ইনসাইড পলিটিক্স

পঞ্চগড়ের আহমদিয়া সম্প্রদায়: বিএনপির তদন্ত কমিটি নতুন রহস্য


প্রকাশ: 08/03/2023


Thumbnail

পঞ্চগড়ে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের (কাদিয়ানি) সালানা জলসাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ হয়েছে। এতে পুলিশসহ অন্তত ৩০ ব্যক্তি আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আরিফ হোসেন (২৫) নামে এক যুবক গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন। শুক্রবার (৩ মার্চ) প্রায় ৪ ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষে পঞ্চগড় শহর রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছিল।

এদিকে পঞ্চগড়ের এই আহমদিয়া সম্প্রদায়ের ওপর হামলার ঘটনায় নিরপেক্ষ তদন্ত করতে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিএনপি। দলটির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রমের নেতৃত্বে এ সদস্যের কমিটি করা হয়। মঙ্গলবার (৭ মার্চ) বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

অন্যদিকে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের (কাদিয়ানি) সালানা জলসাকে কেন্দ্র করে যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে- তা নিয়ে বিএনপির নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠনের বিষয়টিকে বিএনপির নতুন কোনো কৌশল বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেসকরা। তাঁরা মনে করছেন, বিএনপি সাম্প্রদায়িক ইসলাম ভিত্তিক রাজনীতিকে প্রধান্য দিয়ে থাকে। জানা গেছে, আহমদিয়া (কাদিয়ানি) সম্প্রদায়ের ওপর হামলার সময় বিএনপির স্থানীয় নেতা-কর্মীরাও ইসলামপন্থী আলেমদের সাথে যুক্ত ছিল। এ ঘটনায় বিএনপি তদন্ত কমিটি করার পেছনে নিশ্চয়ই কোনো রহস্য রয়েছে। এটি বিএনপির নতুন কোনো রাজনৈতিক কৌশল।       

এদিকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সোমবার (৬ মার্চ) রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সম্প্রতি পঞ্চগড়ে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের ওপর হামলার বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মন্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ করা হয়। প্রকৃতপক্ষে সরকার জনগণের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের চলমান আন্দোলন থেকে জনগণের দৃষ্টি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য এ ভয়ানক হীন সাম্প্রদায়িক সংঘাত সৃষ্টি করছে।

বিজ্ঞপ্তিতে মির্জা ফখরুল বলেন, এ ঘটনায় সরকার এখন পর্যন্ত প্রায় ৯০ জন বিএনপি সমর্থককে গ্রেপ্তার করেছে, যা সম্পূর্ণ বেআইনি। রেলমন্ত্রী সুজন পঞ্চগড় সফরে গেলে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের সদস্যরা তাকে স্পষ্ট জানান যে, আক্রমণকারীরা তার সঙ্গেই রয়েছেন। সভা মনে করে, এ ঘটনা প্রমাণ করে সরকারের হীন পরিকল্পনা অনুযায়ী আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের দ্বারা এ সাম্প্রদায়িক হামলা সংঘটিত হয়েছে। এ সরকার অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করার পর থেকেই ধারাবাহিকভাবে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর একের পর এক হামলা, অগ্নিসংযোগ ও লুটের ঘটনা ঘটছে। যা এ অবৈধ সরকারের ক্ষমতায় অবৈধভাবে টিকে থাকার নীল নকশার অংশ। এ বিষয়ে নিরপেক্ষ তদন্ত করার জন্য দলের ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি দল অতি দ্রুত পঞ্চগড়ে সফর করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

জানা গেছে, পঞ্চগড়ে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের (কাদিয়ানি) সালানা জলসাকে কেন্দ্র করে যে সংঘর্ষ হয়েছে তা হয়েছিল শুক্রবার (৩ মার্চ)। এ সময় বিক্ষোভকারীরা শহরে অবস্থিত আহমদিয়া সম্প্রদায়ের বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বাড়ি-ঘরে অগ্নিসংযোগ করে। এছাড়া ট্রাফিক পুলিশ বক্স ও ট্রাফিক অফিসে মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশের পাশাপাশি বিজিবি ও র‌্যাব মোতায়েন করা হয়েছিল। পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী জুমার নামাজের পর স্থানীয় বিভিন্ন মসজিদের শত শত মুসল্লি শেরেবাংলা নগর পার্ক এলাকায় অবস্থান নিয়ে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের সালানা জলসা বন্ধের দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন।  এ সময়  বিভিন্ন এলাকা থেকে মুসল্লিরা এসে পঞ্চগড়-বাংলাবান্ধা জাতীয় মহাসড়কে অবস্থান নেন এবং যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেন। এক পর্যায়ে তাদের অবস্থান বিক্ষোভে রূপ নেয়। এ সময় পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে লাঠিচার্জ করে। বিক্ষুদ্ধ লোকজনও পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করলে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করে। এ সময় সংঘর্ষে পুলিশসহ অন্তত ৩০ ব্যক্তি আহত হন এবং ১ জন নিহত হন। পরে  এ ঘটনায় জরিত থাকার অভিযোগে পুলিশ বেশ কয়েকজন স্থানীয় বিএনপি নেতা-কর্মীকেও গ্রেপ্তার  করে।   

পরে হত্যা-নির্যাতন করে কাদিয়ানিদের অমুসলিম ঘোষণার দাবি স্তব্ধ করা যাবে না বলে জানিয়েছে ইসলামী সংগঠনগুলোর নেতৃবৃন্দ। একইসঙ্গে পঞ্চগড়ে নাগরিক হত্যার দায় সরকারের বলে জানিয়েছে দেশের সংগঠনগঠনগুলোর নেতৃস্থানীয় আলেম সমাজ। রোববার (৫ মার্চ) কাদিয়ানি সম্প্রদায়কে অমুসলিম ঘোষণার দাবি এবং পঞ্চগড়ে ঘটে যাওয়া ঘটনা নিয়ে দেশের শীর্ষ ১০০ জন আলেম এক বিবৃতিতে এসব কথা জানান। 

বিবৃতিতে আলেমগণ বলেন, কাদিয়ানি সম্প্রদায় ইসলামের মৌলিক দু’টি বিশ্বাসের একটি তথা মুহাম্মাদ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শেষ নবী হওয়ার দাবিকে অস্বীকার করে। খতমে নবুওয়াত সংক্রান্ত তাদের বিশ্বাস বিশ্ববিদিত। ফলে বিশ্বজুড়ে সকল মুসলিমদের কাছে তারা কাফের হিসেবে স্বীকৃত। বাংলাদেশেও সকল ধারার সকল মুসলমান তাদেরকে অমুসলিম বলে মনে করে এবং তাদের জন্য সংখ্যালঘু সংক্রান্ত বিধি-বিধান সাব্যস্ত করার দাবি করে। এখানে একটি বিষয় পরিস্কার করা দরকার। সংখ্যালঘু অমুসলিম জনগোষ্ঠি হিসেবে কাদিয়ানি সম্প্রদায়ের প্রতি আমাদের কোন রাগ-বিরাগ নাই। তাদের কোন ধর্মীয় আচার-প্রথা ও আয়োজনের প্রতি আমাদের কোন বিরুপ মনোভাব নাই।

আলেমগণ বলেন, ‘কিন্তু সমস্যার জায়গা হলো, তারা যখন নিজেদেরকে মুসলিম দাবি করে দেশের কোটি-কোটি মুসলমানের ভেতরে অনুপ্রবেশ করতে যায়, যখন তারা নিজেদের মুসলিম দাবি করে কোটি কোটি জনতার আত্মপরিচয়ে বিভ্রান্তি ঘটায়, যখন তারা তাদের উপসানালয়, উৎসব, পার্বন ও আচার-প্রথাকে মুসলমানদের পরিভাষায় ব্যক্ত করে দ্বিধা-সংশয় তৈরি করে।’

এসব বিষয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বিএনপি তদন্ত কমিটির নামে নতুন কোনো ফন্দি তৈরি করার চেষ্টা করছে। বিএনপি ইসলামপন্থী দলগুলোকে বরাবরই আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে আসছে। পঞ্চগড়ের ঘটনার দিনও স্থানীয় বিএনপির নেতা-কর্মীরা আলেমদের সাথে যুক্ত হয়ে আহমদিয়াদের ওপর হামলা চালিয়েছে- যা গণমাধ্যমেও প্রকাশিত হয়েছে। এখন বিএনপি নিজেদের দোষ ঢাকার জন্য সরকারের ওপর দোষ চাপাতেই তদন্ত কমিটির নামে একটি ধুম্রজাল সৃষ্টি করার পায়তারা করছে। বিএনপি যা মনে করছে- তা কখনও সফল হবার নয়। স্থানীয় জনগণ বিষয়টি সম্পর্কে অবগত। স্থানীয় পুলিশ স্থানীয় জনসাধারনসহ প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতেই বেশ কিছু বিএনপি কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে। তবে বিএনপির এ তদন্ত কমিটি গঠন রহস্যে ঘেরা। এখন দেখার বিষয় হচ্ছে- আহমদিয়াদের ওপর হামলার বিষয়ে বিএনপির তদন্ত কমিটি গঠন করে নতুন কি রহস্য সৃষ্টি করতে চাইছে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭