ইনসাইড বাংলাদেশ

বার বার কেন আগুন লাগছে?


প্রকাশ: 05/03/2023


Thumbnail

কক্সবাজারের উখিয়ায় ৩টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অগ্নিকাণ্ডে চার শতাধিক ঘর পুড়ে ছাই হয়েছে। আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে ফায়ার সার্ভিসের ১০টি ইউনিট। তিন ঘন্টা চেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন ও উখিয়া থানা পুলিশ আগুন নিয়ন্ত্রণে যোগ দেয়। তবে হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। রোববার (৫ মার্চ) বিকেল ৩টার দিকে উখিয়ার পালংখালী ময়নার ঘোনায় ১১, ৯ ও ১০ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।

উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ আলী জানান, অগ্নিকাণ্ডে ৩টি ক্যাম্পের প্রায় সব ঘর পুড়ে গেছে। এ সংখ্যা চার শতাধিক। পরে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত জানা গেছে, এতে তিন ক্যাম্পে প্রায় দুই হাজার ঘর ভস্মীভূত হয়েছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ঘরে ঘরে গ্যাস সিলিন্ডার থাকায় আগুন বিপজ্জনক হয়ে ওঠে। বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে আগুন ছড়িয়ে থাকায় নিয়ন্ত্রণে আনা কঠিন হয়।


এর আগে আগে রাজধানীর সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকায় একটি বাণিজ্যিক ভবনে বিস্ফোরণের ঘটনায় তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে ১৪ জন। আহতদেরকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) ভর্তি করা হয়েছে। ধানমণ্ডি থানার অফিসার ইনচার্জ ইকরাম আলী এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

পুলিশ জানায়, বিস্ফোরণের পর তাদের পপুলার হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল। সেখানেই ৩ জনের মৃত্যু হয়। নিহতরা হলেন- শফিকুজ্জামান (৪৫), আব্দুল মান্নান (৬৫) ও তুষার (৩৫)। শফিকুজ্জামানের গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুরে। তিনি নিউ জেনারেশন নামে একটি প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে কর্মরত ছিলেন। আব্দুল মান্নান রাজধানীর লালবাগের বাসিন্দা। তিনি একই প্রতিষ্ঠানে পিয়ন হিসেবে কর্মরত ছিলেন। আর নিহত তুষারের গ্রামের বাড়ি নরসিংদীতে। তিনিও সেখানে কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

এ ঘটনায় আহত হওয়া নিউ জেনারেশন নামে ওই প্রতিষ্ঠানের ওয়ার্কশপ ইঞ্জিনিয়ার খাইরুল বলেন, হেমায়েতপুরের ফ্যাক্টরি থেকে অফিসে এসেছিলাম একটা কাজে। তারপর হঠাৎ বিস্ফোরণ ঘটে। চোখের সামনেই তিনজন মারা গেছেন। রোববার (৫ মার্চ) সকাল ১০টা ৫০ মিনিটের দিকে সায়েন্সল্যাব মোড় থেকে নিউমার্কেটের দিকে যাওয়ার পথে প্রিয়াঙ্গন শপিং মলের পাশের ভবনে এ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। 

কীভাবে এ বিস্ফোরণ হয়েছে সে সম্পর্কে এখনও নিশ্চিত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার  ড. খ. মহিদ উদ্দিন বলেছিলেন, বিস্ফোরণের কারণ সম্পর্কে এখনও কিছু জানা যায়নি।

অন্যদিকে সায়েন্সল্যাব এলাকার শিরিন ম্যানশনের ৩য় তলায় বিস্ফোরণের ঘটনা পরিদর্শনে এসেছিলো সেনাবাহিনীর বিশেষজ্ঞ দল। সায়েন্সল্যাবে বিস্ফোরণের ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে বিকাল সোয়া ৩টার দিকে ঘটনাস্থলে আসে সেনাবাহিনীর কেমিক্যাল ডিজাস্টার রেসপন্স টিম (সিডিআরটি) ও বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের দুটি পৃথক দল। তবে সেখানে বিস্ফোরক দ্রব্য ব্যবহারের আলামত পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে সেনাবাহিনীর বিশেষজ্ঞ দল। রোববার (৫ মার্চ) বিকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব তথ্য জানান বিশেষজ্ঞ দলের প্রধান কমান্ডিং অফিসার মেজর মো. কায়সার বারী।

মেজর কায়সার বারী বলেন, আমরা প্রাথমিকভাবে বিস্ফোরক শনাক্তকরণ যন্ত্র দিয়ে ঘটনাস্থলে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়েছি। প্রাথমিক পর্যবেক্ষণের পর আমরা মনে করছি, এ বিস্ফোরণ বিস্ফোরক দ্রব্যের মাধ্যমে সংঘটিত হয়নি।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে কায়সার বারী বলেন, এটা যেকোনো ধরনের বিস্ফোরণ হতে পারে। তবে প্রকৃত কারণ জানার জন্য আমাদের আরও তদন্ত করতে হবে। যদি বিস্ফোরণের ঘটনায় কোনো বিস্ফোরক দ্রব্য ব্যবহার করা হতো তাহলে আমাদের যন্ত্রের মাধ্যমে সেটা বুঝতে পারতাম। আমরা যেহেতু বিস্ফোরক শনাক্ত করি আমাদের যন্ত্র দিয়ে, তাই প্রাথমিকভাবে আমরা বলতে পারি এখানে বিস্ফোরক দ্রব্যের কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। এখানে বারুদ বা আইইডি ব্যবহারের কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। বিস্ফোরণের আসল কারণ আরও তদন্ত শেষে জানা যাবে বলেও জানান মেজর কায়সার বারী।

অন্যদিকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা প্রসঙ্গে উখিয়া ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনের ইনচার্জ এমদাদুল হক জানান, উখিয়ার ৯, ১০ ও ১১ নং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ভয়াবহ আগুন লেগেছিল। আগুন নিয়ন্ত্রণে প্রথমে আমাদের তিনটি ইউনিট কাজ শুরু করে। পরে ক্রমান্বয়ে তা বাড়তে থাকে। শেষ মুহূর্তে কক্সবাজার জেলার ফায়ার সার্ভিসের সব ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে, পাশাপাশি চট্টগ্রাম থেকেও ইউনিট আনা হয়।

ঘটনাস্থলে থাকা ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আগুনের তীব্রতা কিছুটা কমে এসেছে। তবে প্রচণ্ড ধোঁয়াচ্ছন্ন হয়ে গেছে ক্যাম্পের আশপাশ। এ কারণে কাজ করতে বেগ পাচ্ছেন ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা। ঘটনাস্থলে মোতায়েন রাখা হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বর্তমানে আগুন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। 

 

পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের তথ্যমতে, সবচেয়ে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে ২০২১ সালের ২২ মার্চ উখিয়ার বালুখালী এলাকার তিনটি (ক্যাম্প-৮, ৯ ও ১১) আশ্রয় শিবিরে। ভয়াবহ ওই অগ্নিকাণ্ডে ১০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা বসতি পুড়ে ছাই হয়েছিল। গৃহহীন হয়েছিল ৪৫ হাজার রোহিঙ্গা। অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে মারা যান ৬ শিশুসহ ১৫ জন রোহিঙ্গা। ওই আগুনের সূত্রপাত কোথা থেকে, এখনো তা জানা যায়নি।

বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি আশ্রয়শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা সাড়ে ১২ লাখ। এর মধ্যে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে আশ্রয় নেন ৮ লাখ রোহিঙ্গা।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭