ইনসাইড গ্রাউন্ড

প্রথম অ্যাসাইনমেন্টে ফেল হাথুরুসিংহে!


প্রকাশ: 05/03/2023


Thumbnail

দ্বিতীয় দফায় চান্দিকা হাথুরুসিংহেকে বাংলাদেশের হেড কোচের দ্বায়িত্ব দেয়ার পর থেকে তার সাফল্য পাওয়া-না পাওয়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে বিস্তর। ২০১৪ সালে বাংলাদেশ ক্রিকেট যখন অমানিশার আঁধারে ডুবে যাচ্ছিলো, ঠিক তখন দ্বায়িত্ব নিয়ে বাংলাদেশকে কক্ষপথে ফিরিয়ে আনার কৃতিত্বের দাবিদার তিনি। ২০১৭ সালের নিজ দেশ শ্রীলঙ্কার কোচ হওয়ার জন্য দৃষ্টিকটুভাবে দ্বায়িত্ব ছেড়ে দেয়ার আগ পর্যন্ত মোটাদাগে বেশ কিছু সাফল্যও এনে দিয়েছেন বাংলাদেশকে। তার অধীনেই ২০১৫ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল খেলেছে সাকিব-তামিমরা। এরপর ঘরের মাঠে পাকিস্তান, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টানা তিনটি ওয়ানডে সিরিজ জয়, ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সেমিফাইনাল খেলা-ওয়ানডে দল হিসেবে বাংলাদেশের সমীহযোগ্য শক্তি হয়ে ওঠা সেই সময়েই। তবে এবারের গল্পটাকে ভিন্নই বলতে হবে। নিজের প্রথম অ্যাসাইনমেন্টে যে ডাহা ফেল মেরেছেন হাথুরুসিংহে!

ক্রিকেটের তিন সংস্করণের মধ্যে ওয়ানডে ফরম্যাটটাই সবচেয়ে ভাল খেলে বাংলাদেশ। টেস্ট ও টি-টোয়েন্টিতে এতদিনেও পায়ের নিচে মাটি খুঁজে না পেলেও, মাঠের পারফরম্যান্স দিয়ে এক দিনের ক্রিকেটে সমীহ জাগানিয়া দল হয়ে ওঠেছে বাংলাদেশ। ঘরের মাঠে তো বটেই বিদেশেও অন্তত এই ফরম্যাটে লড়াইয়ের মানসিকতার প্রমাণ দিয়েছেন ক্রিকেটাররা। পরিসংখ্যানও সে দাবির স্বপক্ষেই কথা বলে। চলতি সিরিজের আগে হোমে ২০১৬ সাল থেকে ১৩টি সিরিজ খেলে ১২টিতে জয় তুলে নিয়েছে বাংলাদেশ। আবার এই সময়ের মধ্যে শ্রীলঙ্কা মাটিতে তাদের সাথে ১-১৪ এ ড্র, ক্যারিবিয় দ্বীপপুঞ্জেওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দুটি সিরিজ জয়, দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে তাদের বিপক্ষে প্রথম সিরিজ জয়- সবকিছু মিলিয়ে খুব একটা বাজেও ছিলো টাইগারদের অবস্থান।

২০১৬ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সবশেষ নিজেদের মাটিতে ওয়ানডে সিরিজি হেরেছিলো বাংলাদেশ। সময়ের হিসেবে প্রায় সাড়ে ছয় বছর পর সেই একই প্রতিপক্ষের কাছে আরেকটি সিরিজ হেরে সে জয় যাত্রার অবসান হলো সাকিব-তামিমদের। দুটি সিরিজেই ডাগআউটে কোচের দ্বায়িত্বে ছিলেন হাথুরুসিংহে। সেবারের আর এবারের প্রেক্ষাপটও আলাদা। সে সময়ে বাংলাদেশ দল ক্রমেই পরিণত হয়ে উঠছিলো, আর এখন একদিনের ক্রিকেটে বাংলাদেশ বেশ পরিণত দল। তাহলে ইংলিশদের বিপক্ষে এমন মাঠে বেহাল দশা কেন?

কোচ হিসেবে কড়া হেডমাষ্টার হিসেবে পরিচিত রয়েছে চান্দিকা হাথুরুসিংহের। নিজের ক্রিকেটীয় দর্শনে অটুট থাকতে পছন্দ করেন তিনি। এই যেমন দ্বিতীয় দফায় দ্বায়িত্ব নিয়েই সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচে সাকিবকে পাঁচ নম্বরে ব্যাটিং করিয়েছেন তিনি। ২০১৯ বিশ্বকাপে তিন নম্বরে ব্যাট করে দুর্দান্ত সব সফলতা পেয়েছিলেন সাকিব। মাঝে কিছুদিন ব্যাটিং অর্ডারে এদিক-সেদিক করে খেললেও, হাথুরু ফেরার পরই গুঞ্জন চলছিলো আবারো পাঁচে নেমে যেতে হতে পারে তাকে, হলোও তাই।

আবার হাথুরুর রক্ষণাত্নক মানসিকতার প্রভাবও রয়েছে। ঘরের মাঠে কন্ডিশন ও উইকেটের সুবিধা নিয়ে প্রতিপক্ষকে বধের কৌশল হিসেবে বেছে নিয়েছিলো বাংলাদেশ। সে সময় তাতে সাফল্য আসলেও এর সুদূর প্রসারী প্রভাব পড়েছেই। যা থেকে এখনো বের হতে পারেনি বাংলাদেশ। গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে নিজেদের মাটিতে অস্ট্রেলিয়া ও নিউ জিল্যান্ডের মতো দলের বিপক্ষে সিরিজ জিতে বিশ্বকাপে গিয়ে হতশ্রী পারফম্যান্স ছিলো তার প্রমাণ। যদিও নেদারল্যান্ডস ও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুই জয়ে অনেকে নিজেদের ইতিহাসে বাংলাদেশের সেরা বিশ্বকাপ বলেছেন সেটিকে। তবে এ দুটি জয় তো প্রত্যাশিতই ছিলো।

তবে একটি সিরিজ দিয়ে কাউকে বিচার করা কঠিনই। দীর্ঘ সময় পর দলের সাথে যুক্ত হয়ে মানিয়ে নেয়ার বিষয়ও রয়েছে। তবে যেহেতু বাংলাদেশে এসে দলের বিষয়ে অতীতে নিয়মিত খোঁজখবর রাখার কথা জানিয়েছেন, ক্রিকেটারদের সামর্থ্য সম্পর্কে জ্ঞান রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন- তাতে প্রথম দুই ওয়ানডেতে হাথুরুকে পাশমার্ক দেয়াটা কঠিনই। চলতি বছর ওয়ানডে বিশ্বকাপ নিয়ে বড় স্বপ্ন দেখছে বাংলাদেশ। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ হার সে স্বপ্নের পালে হাওয়ার পরিবর্তে বড় ধাক্কাই দিয়েছে। সামনে ব্যস্ত সূচী রয়েছে লাল-সবুজের প্রতিনিধিদের। সেসব সিরিজে তাই সজাগ নজর থাকবে হাথুরুর কৌশলের দিকে। তার আগ পর্যন্ত প্রশ্নটা থেকেই যাবে- পারবেন তো হাথুরুসিংহে?



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭