ইনসাইড বাংলাদেশ

ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের টানাপোড়ন কি প্রভাব ফেলবে দেশের নির্বাচনে?


প্রকাশ: 09/03/2023


Thumbnail

দীর্ঘদিন পর ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের মধ্যে টানাপোড়ন তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর রাশিয়ার পক্ষের ভারতের সুস্পষ্ট এবং খোলাখুলি অবস্থান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে বিব্রত করেছে। অনেকেই মনে করছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যে নিষেধাজ্ঞা তা কার্যকর হচ্ছে না ভারতের মত প্রভাবশালী এবং অধিক জনবহুল গণতন্ত্রের একটি রাষ্ট্রের কারণে। এতে করে ভারত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দেশে দেশে যে অভিন্ন কূটনীতিক নীতি অনুসরণ করে চলত তাতে কি ছেদ পরতে যাচ্ছে? বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও কি ভারত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন আর অভিন্ন কৌশল নেবে না? তাহলে নির্বাচনে কার ভূমিকা এখন কি হবে? এসব প্রশ্ন এখন কূটনীতিক অঙ্গনে আলোচিত হচ্ছে।

গত বছর ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক আগ্রাসন বিশ্বের ভূ-রাজনীতির চিত্র পুরোপুরি পাল্টে দিয়েছে। অনেক বন্ধু দেশের মধ্যে তৈরি হচ্ছে মতবিরোধ আবার স্বার্থের কারণে অনেক দেশ বনে গেছে মিত্র। ভারত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধুত্ব ছিল সবসময় প্রকাশ্য। বিভিন্ন সময় মার্কিন প্রেসিডেন্টগন ভারত সফর করেছেন এবং তাদের বন্ধুত্বের জানান দিয়েছেন।

দুই দেশের বন্ধুত্বের একটি প্রধান কারণ হল চীন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে চীনের সম্পর্কের টানাপোড়ন অনেক আগে থেকেই এবং পারমাণবিক শক্তিধর এই দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা দিন দিন বেড়েই চলেছে। সেইসাথে অরুনাচল সীমান্তে ভারত ও চীনের সেনাদের সংঘর্ষ দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের অবনতির চাক্ষুষ জানান দেয়। তাই বিশাল ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে ক্ষমতার ভারসাম্য বজায় রাখতে এবং চীনের আধিপত্যবাদী উচ্চাকাঙ্ক্ষার লাগাম টানতে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের মধ্যে সুসম্পর্ক অত্যান্ত গুরুত্বপুর্ন ভূমিকা পালন করে আসছে।

কিন্তু প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আফগানিস্তান থেকে মার্কিন বাহিনী প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত এবং পাকিস্তান-পালিত সন্ত্রাসী মিলিশিয়াদের কাছে দেশটিকে কার্যকরভাবে সমর্পণ করার সিদ্ধান্ত ছাড়াও রাশিয়ার ইউক্রেনে আক্রমণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট উত্তেজনা বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী এবং সর্বাধিক জনবহুল গণতন্ত্রের দুই দেশের সম্পর্ককে উত্তেজিত করেছে।

যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের জন্য বড় উদ্বেগের বিষয় হলো ভারত রাশিয়ার কাছ থেকে বড় ধরনের ছাড়ে তেল কেনা অব্যাহত রেখেছে এবং বাইডেন ভারতকে রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কেনা বন্ধ করে তা আমেরিকার কাছ থেকে কেনার জন্য যে প্রস্তাব দিয়েছিলেন, তা ভারত প্রত্যাখ্যান করেছে। শুধু তা-ই নয়, ভারত উল্টো রাশিয়ান অপরিশোধিত তেলের আমদানি আগের চেয়ে অনেক বাড়িয়েছে। ফলে রাশিয়ার উপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আরোপ করা নিষেধাজ্ঞা পুরোপুরি কার্যকর হচ্ছে না। ফলে দেশ দুটির মধ্যে তৈরি হচ্ছে দূরত্ব এবং মতবিরোধ। তাই প্রশ্ন উঠছে ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মাঝে তৈরি এ দূরত্বের প্রভাব কি বাংলাদেশের নির্বাচনে উপর পরতে যাচ্ছে কিনা।

২০০১ সালের পর থেকেই বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এবং বাংলাদেশের মৌলিক বিষয়ে যে আন্তর্জাতিক সিদ্ধান্ত সেই সিদ্ধান্তে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারত মুখাপেক্ষী। ভারত যে সিদ্ধান্ত নেয় সে সিদ্ধান্তই বহাল থাকে বলা যায়। কিন্তু এখন যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের বিভিন্ন বিষয়ে অত্যন্ত তৎপর এবং আগ্রহী। সাম্প্রতিক সময়গুলোতে মার্কিন কূটনীতিকদের বাংলাদেশ সফর এবং বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন নিয়ে তাদের আগ্রহ সেটিরই জানান দেয়।

তবে বাংলাদেশের ব্যাপারে যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত অভিন্ন কূটনৈতিক কৌশল থেকে সরে আসে তাহলে এর প্রভাব কি হবে সেটিই একটি দেশের কূটনীতিক অঙ্গনে বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। কাজেই প্রশ্ন উঠছে বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কুটনৈতিক লড়াইয়ের ব্যাটেলফিল্ড হতে যাচ্ছে কিনা?



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭