ইনসাইড পলিটিক্স

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন: আত্মঘাতী পথে হাটছে বিএনপি


প্রকাশ: 04/03/2023


Thumbnail

নির্দলীয়, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না বিএনপি। এই লক্ষ্যে দীর্ঘদিন থেকেই বিএনপি সরকার গঠনের রূপরেখার ২৭ দফা, সরকার পতনের ১০ দফা দাবিসহ আন্দোলন, সংগ্রাম ও পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করে আসছে। তারই অংশ হিসেবে আজ শনিবারও (৪ মার্চ) বিকেলে রাজধানীর উত্তরায় বিএনপির পদযাত্রা কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই পদযাত্রার পূর্বে এক সমাবেশও করেছে দলটি। সমাবেশে আগামী ১১ মার্চ দেশের সব মহানগর ও জেলায় যুগপৎ আন্দোলনের নতুন কর্মসূচি হিসেবে মানববন্ধন ঘোষণা করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

এদিকে ষড়যন্ত্রের পথ পরিহার করে বিএনপিকে নির্বাচনে আসার আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক। আজ শনিবার (৪ মার্চ) বিকেলে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে টাউন হলে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিএনপি-জামায়াতের দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র, নৈরাজ্য ও অপপ্রচারের প্রতিবাদে শান্তি সমাবেশে তিনি এ আহ্বান জানান।

অন্যদিকে বিএনপি আসলে কী চায়?- এই নিয়ে ভিন্ন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তাঁরা বলছেন, বিএনপি আসলে কী চায়- তা কেবল বিএনপিই জানে। বাইরে থেকে সেটি বলা সম্ভব নয়। তবে তাদের অতীত ও বর্তমান কর্মকাণ্ডের সংমিশ্রণে একটা সম্ভাব্য চিত্র তৈরি করা যায়, আর সেটাই বিশ্লেষকদের কাজ। তাঁদের কাজ, জ্যোতিষীর মতো ভবিষ্যদ্বাণী করা নয়। ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে বিএনপির অবস্থান কী হতে পারে- সে বিষয়ে ক্রমেই তারা পয়েন্ট অব নো রিটার্নের দিকে চলে যাচ্ছে, যা একটা রাজনৈতিক দলের জন্য আত্মঘাতী পথ। 

শনিবার (৪ মার্চ) বিকেলে রাজধানীর উত্তরায় বিএনপির পদযাত্রা কর্মসূচি পূর্ব সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘কাঁটাছেড়া সাজানো সংবিধানে আওয়ামী লীগের তামাশার নির্বাচন বিএনপি হতে দেবে না। সরকারের মন্ত্রীরা বলেন, বর্তমান সংবিধানের অধীনে নির্বাচন হবে। কোন সংবিধান? যে সংবিধান কাঁটাছেড়া করে একটি পাতানো নির্বাচনের জন্য সাজিয়ে নিয়েছে আওয়ামী লীগ? যে নির্বাচনে ভোট দিতে যায় না মানুষ। এর আগের নির্বাচনে ভোট কেন্দ্রে কুকুর শুয়ে ছিল। এ ছবি মিডিয়ায় প্রচার হয়েছে। এ দেখে আমাদের এক নেতা বলেছিলেন কুত্তামার্কা নির্বাচন। আবারও পাতানো-সাজানো নির্বাচনের আয়োজন চলছে।’

একই দিনে, শনিবার (৪ মার্চ) বিকেলে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে টাউন হলে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ আয়োজিত শান্তি সমাবেশে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেছেন, ‘নির্বাচন ছাড়া কোনো সরকার উৎখাত করা যাবে না। নির্বাচনই হলো ক্ষমতা বদলের একমাত্র পথ। কাজেই যতই ষড়যন্ত্র করেন, সব ষড়যন্ত্রকে নসাৎ করে দিয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। যারা ‘হ্যা-না’ ভোট করেছিল রাতের অন্ধাকারে। যারা নিজেরা ভোট করে নিজেদেরকে নির্বাচিত ঘোষণা করেছিল, বিরোধীদলকে ভোট কেন্দ্রে যেতে দেয়নি। সেই ওরা আমাদেরকে গণতন্ত্র শেখায়!’  

আসলে বাংলাদেশের রাজনীতির পথে বিএনপি কোন দিকে মোড় নিচ্ছে? এক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ভূমিকা কী হতে পারে? - এসব বিষয় নিয়েই রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা আজকের (শনিবার, ৪মার্চ) দুই দলের নেতাদের উদ্ধৃত বক্তব্য বিশ্লেষন করে বলছেন, বিএনপি মহাসচিব একজন শিক্ষিত, সজ্জন ব্যক্তি। তিনি উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত মানুষ। কিন্তু তিনি তার আজকের বক্তৃতায় বিগত নির্বাচন নিয়ে যে ধরনের ভাষা ব্যবহার করেছেন, তা দেশের রাজনীতিতে একটি অসদাচরণ বা উগ্রপন্থী আচরণই বলা চলে। অপরপক্ষে আওয়ামী লীগের সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য নমনীয়ভাবেই বিএনপিকে নির্বাচনে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। এছাড়া গণতন্ত্রের প্রশ্নে তিনি যে ইতিহাস তার বক্তৃতায় তুলে ধরেছেন, সে ইতিহাস বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গণের সকলেরই জানা।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা আরও বলছেন, ‘১০ ডিসেম্বর সরকারের পতন ঘটানো হবে’- বিএনপির এমন আগাম ঘোষণা, দেশে-বিদেশে তাদের প্রপাগান্ডা বাহিনীর নজিরবিহীন মিথ্যাচারে পূর্ণ গুজব ছড়ানো এবং তারপর সেদিন সত্যিকার কী ঘটেছে তার সব কিছুই এখন সবাই জানেন ও দেখেছেন। গুজব এক ভয়ংকর ধ্বংসাত্মক অস্ত্র। এর লক্ষ্য সংঘাত-সংঘর্ষ, নৈরাজ্য, অরাজকতা ও রক্তপাত ঘটানো। গুজবের মাধ্যমে এবার তারা মানুষের মধ্যে এক ধরনের শঙ্কা ও উদ্বেগ সৃষ্টি করতে পেরেছিল, এ কথা সঠিক। কিন্তু র‌্যাশনালিস্ট বা যুক্তিবাদী মানুষ কিন্তু ঠিকই বলেছেন, ১০ ডিসেম্বরে বড় এক অশ্বডিম্ব ব্যতীত আর কোনো প্রাপ্তি বিএনপির হবে না। কিন্তু ইতিবাচক দিক হলো, বিএনপির প্রপাগান্ডা বাহিনীর মিথ্যাচারী মুখোশ উন্মোচিত হয়েছে। আগামী দিনে মানুষ এমন সব গুজব আরও সাহসিকতার সঙ্গে মোকাবেলা করবে।

তাঁরা বলছেন, প্রকৃতপক্ষে বিএনপি একটি আত্মঘাতী পথে হাটছে। দেশের অভ্যন্তরে ওয়ান-ইলেভেনের কুশীলব, পৃষ্ঠপোষক ও সুবিধাভোগী কিছু বড় মিডিয়া হাউস, কিছু সুচিহ্নিত কথিত সুশীল ব্যক্তিরা বিএনপিকে নৈরাজ্য ও রক্তপাতের পথে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা করছে এবং উসকানি দিচ্ছে। বিএনপি এ ধরনের উস্কানিদাতাদের দ্বারা প্রভাবিত না হয়ে যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে- তবে তা হবে বিএনপির জন্য ফলপ্রসূ। এক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশগ্রহণের যে আহ্বান জানাচ্ছে- তার জন্য আলোচনার দ্বার সম্প্রসারিত রেখেছে। কিন্তু সংবিধানের যে সংশোধনী ইতিমধ্যে হয়ে গেছে- তা আবার পরিবর্তন করতে হলে অবশ্যই বিএনপিকে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জাতীয় সংসদে আসতে হবে। এ ছাড়া অন্য কোনো পথ আর নেই, আন্দোলনের মাধ্যমে তা সম্ভব নয়। কেননা গত ১৪ বছরের বিএনপির আন্দোলন কেমন হয়- তা প্রমাণিত হয়ে গেছে। এখন কেবলই দেখার বিষয় বিএনপি আত্মঘাতী পথে হাটবে, নাকি ফলপ্রসূ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭