলা বোস কি আভিজাত্য মোড়া এক অশরীরী নাম? নাকি, সত্যিই তিনি ছিলেন? সত্যই কি তিনি ভাবুক, চাকুরীহীন প্রেমিককে ছেড়ে, মা-বাবার পছন্দের পাত্রকে বিয়ে করে সুখের অজানা দেশে পাড়ি দিয়েছিলেন? এতই কঠোরমনা ছিলেন কি তিনি?

অঞ্জন দত্তের সেই গান আজকের অতি আধুনিক যুগেও যুবকদের হৃদয়ে দোলা জাগায়। আজও স্মৃতিতে উজ্জ্বল কোনও এক নীরব নারীর সেই নিরুচ্চারিত প্রত্যাখ্যান। বেকারত্বের অন্ধকারে তলিয়ে যেতে থাকা এক যুবকের করুণ আর্তচিৎকার । ভেসে যেতে যেতে খড়কুটোর মতো আঁকড়ে ধরতে চাওয়া সেই তরুণ প্রাণ। একচিলতে আলোর মত 'নতুন চাকরি'।

পশ্চিমের সঙ্গীতের শ্রোতা এই বাঙালিকেই নিজের গানের মাধ্যমে সমৃদ্ধ করেন অঞ্জন। সেই নব্বই দশকের গোড়া থেকেই। তার কিছু বিখ্যাত গানের মধ্যে রয়েছে, ছেলেবেলার স্মৃতিচারণ, গান শেখানোর শিক্ষককে উৎসর্গ করে ‘ফাইভ হান্ড্রেড মাইলস’ (500 Miles) গানের সুর অনুকরণে রচিত গান 'মিস্টার হল'।
জন ডেনভারের গানের প্রতি অঞ্জনের আকর্ষণ থেকে রচিত গান 'সানশাইন'।

‘পুরনো গিটার’ অ্যালবামের 'মালা' গানটি অঞ্জনের অত্যন্ত বিখ্যাত গানের একটি। সাধারণ গরিব পরিবারের একটি মেয়ে কীভাবে আর্থসামাজিক কাঠামোর চূড়ায় পৌঁছে যায়, কীভাবে বদলে যায় তার জীবন— সেই গল্প নিয়েই তার এই গান। ব্রিটিশ গায়ক পিটার সারসটেটের ‘হোয়্যার ডু ইউ গো টু মাই লাভলি’ (Where Do You Go To My Lovely)-র সুর এমন মূল ভাবনার কিছুটা আদলে এই গানটি তৈরি করেছিলেন অঞ্জন।

পিট সিগারের গাওয়া গান থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে ২০০১ সালে প্রকাশিত অঞ্জনের ‘রং পেন্সিল’ অ্যালবামের 'ছোট বাক্স' গানটি শ্রোতাদের মাঝে বেশ জনপ্রিয়তা পায়।তার জনপ্রিয় আরেকটি গান 'পুরনো গিটার'। যে গানটি অঞ্জনের সেই সব শিল্পীর প্রতি হোমেজ, যাঁরা তাঁকে গান গাইতে সাহস জুগিয়েছেন। সেই শিল্পীদের তালিকায় যেমন আছেন কবীর সুমন, তেমনই আছেন বব ডিলনও। ডিলনের ‘ব্লোয়িং ইন দ্য উইন্ড’ (Blowin' in the Wind), ‘মিস্টার ট্যাম্বুরিন ম্যান’ (Mr Tambourine Man)-ও অঞ্জনকে মঞ্চে গাইতে দেখা গিয়েছে বারবার।


গান-সিনেমায় একাকার হলেও অঞ্জন হয়তো অভিনেতা হিসেবেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন।
বছর কয়েক আগে ঢাকায় এসে একবার সে কথাও বলেছিলেন স্পষ্ট ভাবে, ‘এখন গানই আমার পরিচয়। কিন্তু আমি আসলে অভিনেতা হতে চেয়েছি। বড় মাপের পরিচালকের সঙ্গে কাজ করেছি বটে, কিন্তু বড় অভিনেতা হতে পারিনি। আমি এখন আর নতুন করে অভিনেতা হওয়ার চেষ্টা করি না। আমি মনে করি, একটা সময় যেভাবে অভিনেতা হওয়ার জন্য কাজ করেছি, তা এখন আর সম্ভব নয়। যদি বয়স কম হতো, তাহলে অভিনেতাই হতে চাইতাম। তবে গান না গাইলে হয়তো হারিয়েই যেতাম।’

এই গুণী শিল্পীর জন্ম ১৯৫৩ সালের ১৯ জানুয়ারি কলকাতায়। তবে তার পড়াশোনা ও বেড়ে উঠা দার্জিলিংয়ে। সেখানকার সেন্ট পলস স্কুলের কঠোর নিয়মের মধ্যেও পালিয়ে সিগারেট খাওয়া, প্রেম করা। আবার স্কুলমাস্টারের বেত খাওয়ার বাইরে একজন অঞ্জন হয়ে ওঠার আকুতি স্কুল থেকেই পেয়েছিলেন এই শিল্পী।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭