ইনসাইড আর্টিকেল

‘উত্তাল মার্চের দিনগুলো’: বাংলার ঘরে ঘরে স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলন - ১০ মার্চ ১৯৭১


প্রকাশ: 10/03/2023


Thumbnail

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে সারাদেশে সরকারি ও আধাসরকারি অফিসের কর্মচারীরা দশম দিনের মতো কাজে যোগদানে বিরত থাকেন। বেসরকারি অফিস, ব্যাংক ও ব্যবসা কেন্দ্র খোলা থাকে। ঘরে ঘরে বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করা হয় এই দিন। সরকারি ও বেসরকারি ভবন, ব্যবসা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠঅনের শীর্ষে কালো পতাকা ওড়ানো হয়। এমনকি রাজারবাগ পুলিশ লাইন, থানা ও হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির বাসভবনেও কলো পতাকা উত্তোলিত হয়।

মার্চ মাস বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে একটি নতুন বাংলাদেশ গঠনের উত্তাল সংগ্রামের মাস। এই মাসেই বীর বাঙালি স্বাধীনতার নেশায় প্রাণ বিসর্জন দিতে দ্বিধা না করে মহান মুক্তিযদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছিলেন। উত্তাল এই মার্চেই স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম হয়। ‘উত্তাল মার্চের দিনগুলো’র দশম পর্বে থাকছে ১০ই মার্চের ঘটনাপ্রবাহ। 

১১ মার্চে প্রকাশিত দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় ১০ মার্চের প্রধান খবরগুলো প্রকাশ করা হয়। নতুন করে কারা প্রতিরোধে শামিল হলো সেটাও উল্লেখ ছিল এই দিনের খবরে। সংবাদে বলা হয়, স্বাধীন বাংলাদেশ সংগ্রাম পরিষদের যুক্ত বিবৃতিতে বাংলাদেশের প্রতিটি দেশপ্রেমিক নাগরিককে, স্বাধীনতা সংগ্রামে নিয়োজিত প্রতিটি মুক্তি সেনাকে সকল প্রকার সাহায্য করার অনুরোধ জানানো হয়। পাকিস্তান থেকে বাঙালিদের আসতে না দিলে বিমান বন্দরে চেকপোস্ট বসিয়ে অবাঙালিদের দেশত্যাগ করতে না দেওয়ার হুমকি নিয়েও সংবাদ প্রকাশিত হয়।

একাত্তরের এদিন সকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার নিজ বাসভবনে একদল বিদেশি সাংবাদিকদের সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হন। বৈঠকে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘সাত কোটি বাঙালি আজ নিজেদের অধিকার সম্পর্কে অত্যন্ত সচেতন। যে কোনও মূল্যে তারা অধিকার আদায়ে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ। এ পর্যন্ত বাঙালিরা অনেক রক্ত দিয়েছে। এবার আমরা এই রক্ত দেওয়ার পালা শেষ করতে চাই।’

বিকেলে ওয়ালীপন্থী ন্যাপের উদ্যোগে শোষণমুক্ত স্বাধীন বাংলার দাবিতে ঢাকার নিউমার্কেট এলাকায় পথসভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ সভাপতিত্ব করেন।

১৯৭১ সালের ১ই মার্চ ‘লেখক-শিল্পী মুক্তি সংগ্রাম পরিষদ’-এর ব্যানারে লেখক ও শিল্পীরা রাজধানীতে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। নিউইয়র্কে প্রবাসী বাঙালি ছাত্ররা জাতিসংঘ সদর দফতরের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। ছাত্ররা নিরস্ত্র বাঙালিদের হত্যা বিষয়ে জাতিসংঘের হস্তক্ষেপ দাবি করে মহাসচিব উ-থান্টের কাছে স্মারকলিপি পেশ করেন।

সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জেন্ট জহুরুল হক হল প্রাঙ্গণে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের উদ্যোগে কর্মীসভা হয়। কর্মীসভায় ছাত্রলীগ ও ডাকসু নেতৃবৃন্দের স্বাক্ষরিত স্বাধীন- বাংলাদেশ ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের এক বিবৃতিতে বাঙালি সৈন্য, ইপিআর ও পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের প্রতি পাকিস্তানী উপনিবেশবাদী সরকারের সাথে সহযোগিতা না করার আবেদন জানানো হয়।

ঢাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এক বিবৃতিতে বলেন, ‘বাংলাদেশের জনগণের নামে আমি যে নির্দেশ দিয়েছি সচিবালয়সহ সরকারি ও আধা সরকারি অফিস আদালত, রেলওয়ে ও বন্দরগুলোতে তা পালিত হচ্ছে। ক্ষমতাসীন চক্র প্রতিহিংসাপরায়ণ মনোবৃত্তি নিয়ে বাংলাদেশর জনগণের বিরুদ্ধে গভীর চক্রান্তে লিপ্ত। সামরিক সজ্জা অব্যাহত রেখে বাংলার বুকে এক জরুরি অবস্থা কায়েম রাখার প্রয়াসী।’ 

করাচিতে সাংবাদিকদের সাথে আলোচনাকালে ন্যাপ প্রধান ওয়ালী খান বলেন, ‘তিনি বঙ্গবন্ধুর সাথে মতবিনিময়ের জন্য ১৩ মার্চ ঢাকায় আসবেন। ক্ষমতা যাতে হস্তান্তর করা যায় সে জন্য আগে আমাদের শাসনতন্ত্র প্রণয়নের চেষ্টা করতে হবে।’ 

১৯৭১ সালের ‘উত্তাল মার্চের দিনুগলো’র ১১ মার্চ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশেই কার্যত চলছিল তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান। ঘরে ঘরে উড়ছিল স্বাধীন বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত নতুন পতাকা। 

এদিন করাচি থেকে বঙ্গবন্ধুকে টেলিগ্রাম/টেলিফোন বার্তায় আপোষে বসার আহ্বান জানান এয়ার মার্শাল আসগর খান। তিনি বলেন, ‘পরিস্থিতি যে কোনো সময় বদলে যেতে পারে; সেনানিবাস পাকিস্তানের পতাকার মর্যাদা রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’

এদিন জহুর আহমেদ চৌধুরী, এম আর সিদ্দিকী, এম এ হান্নান, এম এ মান্নান, সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, মৌলভী সৈয়দ আহমেদ, এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর নেতৃত্বে ‘চট্টগ্রাম সংগ্রাম পরিষদ’ গঠিত হয়। কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে আসা যে কোনো সিদ্ধান্ত চট্টগ্রামে বাস্তবায়নের সংকল্প জানায় পরিষদ।

(সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক, রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদীর ‘৭১ এর দশমাস’, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর)।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭