ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

অর্থনীতির পর এবার রাজনৈতিক চাপে পাকিস্তান


প্রকাশ: 08/03/2023


Thumbnail

পাকিস্তানের রিজার্ভ নেমে গেছে রেকর্ড পরিমাণ নিচে। ধাক্কা সামলাতে দেশটির সরকার আইএমএফসহ বিভিন্ন সংস্থা ও দেশের দ্বারস্থ হচ্ছে ঋণ সহায়তা পেতে। তবে কৃষি, জ্বালানি ও শিল্প খাতে ভর্তুকি ও কর অব্যাহতির শর্তে আইএমএফের সঙ্গে ৭০০ কোটি ডলারের ঋণ আলোচনা এখনও থমকে আছে। যদিও দেশটির সরকার দাতা সংস্থাটির সব শর্ত মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিয়ে এরই মধ্যে তা বাস্তবায়নে নানা ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে, সংসদে পাস করিয়ে নিয়েছে বিশেষ বিল।

তবে আইএমএফ বলেছে, আমদানি ও রপ্তানি ব্যয়ের মধ্যে ফারাক কমিয়ে আনতে না পারলে ঋণ নিয়ে কোনো লাভ হবে না পাকিস্তানের। আর এ পরিস্থিতি উত্তরণের সম্ভাবনা না থাকলে তারা ঋণ সহায়তাও দিতে পারবে না।

তবে অর্থনৈতিক সংকট থেকে উত্তরণের আগেই ফের বড় ধরনের রাজনৈতিক সংকটে পড়তে যাচ্ছে দেশটি। দফায় দফায় চেষ্টার পরও দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে গ্রেপ্তারে ব্যর্থ হয়েছে সরকার। সবশেষ গত রবিবার ইমরানের জামান পার্কের বাসভবন থেকে খালি হাতি ফিরেছে পুলিশ। পিটিআইয়ের কর্মী-সমর্থকরা তাদের ইমরানের বাড়ির ভেতরেই ঢুকতে দেয়নি।

এর মধ্যে শাহবাজ শরিফ সরকারের বড় জোটসঙ্গী পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) বলছে, সিন্ধু প্রদেশের বন্যাদুর্গতদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণ করা না হলে তাদের পক্ষে জোট সরকারে থাকা খুবই কঠিন হয়ে যাবে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ইমরান খানের চাপে এমনিতেই দিশেহারা শাহবাজ শরিফ সরকার। এর মধ্যে আইএমএফের শর্তের বিরুদ্ধে গিয়ে জোটসঙ্গী দলের শর্ত মানা সহজ হবে না শাহবাজ শরিফের জন্য। আবার পিপিপিকে ছেড়ে দিলে ক্ষমতায় টিকে থাকাও চ্যালেঞ্জ হবে।

পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যমগুলোর খবর, তোশাখানা মামলার অভিযোগ গঠনের শুনানিতে টানা অনুপস্থিত থাকায় গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ইমরান খানের বিরুদ্ধে অজামিনযোগ্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে ইসলামাবাদের সেশন কোর্ট। সেই পরোয়ানা কার্যকর করতেই গতকাল তার বাসভবনে যায় পুলিশ। তবে ইমরান খান গ্রেপ্তার এড়িয়ে গেছেন। দলীয় প্রধানকে গ্রেপ্তারে পুলিশ আসার খবরে পিটিআই নেতাকর্মীরা ইমরানের বাসভবনের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। সে সময় পুলিশকে জানানো হয় যে, ইমরান খান বাসভবনে নেই। যদিও এর আগে ইসলামাবাদের পুলিশ প্রধান বলেছিলেন, ‘ইমরান খানকে গ্রেপ্তার ছাড়া খালি হাতে ফিরে যাব না।’ তবু এখন পর্যন্ত তারা ইমরান খানকে গ্রেপ্তার করতে পারেননি। পিটিআই নেতাকর্মীদের তীব্র বিক্ষোভের মুখে দুপুর দেড়টার দিকে ইমরান খানের বাসভবন ত্যাগ করে পুলিশ।

ইমরান খান তাহলে কোথায় আছেন? দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত এ নিয়ে তুমুল জল্পনা-কল্পনা চললেও, বিকেল ৫টার একটু আগে নিজ বাসভবন থেকে একটি টেলিভিশন পার্টি অনুষ্ঠানে ভাষণ দেন ইমরান খান। সে সময় ইমরান খান তার ডাকে সরকারবিরোধী বিক্ষোভে অংশ নেওয়ার জন্য সমর্থকদের ধন্যবাদ জানান।

কিন্তু এরপরই রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ও কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ইমরান খানের উসকানিমূলক বক্তব্য টিভিতে সরাসরি সম্প্রচারের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে দেশটির ইলেকট্রনিক মিডিয়া রেগুলেটরি অথোরিটি (পিইএমআরএ)। ইমরান খানের রেকর্ড করা বক্তব্য সম্প্রচারের ওপরও নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে পিইএমআরএ।

এদিকে এর মধ্যেই গতকাল দেশটির সংবাদমাধ্যম ডর এক প্রতিবেদনে বলেছে, শাহবাজ সরকারের জোটসঙ্গী পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) চেয়ারম্যান ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিলওয়াল ভুট্টো জারদারি সরকার থেকে বেরিয়ে যাওয়ার হুমকি দিয়েছেন। করাচিতে গমবীজে ভর্তুকি প্রদান প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে বিলওয়াল ভুট্টো বলেছেন, সিন্ধু প্রদেশের বন্যাদুর্গতদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণ করা না হলে তার দলের পক্ষে জোট সরকারে থাকা খুবই কঠিন হয়ে যাবে। এ সময় বিলওয়াল ভুট্টো পাকিস্তানের ডিজিটাল আদমশুমারির অনুশীলন নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।

তিনি বলেন, একটি প্রদেশে ভিন্ন আদমশুমারি থেকে পাওয়া ভোটারদের তথ্যের ভিত্তিতে ভোট হবে, অন্যান্য প্রদেশে ‘ত্রুটিপূর্ণ’ ডিজিটাল আদমশুমারির তথ্যের ভিত্তিতে ভোট হবে এটা গ্রহণযোগ্য নয়।

পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশে পিপিপির সরকার রয়েছে। গত বছরের ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সহায়তা দেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে প্রাদেশিক সরকার। তাই ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সহায়তার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের দেওয়া প্রতিশ্রুতির পূরণ পিপিপির জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।

বিলওয়াল ভুট্টো বলেন, ‘আমরা বিষয়টি (বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সহায়তা দেওয়া) পার্লামেন্টে তুলব। কেন্দ্রীয় সরকারকে প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে হবে। তা না হলে পিপিপির পক্ষে জোট সরকারে থাকা খুবই কঠিন হয়ে যাবে।’

পার্লামেন্টে বিরোধী জোটের আনা অনাস্থা প্রস্তাবে হেরে গত বছরের ৯ এপ্রিল বিদায় নেয় ইমরান খানের পিটিআই সরকার। ১১ এপ্রিল পাকিস্তানের নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন পাকিস্তান মুসলিম লিগ নওয়াজের (পিএমএল-এন) সভাপতি শাহবাজ শরিফ। ১৯ এপ্রিল তিনি ৩৩ সদস্যের মন্ত্রিসভা ঘোষণা করেন। এ সরকারের অন্যতম জোটসঙ্গী পিপিপি।

তবে বিলওয়ালের শর্ত মানা সহজ হবে না শাহবাজ শরিফের জন্য। কারণ ভঙ্গুর অর্থনীতি সচল করতে যে বিপুল ঋণ প্রয়োজন তা পেতে এরই মধ্যে আইএমএফের সব শর্ত মেনে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পাকিস্তান সরকার। আর সেই শর্ত অনুযায়ী সরকার বিদ্যুতের ভর্তুকি বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ ছাড়া রপ্তানিজাত কাঁচামালের ওপর কর, বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি এবং গ্যাসের ওপর শুল্ক আরোপের চিন্তাভাবনাও করেছে। এ অবস্থায় বিলওয়ালের শর্ত মানার অর্থ হচ্ছে আইএমএফের শর্তের বিরোধিতা করা। ক্ষমতায় থাকতে শাহবাজ শরিফ বিলওয়ালের কথা শুনলে দেশের সংকট আরও বাড়বে। তার সুবিধা নেওয়ার জন্য পিটিআই যে ওত পেতে বসে আসে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এখন দেখার বিষয় পিএমএল-এন কীভাবে নতুন ও যুগপৎ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭