ইনসাইড বাংলাদেশ

‘আমরা কেউই নিরাপদ নই’


প্রকাশ: 08/03/2023


Thumbnail

একটি দূর্ঘটনার রেশ না কাটতেই আবারও মৃত্যুপুরী রাজধানী। মঙ্গলবার রাজধানীর গুলিস্তানে একটি ৭ তলা ভবনে বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৮ জন নিহত হয়েছেন। এছাড়া গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন শতাধিক মানুষ। আহতদের মধ্যে রয়েছেন- বাসযাত্রী, পথচারী, বেসরকারি ব্যাংকের কয়েকজন কর্মকর্তাসহ স্থানীয় বেশ কয়েকজন। এখন পর্যন্ত বিস্ফোরণের মূল কারণ জানা যায়নি। আর কত তলা থেকে বিস্ফোরণ হয়েছে তাও জানা যায়নি।

বিগত তিন দিনের মধ্যে রাজধানীর দুটি ভবনে ঘটলো ভয়াবহ বিস্ফোরণ। ঠিক ১৫ দিন আগে গুলশানের একটি বাড়িতেও বিস্ফোরণের পর লেগেছিল আগুন। আজ থেকে দুই বছর আগে মগবাজারে একটি চারতলা ভবন ধসে পড়েছিল বিস্ফোরণে, সেখানে নিহত হয়েছিলেন ১২ জন। এর বাইরেও ছোটখাটো বেশ কয়েকটি বিস্ফোরণ ঘটেছে সাম্প্রতিক সময়গুলোতে।

ঘনবসতিপূর্ণ ঢাকায় এসব বিস্ফোরণের কারণ হিসেবে কখনও কখনও জমে থাকা গ্যাসকে চিহ্নিত করা হয়েছে। আরও কিছু কারণও বেরিয়ে আসছে। তবে এসব প্রতিকারে নেয়া হচ্ছেনা কোনো পদক্ষেপ।

ফায়ার সার্ভিসের সাবেক মহাপরিচালক মো. সাজ্জাদ হোসাইন বলছেন, বাংলাদেশের রাজধানী এখন ‘বিস্ফোরণোন্মুখ’ হয়ে আছে।

এই কথার ব্যাখ্যা হিসবে তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, রাজধানী শহর গড়ে উঠেছে একদম অপরিকল্পিতভাবে। ভূগর্ভস্থ পয়োবর্জ্য লাইন, বিদ্যুৎ লাইন, গ্যাসের লাইন- কোনটা কোনদিক দিয়ে গেছে তা সঠিকভাবে কারও জানা নেই।

যে কোনো সময় যে কোনো স্থানে দূর্ঘটনা ঘটতে পারে। এ মুহূর্তে বড় ভূমিকম্প হলে অর্ধেক মানুষই পুড়ে মারা যাবে। এটার মূল কারণ ‘ম্যাপিং’ না থাকাকে দায়ী করেন তিনি।

প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে ভূমিকম্পকে বড় ধরনের দুর্যোগ এই কারণে বলা হয়, কেননা এতে অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকিও থাকে, আর উদ্ধারকারী সংস্থার দপ্তর কিংবা হাসপাতাল ক্ষতিগ্রস্ত হলে তা ভয়াবহ রূপ নেয়।

ঢাকা শহরে গ্যাস, পানি, পয়োবর্জ্যের পাশাপাশি অনেক স্থানে বিদ্যুত, টেলিফোন ও ইন্টারনেট লাইন রয়েছে ভূগর্ভে। এদের এক সংস্থা একটির কাজ করে থাকে, আর তাদের মধ্যে সমন্বয়হীনতা নিয়ে আলোচনা বহু দিনের।

এই প্রসঙ্গে সাজ্জাদ হোসাইন বলেন, অগ্নিপ্রতিরোধ ও নির্বাপন আইন হয়েছে ২০০৩ সালে। তার আগে নির্মিত ভবনগুলোর অবস্থা জানার জন্য ‘ম্যাপিং’ প্রয়োজন।

“ম্যাপিং হলে বোঝা যাবে, আমার পায়ের নিচে গ্যাস, পানি, বিদ্যুত, স্যুয়ারেজ লাইন কীভাবে আছে, কতটুকু ঝুঁকিতে আছে। এসব জানা গেলে ত্বরিত ব্যবস্থা নেওয়া সহজ হবে, দুর্ঘটনা কমে আসবে। দূর্ঘটনা এড়াতে এখন ম্যাপিং করাটা অত্যন্ত জরুরি। তা না হলে আমরা কেউ নিরাপদ না।”

নগর পরিকল্পনাবিদ আকতার মাহমুদ গণমাধ্যমকে বলেন, ঢাকা শহর এ ধরনের বিস্ফোরণের ঝুঁকিতে আছে। বিশেষ করে পুরান ঢাকায় এই ঝুঁকি বেশি।

“ঘনবসতিপূর্ণ হওয়ায় পুরান ঢাকায় ঝুঁকি অনেক বেশি। সেখানে পুরোনো ইউটিলিটি সার্ভিস, তার সঙ্গে মিশ্র ধরনের এমন সব পণ্যের গুদাম আছে। দাহ্য, বিপজ্জনক পদার্থ সেখানে গুদামজাত করা হয়। রাস্তাঘাটও সরু, একবার কোনো ঘটনা ঘটলে উদ্ধার চালানো কঠিন।”

কেন এত বিস্ফোরণ?

মঙ্গলবারের দূর্ঘটনার কারণ এখনও জানা যায়নি। সায়েন্সল্যাব, নারায়ণগঞ্জে মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনায় দেখা গেছে গ্যাস জমে এসব দূর্ঘটনা হয়েছে।

একের পর এক বিস্ফোরণ ঘটাকে ‘উদ্বেগজনক’ বলছেন ফায়ার সার্ভিসের সাবেক উপ-পরিচালক (অপারেশন্স) দেবাশীষ বর্ধন।

তিনি বলেন, “আমার ধারণা, বিভিন্ন ধরনের গ্যাস থেকেই এই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। (মঙ্গলবার) যে ভবনটিতে বিস্ফোরণ ঘটেছে তার আন্ডারগ্রাউন্ড ছিল, সেখানে গ্যাস জমা হয়ে থাকতে পারে।”

সাম্প্রতিক সময়ে কয়েকটি বিস্ফোরণের উৎস হিসেবে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র বা এসিকে চিহ্নিত করা হয়।

বাংলাদেশে কতগুলো এসি সচল রয়েছে, তার সঠিক তথ্য জানা যায়নি। তবে উৎপাদক এবং বিক্রেতাদের তথ্যের বরাত দিয়ে বুয়েটের যন্ত্র কৌশল (মেকানিক্যাল) বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. আবদুল লতিফ হেলালী বলেন, সারাদেশে অন্তত ৮ থেকে ৯ লাখ এসি এবং প্রায় ৩০ লাখের বেশি রেফ্রিজারেটর ব্যবহার করা হয়। অথচ এত সংখ্যক যন্ত্রপাতি মেরামত করার মতো দক্ষ জনবল বাংলাদেশে নাই।

ভবন তৈরিতে যেসব উপকরণ ব্যবহার হচ্ছে, তা কতটা মানসম্মত তাও দেখার সময় এসেছে বলে মন্তব্য করেন ফায়ার সার্ভিসের সাবেক মহাপরিচালক সাজ্জাদ হোসাইন।

দূর্ঘটনার হার বাড়লেও তা প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা না দেখার কথা বলেন নগর পরিকল্পনাবিদ আকতার মাহমুদ।

নেই উদ্যোগ

একের পর এক দূর্ঘটনা ঘটছে, কিন্তু সমস্যা সমাধানের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। সরকারি তদারকি থাকলেও তা ‘দুর্বল’ বলে মন্তব্য করে সবার সচেতন হওয়ার উপর জোর দিচ্ছেন আকতার মাহমুদ।

“শুধু সরকারি উদ্যোগ এবং তদারকি দিয়ে এ ধরনের দূর্ঘটনা এড়ানো যাবে না। ঝুঁকি কমানো কঠিন হবে। আমাদের সরকারি তদারকি খুবই দুর্বল। দুর্ঘটনা রোধে ভবনের মালিক বা ব্যবহারকারী তাদের সচেতন হওয়া খুবই জরুরি।”



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭