ইনসাইড টক

‘৭ই মার্চের ভাষণটি বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবনে গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক’


প্রকাশ: 07/03/2023


Thumbnail

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেছেন, ৭ই মার্চ কার্যত স্বাধীনতা ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু খুবই কূটনৈতিকভাবে স্বাধীনতার কথা বলা হয়েছিল। সব কথা বলেও যেন বলা হয়নি, এমন একটি গল্প করে বঙ্গবন্ধু সেদিন স্বাধীনতার কথা উচ্চারণ করেছিলেন। ৭ই মার্চের ভাষণটিই বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। 

বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ, আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বাংলা ইনসাইডার এর সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় তিনি এসব কথা বলেন। পাঠকদের জন্য ড. আতিউর রহমান এর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বাংলা ইনসাইডার এর নিজস্ব প্রতিবেদক শান্ত সিংহ।

ড. আতিউর রহমান বলেন, ৭ই মার্চের ভাষণেই তাঁর সুগভীর দার্শনিক চিন্তা ও গণমুখী নেতৃত্বের সর্বোচ্চ নান্দনিক প্রকাশ ঘটেছিল। এই ভাষণটির মতো এমন চিত্তাকর্ষক ভাষণ রাজনৈতিক ইতিহাসে খুবই বিরল। ৭৪ শতাংশ তরুণের কাছে বঙ্গবন্ধু মানেই ৭ মার্চের ভাষণ। এতে তিনি শুধু একটি জাতিকে তার চলার পথের দিশাই দেননি, পাশাপাশি তাঁর সারা জীবনের রাজনৈতিক সংগ্রামের দুঃখ, বঞ্চনা এবং ভবিষ্যতের রূপরেখাও তুলে ধরেছেন এক অবাক করা কাব্যিক মাধুর্যতায়। 

তিনি বলেন, সেদিন মুক্তোর মতো ঠিকরে বের হয়ে এসেছিল জাতির পিতার নান্দনিক ব্যক্তিত্বের বৈশিষ্ট্যগুলো। অতুলনীয় আত্মপ্রত্যয়ে তুলে ধরেছেন ২৩ বছরের বঞ্চনা ও সংগ্রামের ইতিহাস। অপূর্ব ভাষাভঙ্গি, কণ্ঠের ওঠানামা, অঙ্গুলি হেলন, দাঁড়াবার ভঙ্গি, ঘাড় ফিরিয়ে জনতার দিকে ফিরে ফিরে তাকানো, একবার চশমা পড়া, আবার চশমা খুলে ফেলা, মাঝে মাঝে নিজের সাথেই কথা বলা, ফের হুঙ্কার, জনতারও ফিরতি হুঙ্কার, সমুদ্রে ঝড় ওঠার মতো ধীরে ধীরে পুরো জনতাকে মুক্তির অভিমুখে এক বিষ্ময়কর অভিযাত্রায় এগিয়ে নিয়ে যাওয়া- এই সব মিলিয়ে এই ঐতিহাসিক ভাষণটি নান্দনিক বৈশিষ্ট্যের বিচারে হয়েছে অনন্য।

তিনি আরও বলেন, এই ভাষণে মুক্তির চূড়ান্ত বার্তাটি তিনি দিয়েছিলেন সুকৌশলে, এক কাব্যময় ভাষায়। এককভাবে স্বাধীনতার ঘোষণার অপবাদ কাঁধে না নিয়ে তিনি ঠিকই ‘যার যা আছে তাই নিয়ে’ প্রতিরোধ করার আহ্বান জানিয়েছিলেন। এই বার্তা যথার্থই অনুধাবন করেছিলেন বাংলার জনগণ। তাই তরুণ-তরুণীরা যুদ্ধের প্রস্তুতি তখন থেকেই নিতে শুরু করেন। একই সঙ্গে চলেছিলো অসহযোগ আন্দোলন। স্বাধীন দেশের অনুরূপ প্রশাসন তিনি চালাচ্ছিলেন একটি গণমুখী চিন্তার প্রতিফলন ঘটিয়ে। 
 
ড. আতিউর রহমান বলেন, বৈশ্বিক স্বীকৃতি ও সহানুভূতি তৈরির ক্ষেত্রেও এই ভাষণ নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে। পাকিস্তানী নেতা ভুট্টোর সমালোচনা করলেও তিনি বলেছিলেন জাতীয় পরিষদে একজনও পাকিস্তানী নেতা ন্যায্য কথা বললে সে কথা মন দিয়ে শুনতে তিনি প্রস্তুত। শাসনতন্ত্র নিয়ে কাজ আর অসহযোগ আন্দোলনের মধ্যেও সামরিক জান্তার সাথে আলোচনা চালিয়েছেন প্রচণ্ড ধৈর্যের পরিচয় দিয়ে। গণতান্ত্রিক বঙ্গবন্ধুর এই অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সহনশীলতার নীতির কারণেই তাঁর এবং স্বাধীন বাংলাদেশের পক্ষে বৈশ্বিক জনমত তৈরি হয়েছিলো। 

তিনি বলেন, ন্যায়ের প্রশ্নে বঙ্গবন্ধুর আপোসহীনতাও স্পষ্টতর হয়েছে এ ভাষণে। পাকিস্তানের অ্যাসেম্বলিতে যোগ দেয়ার জন্য দিয়েছিলেন চার শর্ত। যেগুলো হলো- সামরিক আইন প্রত্যাহার করতে হবে। সেনা সদস্যদের ব্যারাকে ফেরত নিতে হবে। হত্যা ও নির্যাতনের তদন্ত করতে হবে এবং নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। সেদিন তিনি বলেছিলেন, “আজ বাংলার মানুষ মুক্তি চায়, বাংলার মানুষ বাঁচতে চায়, বাংলার মানুষ তার অধিকার চায়।” এই আকাঙ্ক্ষার আলোকেই রচিত হয়েছে প্রজাতন্ত্রের সংবিধান। আর ঐ সংবিধানই জনগণকে এই প্রজাতন্ত্রের প্রকৃত মালিক বানিয়েছে। এই সংবিধানই আমাদের অধিকারভিত্তিক অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের অনুপ্রেরণার প্রধান উৎস। ঐ ভাষণেই তিনি বাঙালির স্বাধীনতার রূপরেখা আঁকেন এই বলে যে “এদেশের মানুষ অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক মুক্তি পাবে।” সকল বাঙালির মনের কথা, মুখের কথা এবং প্রাণের কথা এমন করে আত্মস্থ করতে পেরেছিলেন এবং তাদের চাওয়ার আলোকে এই অমর ভাষণটি দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭