ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

তুরস্কে ভূমিকম্প: আজও নিখোঁজদের খুঁজে ফিরছেন স্বজনেরা


প্রকাশ: 07/03/2023


Thumbnail

তুরস্ক-সিরিয়ায় শতাব্দীর ভয়াবহতম ভূমিকম্প আঘাত হানার এক মাস পূরণ হলো। গত ৬ ফেব্রুয়ারি স্থানীয় সময় ভোর ৪টা ১৭ মিনিটে তীব্র ভূকম্পনে দুলে ওঠে তুরস্কের দক্ষিণ এবং সিরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল। রিখটার স্কেলে সেই ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৮। এর কয়েক ঘণ্টা পরে ওই এলাকায় আবারও আঘাত হানে ৭ দশমিক ৬ মাত্রার আরেকটি ভূমিকম্প।

প্রলয়ংকরী সেই দুই ভূমিকম্পে পুরোপুরি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় দেশ দুটির বিশাল এলাকা। এতে প্রাণ হারান ৫১ হাজারেরও বেশি মানুষ। আহত হয়েছেন কয়েক লাখ। এছাড়া ঘরবাড়ি হারিয়ে তাঁবুকেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন অথবা অন্য শহরে চলে গেছেন আরও লাখ লাখ মানুষ।

শক্তিশালী এই ভূমিকম্পে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে বিস্তীর্ণ জনপদ। কেবল তুরস্কের দুর্গত এলাকাগুলো থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে ৫ লাখ ৩০ হাজার মানুষকে। তুর্কি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ভূমিকম্পের আঘাতে দেশটিতে অন্তত ১ লাখ ৭৩ হাজার ভবন ধসে পড়েছে অথবা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর ফলে তাঁবু, হোটেল অথবা অন্যান্য অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে থাকতে হচ্ছে ১৯ লাখেরও বেশি মানুষকে।

মৃত্যুর মুখ থেকে যাঁরা ফিরে এসেছেন, তাঁদের ভবিষ্যত এখন অনিশ্চিত। এসব মানুষের এখন সবচেয়ে বড় সমস্যা নিরাপদে বসবাস করা যায়, এমন কোনো জায়গা খোঁজা। এসব মানুষকে পুনর্বাসনে আরও ঠিক কত সময় লাগবে, তা ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের কেউই জানেন না।

এদিকে তুরস্কের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনাবিষয়ক সংস্থা আফাদ জানাচ্ছে, তুরস্কে যেসব অঞ্চলে ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে, সেসব এলাকার প্রায় ২০ লাখ বাসিন্দা বর্তমানে দেশের অন্যত্র বন্ধু–স্বজনদের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ছেড়ে যাঁরা অন্যত্র যেতে চান, তাঁদের উড়োজাহাজ ও ট্রেনে কোনো ভাড়া দিতে হবে না।

৬ ফেব্রুয়ারির সেই ভূমিকম্পে তুরস্কে ১১টি প্রদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। এর এক মাস পেরিয়ে গেলেও মৃতের সংখ্যা আরও বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কারণ, আজও অনেক ভুক্তভোগীকে শনাক্ত করা যায়নি। নিহত হিসেবে সরকারি খাতায় নাম ওঠেনি অনেকের। স্বজনেরা আজও তাদের হারানো প্রিয়জনদের খুঁজে ফিরছেন।

ভূমিকম্পের পর থেকে এখনো কতজন নিখোঁজ রয়েছেন সে বিষয়ে তুরস্কের বিচার মন্ত্রণালয়ের কাছে জানতে চেয়েছিল জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়েচে ভেলে। তবে তারা এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।

ভূমিকম্প আঘাত হানার পর বেঁচে যাওয়া ভুক্তভোগীদের শোক ক্রমেই রূপান্তরিত হয় ক্ষোভে। মানুষ প্রশ্ন তুলতে শুরু করে, কেন এত ভবন ধসে পড়লো। সেগুলো তো ভূমিকম্পপ্রতিরোধী হওয়ার কথা ছিল। এর জন্য সরকারের দুর্নীতি ও কর্তৃপক্ষের অবহেলাকে দায়ী করেন ভুক্তভোগীরা।

অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, নির্মাণ সংস্থাগুলো যথাযথ বিল্ডিং কোড মানেনি। আর তা জেনেশুনেই ছাড় দিয়েছে সরকার। এ নিয়ে তীব্র বিতর্কের মুখে শেষপর্যন্ত নড়েচড়ে বসে তুর্কি প্রশাসন। তুরস্কে ভবন নির্মাণে দুর্নীতির অভিযোগে এ পর্যন্ত অন্তত ২৩৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, ৩৩০ জন বিচার বিভাগীয় পর্যবেক্ষণে রয়েছেন এবং হেফাজতে রয়েছেন চারজন।

এছাড়া ২৭০ জন সন্দেহভাজনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। এদের মধ্যে পাঁচজন বিদেশে রয়েছেন, এরই মধ্যে মুক্তি পেয়েছেন ৮২ জন এবং মারা গেছেন ৩২ জন।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭