ইনসাইড বাংলাদেশ

লক্ষ্মীপুরে রমজানের আগে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে দিশেহারা ক্রেতারা


প্রকাশ: 09/03/2023


Thumbnail

করোনার অজুহাতে দীর্ঘদিন ধরেই চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে চাল, ডাল, তেল, চিনিসহ নিত্যপণ্য।  এ অবস্থায় আসছে রমজান উপলক্ষে নতুন করে বেড়েছে আলু, ছোলা, খেজুর, আদা, রসুনসহ বিভিন্ন মসলার দাম, যা স্বল্প আয়ের মানুষদের ভোগান্তি আরও বাড়াবে বলেই আশঙ্কা।

লক্ষ্মীপুর, রায়পুর,  রামগঞ্জ, রামগতি, কমলনগর ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অনেকদিন ধরেই চাল, তেল, চিনির দাম বাড়তি। পাশাপাশি আটা, ময়দার দামও বেড়েছে সম্প্রতি। রোজার মাসে যেসব পণ্য বেশি ব্যবহৃত হয়, গত ২০দিনে সবগুলোর দাম বেড়েছে। সামনে দাম আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এদিকে রোজার মাসে ক্রেতাদের কিছুটা স্বস্তি দেওয়ার লক্ষ্যে সয়াবিন তেল, চিনি ও ছোলা আমদানিতে শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়। 

তবে সরকারের এ উদ্যোগ রোজার মাসে ক্রেতাদের কতটা স্বস্তি দিতে পারবে তা এখন দেখার বিষয়। কারণ সরকারি প্রতিষ্ঠান টিসিবির তথ্যে উঠে এসেছে গত এক সপ্তাহে চাল, আটা, ময়দা, পাম অয়েল, মসুর ডাল, ছোলা, আলু, শুকনা মরিচ, আদা, দারুচিনিসহ বিভিন্ন নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে।

লক্ষ্মীপুর জেলার বিভিন্ন বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রোজায় বহুল ব্যবহৃত পণ্য খেজুর ও ছোলার দাম গত কয়েকদিনে বেড়েছে দ্বিগুণ।  খুচরা পর্যায়ে ছোলার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৮৫ টাকা, যা কয়েকদিন আগে ছিল ৭০-৭৫ টাকা। অর্থাৎ ছোলার দাম এরই মধ্যে কেজিতে ১০ টাকা বেড়েছে।

সরোজমিনে রামগঞ্জের ব্যবসায়ী মো. সুমন  বলেন, রোজা উপলক্ষে এরই মধ্যে সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়তে শুরু করেছে। গত কয়েকদিনে ছোলার দাম কেজিতে ১০ টাকা বেড়েছে। 

তিনি বলেন, ছোলাসহ অন্যান্য ডালের দাম বাড়ার ক্ষেত্রে আমাদের কোনো হাত নেই। কারণ অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, নেপাল, মিয়ানমার, তুরস্ক ও ভারত থেকে আমদানি করা ছোলাসহ অন্যান্য ডাল চট্টগ্রাম বন্দর থেকে খালাস হয়ে প্রথমে খাতুনগঞ্জ বাজারে যায়। সেখান থেকে আসে মৌলভীবাজারের ব্যবসায়ীদের কাছে। খাতুনগঞ্জ দাম বাড়ালে আমাদের এখানে অটোমেটিক দাম বাড়ে। একইভাবে খাতুনগঞ্জে দাম কমলে ঢাকার বাজারেও কমে যাবে।
রামগতি বাজারের ব্যবসায়ী মো: আলী  জানিয়ছেন কয়েকদিন আগে খুচরা পর্যায়ে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা বিক্রি হওয়া নিম্নমানের খেজুরের দাম বেড়ে এখন ২০০ থেকে ২৫০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। মাঝারি মানের খেজুর বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা কেজি, যা কিছুদিন আগে ছিল ২২০ থেকে ২৫০ টাকার মধ্যে। আর ভালো মানের খেজুরের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬৫০ থেকে ৮০০ টাকা। কিছুদিন আগে এই খেজুরের দাম ছিল ৫০০ থেকে ৬৫০ টাকার মধ্যে।

খেজুরের দামের বিষয়ে রায়পুরের ব্যবসায়ী রহমান   বলেন, আমরা সারাবছর খেজুর বিক্রি করি। খেজুরের দাম প্রায় এক বছর ধরে কম ছিল। তবে এখন বাড়তে শুরু করেছে। কিছুদিন আগে আমরা যে খেজুর ৪০০ টাকা বিক্রি করেছি, তা এখন ৫৫০ টাকা বিক্রি করতে হচ্ছে। কারণ আড়তে খেজুরের দাম বেড়ে গেছে। রোজাকেন্দ্রিক খেজুর এখনো বিক্রি শুরু হয়নি, কিন্তু এখনই দাম বেড়ে গেছে। সামনে বিক্রি বাড়লে দাম আরও বাড়বে এটাই স্বাভাবিক।

লক্ষ্মীপুর বাজারে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় রোজা কে সামনে রেখে প্রায় সব ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বেড়ে গেছে 

যেমন ছোলা ৯০ টাকা আগে বিক্রি হতো  এখন ৮০ / ৮৫ টাকা,
মুশারি ১৩০ টাকা যা আগে বিক্রি হতো  এখন বিক্রি হচ্ছে ১১৫/১২০ টাকা,
পেয়াজ ৩৫ টাকা যা আগে বিক্রি হতো ২৫/৩০ টাকা, রৌসন ছোট কেজি ৮০ টাকা রৌসন বড় ১৩০ টাকা যা    রৌসন ছোট আগে বিক্রি হতো ৭০/৭৫ টাকা রৌসন বড় আগে বিক্রি হতো ১১৫/ ১২০ টাকা,
বুট বিক্রি হতো ৬০ টাকা আর এখন বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা, চিনি আগে বিক্রি হতো ১১০ এখন বিক্রি হচ্ছে ১১৫ টাকা,
সয়াবিন তৈল বিক্রি হতো  খোলা টা ১৮০ এখন বিক্রি হচ্ছে ১৯০ টাকা , তীর ৫ লিটার বিক্রি হচ্ছে ৯০০ টাকা, জিরা বিক্রি হতো ৫৮০ এখন বিক্রি হচ্ছে ৬০০ টাকা,  বেশন আগে বিক্রি হতো ৬০/৬৫ টাকা এখন বিক্রি হচ্ছে ৮০/৮৫ টাকা, আদা আগে বিক্রি হতো ৯৫/১০০ টাকা এখন বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকা,আলু বিক্রি হতো ১৫ টাকা আর এখন বিক্রি হচ্ছে ১৮/২০ টাকা,শুকনো মরিচ দেশি আগে বিক্রি হতো ৩৫০/৩৮০টাকা  এখন বিক্রি হচ্ছে ৪৪০ টাকা,মিষ্টি মরিচ ৫২০ টাকা, রুআপজা বড় বতল বিক্রি হতো ৩৩০/৩৪০ টাকা একন বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ টাকা,
ছোলা, খেজুরের পাশাপাশি দাম বাড়ার তালিকায় রয়েছে রসুন, আদা, হলুদসহ বিভিন্ন মসলা।

দাম বাড়ার এ তালিকায় রয়েছে ডিম। আগে কুড়ি কিনা যেত ১৮০ টাকা আর এখন কুড়ি ২৪০ টাকা রোজা উপলক্ষে লক্ষ্মীপুরে কেনাকাটা করতে আসা মো. রাজু বলেন, এখনই সবকিছুর দাম বাড়তি। রোজার আগে আরও দাম বাড়বে এমন আশঙ্কায় আছি। তাই একটু আগেই রোজার কেনাকাটা করে রাখছি। কারণ আমাদের অতীত অভিজ্ঞতা তো ভালো না। এর আগে দেখেছি মুনাফালোভী এক শ্রেণির ব্যবসায়ী রোজা উপলক্ষে বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়িয়েছেন। এবারও সেসব পণ্যের দাম আরও বাড়বে না, সেই নিশ্চয়তা কে দেবে?

মাংশ বাজার গরুর মাংশ হাড়সহ বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ টাকা হাড় ছাড়া বিক্রি হচ্ছে ৮০০থেকে ৮৫০ টাকা। খাসির মাংস প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১০০০ টাকা করে। লেয়ার বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৩৩০ টাকা বয়লার বিক্রয় হচ্ছে প্রতি কেজি ২৪০টাকা কক বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৩২০ টাকা
তিনি বলেন, জিনিসপত্রের যে দাম তাতে কেউ স্বস্তিতে নেই। চাল, ডাল, তেল, চিনির যে দাম তাতে অধিকাংশ মানুষ সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছে। উচ্চবিত্ত ছাড়া কোনো শ্রেণি-পেশার মানুষ ভালো নেই। 

কমলনগর রিকশা চালক আজাদের সঙ্গে কথা হয় তিনি বলেন, এখন আমাদের জন্য কোনোরকম খেয়ে-পরে বেঁচে থাকাই বড় বিষয় হয়ে দেখা দিয়েছে। রোজা নিয়ে ভাবার সময় কোথায়। এখন দু’বেলার বেশি খাই না। রমজানেও কোনো রকমে সেহরি খেয়ে রোজা রাখবো। আর ছোলা-মুড়ি দিয়ে ইফতারি সেরে নেবো।
চাল, আটার দাম আরও বেড়েছে দীর্ঘদিন ধরেই চড়া দামে বিক্রি হওয়া চাল ও আটার দাম নতুন করে আরও বেড়েছে। গত এক সপ্তাহে চালের দাম কেজিতে তিন থেকে ছয় টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এক সপ্তাহ আগে ৬২ থেকে ৬৪ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া চিকন চালের দাম বেড়ে এখন ৬০থেকে ৭০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। মোটা চালের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫৪ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ৪৮ থেকে ৫০ টাকা। আর মাঝারি মানের চালের দাম বেড়ে ৫৬ থেকে ৬০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ৫৪ থেকে ৫৬ টাকার মধ্যে।

অপরদিকে খোলা আটার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৪২ টাকা। যা কিছুদিন আগে ছিল ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা। আর ৪২ থেকে ৪৫ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া খোলা ময়দার দাম বেড়ে এখন ৫০ থেকে ৫২ টাকা বিক্রি হচ্ছে।

রায়পুরে  ব্যবসায়ী মোহাম্মদ খোকন  বলেন, গত কয়েকদিন সব ধরনের চালের দাম বেড়েছে। পারীজা  বস্তায় বেড়েছে ৩০০ টাকা। এভাবে সব কোম্পানির চালের দাম বস্তায় ২০০ থেকে ৩০০ টাকা করে বেড়েছে। এছাড়া আটা, ময়দার দামও গত কয়েকদিনে বেড়েছে। এবছর রমজানে জিনিপত্রের দাম কোথায় গিয়ে ঠেকবে তা জানি না। জিনিপত্রের দাম বাড়ায় শুধু ক্রেতারা নয়, আমরাও কষ্টে আছি।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭