কালার ইনসাইড

মাত্র কয়েকটি দৃশ্য করতে গিয়েই এত টাকা চলে গেছে

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 20/02/2018


Thumbnail

মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র তাও কম হয়নি। সরকারি অনুদানের ক্ষেত্রে চলচ্চিত্র নির্মাণে একধরনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ভাষা আন্দোলন নিয়ে সমস্যাটা কী? বাংলাদেশের সিনেমার বরপুত্র শহীদ জহির রায়হানই প্রথম ভাষা আন্দোলন ও গণ-আন্দোলন নিয়ে ‘জীবন থেকে নেওয়া’ নামে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছিলেন। যে ছবিটি স্বাধীনতার আগে পাকিস্তানিদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে নির্মাণ করা হয়।

এখন পর্যন্ত চলচ্চিত্রে ভাষা আন্দোলনের অন্যতম স্মারক হিসেবে বিবেচিত এই চলচ্চিত্রটি। প্রতিবারই আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের আগে কিংবা পরে ঘুরে-ফিরে আসে এ চলচ্চিত্র’র প্রসঙ্গ। এ ছবিতে একুশে ফেব্রুয়ারিতে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে শহীদদের স্মরণে প্রভাতফেরির একটি দৃশ্য রয়েছে। যা এ চলচ্চিত্রকে আরও বিখ্যাত করে তুলেছে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর মহান মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বেশ কিছু চলচ্চিত্র নির্মিত হলেও ভাষা আন্দোলনকে প্রাধান্য দিয়ে শহীদুল ইসলাম খোকনের ‘বাঙলা’ ছাড়া আর কোনও চলচ্চিত্র নির্মিত হয়নি। সর্বোপরি একটি প্রশ্ন থেকে যায়? কি কারণে ছয় দশক পেরিয়ে গেলেও ভাষা আন্দোলনের বিষয়ের উপর চলচ্চিত্র নির্মাণ করা হচ্ছে না?

কেন তা নিয়ে কথা বলেছেন কয়েকজন চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব:

নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু

প্রধম ভাষা আন্দোলনের পটভুমি নিয়ে যদি নির্মাণ করতে হয়। তখনকার পরিবেশ ফুটিয়ে তুলতে হবে। তখনকার পরিবেশ ফুটিয়ে তোলা এককথায় এখন অসম্ভব। ব্যক্তি উদ্যোগে ভাষা আন্দোলন নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ করা সম্ভব নয়। কারণ গেরিলা করতে গিয়ে আমার অনেক টাকা খরচ হয়েছে। স্ত্রীর ফ্ল্যাট, মেয়ের টাকা, আমার কাছে যা ছিল সেই টাকা, এমন কি বন্ধু-আত্মীয়দের কাছ থেকে টাকা ধার নিয়েছি। যা এখনো ফেরত আনতে পারিনি। গেরিলা ছবিতে মাত্র কয়েকটি দৃশ্য করতে গিয়েই আমার এত টাকা চলে গেছে। এখন যদি ৫২ সালের ভাষা আন্দোলন নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ করি, সেই পরিবেশ ফুটিয়ে তুলতে চাই, তাতে আরো কয়েক গুণ টাকা বেশি খরচ করতে হবে। যা ব্যক্তি উদ্যোগে করা সম্ভব নয়।

যদি বলেন অনুদানের চলচ্চিত্রে ভাষা আন্দোলন উপেক্ষিত কেন? কারণ, যেসব ছবির মাধ্যমে দেশের উপকার হবে, যেসব ছবি দেশের ইতিহাস তুলে ধরবে, সেই ছবিকে অনুদান দেওয়া হয়। কিন্তু ভাষা নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য কোনো আবেদন তো কেউ করে না। আবার অনুদানে যে টাকা পাওয়া যায় তা দিয়ে ভাষা আন্দোলনের গল্পটা ফুটিয়ে তোলা কঠিন। একমাত্র সরকারের বিশেষ উদ্যোগে ভাষা আনন্দোলন নিয়ে ছবি নির্মাণ সম্ভব।’

সৈয়দ হাসান ইমাম

ভাষা আন্দোলন নিয়ে সিনেমা নির্মাণ হয়নি। তার আগে বলতে হবে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কয়টি সিনেমা নির্মাণ হয়েছে? আমাদের দেশটা স্বাধীন হওয়ার পরেও কিন্তু বারবার আমরা বন্দি হয়েছি। পাকিস্তানি অদৃশ্য শক্তিতে। মুক্তিযুদ্ধ কেন্দ্রীক ছবি তৈরি ১৯৭৫ সালে বন্ধ হয়ে গেল। এরপর বঙ্গবন্ধুর মৃত্যু পরে জিয়াউর রহমানের মৌখিক নির্দেশে মুক্তিযুদ্ধ কেন্দ্রীক ছবিগুলোর প্রদর্শন বন্ধ হয়ে গেল। এরপর এক ধরনের বিরূপ পরিবেশে আর কেউ সাহস করল না মুক্তিযুদ্ধ কিংবা ভাষা আন্দোলন কেন্দ্রীক ছবি নির্মাণ করার জন্য। আর এখনকার নির্মাতারাও ভাষা আন্দোলন নিয়ে যতটা না জেনেছেন তার চেয়ে অনেক বেশি জেনেছেন স্বাধীনতা যুদ্ধ নিয়ে। তবে আমি মনে করি পুরোটাই রাজনৈতিক কারণে একুশে ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীক চলচ্চিত্র নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি। আমি এখনো আশাবাদি। সিনেমা নির্মাণ হবে।

আমজাদ হোসেন

মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে অনেকে অনেক ধরনের কথাই বলে থাকেন।কিন্তু বর্তমানে কোথাও কি ভাষা আন্দোলন কিংবা মুক্তিযুদ্ধের কোন চেতনা আছে? কোথাও কিছু নেই। ব্রিটিশ কিংবা পাকিস্তান আমলে যেভাবে চলছিলাম আমরা। এখনও সেভাবেই চলছি। বর্তমানে দেশাত্ববোধ, ভাষার প্রতি মমতা, মুক্তিযুদ্ধের প্রতি মমতা আমাদের মধ্যে কোন কিছুই নেই। সবকিছু কি আর আমার কথায় হবে? যারা দেশ চালাচ্ছে, যারা সরকার। তারাই বিষয়টি ভাল করে বলতে পারবেন। তারা নিশ্চয়ই আমার থেকে ভাল বুঝেন। সিনেমা মানে সৃষ্টি। নবযুগের সূচনা করা। যুদ্ধ হয়েছে সেটি দেখানোর জন্য যে ধরনের পরিবেশ দরকার। সে ধরনের পরিবেশ সৃষ্টি করেই ছবি নির্মাণ করতে হবে। আর এজন্য বাজেট তার থেকে বিষয়টিকে সর্বোপরি গুরুত্ব দিতে হবে। আমাদের দেশে প্রতিনিয়ত স্যাটেলাইট চ্যানেলগুলোতে ভাষাকে যেভাবে ডুবিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তারপরও কেউ কোন ধরনের প্রতিবাদ করছে না। যেন দেখেও না দেখার ভান করছে। আর বাকিরা কি-ই বা করবে? আর সেখানে প্রতিনিয়ত ভাষার বিকৃতি ঘটছে। সেজন্য কিছু হচ্ছে না।

অমিতাভ রেজা

আমি আসলে ভাষা আন্দোলন কেন্দ্রীক ছবি নির্মাণের বিষয়টি নিয়ে কখনও ভাবি নাই। আর এ ধরনের প্রেক্ষাপট নিয়ে ছবি নির্মাণের যে ধরনের বাজেট দরকার সেটিও পাওয়া যায় না। কারণ ১৯৫২ সাল আর পুনরায় আবার পর্দায় ফুটিয়ে তোলা অতো সহজ কথা নয়। যেমন বাজেট নেই তেমনি এ ধরনের চলচ্চিত্র নির্মাণে যে ধরনের তীক্ষ্ণবুদ্ধি ও জ্ঞানের দরকার সেটিরও ঘাটতির জায়গা রয়েছে।

সরকার অনুদানের একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করার জন্য যে ধরনের অর্থ প্রদান করে থাকেন। সেটি দিয়ে আসলে চলচ্চিত্র নির্মাণ করা সম্ভব নয়। কারণ এ ধরনের প্রেক্ষাপট নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ করার জন্য আড়াই কিংবা তিনকোটি টাকার দরকার। আর সেখানে অনুদানের টাকা দিয়ে আসলে কি হবে? একসাথে এতগুলো ছবি নির্মাণের জন্য টাকা না দিয়ে একটি কিংবা দুটি ছবি নির্মাণের জন্য টাকা দিলে ভাল হত।’


বাংলা ইনসাইডার/এমআরএইচ

 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭