ইনসাইড থট

আহমদিয়া সম্প্রদায়রাও এদেশের নাগরিক


প্রকাশ: 10/03/2023


Thumbnail

অগ্নিঝরা মার্চের তিন তারিখ (২০২৩) শুক্রবার জুমার নামাজের পর পঞ্চগড় শহরের প্রাণকেন্দ্র চৌরঙ্গী মোড়ে সংঘর্ষ, সহিংসতা ও প্রাণনাশের যে নিন্দনীয় ঘটনা ঘটেছে তা এদেশের নাগরিক হিসেবে আহমদিয়া সম্প্রদায়দের মৌলিক অধিকারে আঘাতের নিকৃষ্ট দৃষ্টান্ত। ৪ ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষে পঞ্চগড় শহর রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এ সময় মুসল্লিরা শহরে অবস্থিত আহমদিয়া মুসলিম জামাতের বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও ঘরবাড়িতে লুটপাট এবং ট্রাফিক পুলিশ বক্স, ট্রাফিক অফিসে রক্ষিত বিপুলসংখ্যক মোটরসাইকেল ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী জুমার নামাজের পর বিভিন্ন মসজিদের শত শত মুসল্লি পঞ্চগড় শহরের শেরেবাংলা নগর পার্ক এলাকায় অবস্থান নিয়ে আহমদিয়া মুসলিম জামাতের সালানা জলসা বন্ধের দাবিতে স্লোগান দিতে থাকে। সংঘর্ষের একপর্যায়ে মুসল্লিরা আহমদিয়া জামাত অনুসারীদের বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালায়। মুসল্লিদের দাবি, ‘আহমদিয়া মুসলিম জামাতের অনুসারীরা গোলাম আহম্মদকে নবী মনে করে তাই তারা কাফের। ইসলামের নামে কোনো জলসার আয়োজন ধর্মপ্রাণ মুসল্লি মেনে নিতে পারে না। প্রশাসনকে এ ধরনের জলসা বন্ধ করতে হবে।’

উপরের তথ্য থেকে পাঠকগণ লক্ষ্য করে থাকবেন নামাজ শেষে ওই সহিংসতার শুরু হয় উগ্র মুসলিম জনগোষ্ঠীর দ্বারা। আহমদিয়া জামাত অনুসারীদের বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়ে লুটপাটও করে তারা।তাহলে ধর্মপ্রাণ মুসল্লি বলে আমরা যাদের চিহ্নিত করি তারা অবলীলায় অন্যের অধিকার হরণে লিপ্ত হয়-এটা দৃশ্যমান হলো। এমনকি ধর্মবিশ্বাস লালন ও ধর্মপালনে মানুষের যে মৌলিক অধিকার রয়েছে তার ওপর হস্তক্ষেপ ও মারমুখি আচরণ করা হয়েছে নিরীহ সম্প্রদায়কে টার্গেট করে। উল্লেখ্য, প্রতিবছরের মতো এবারও পঞ্চগড়ের ফুলতলায় অবস্থিত আহমদ নগরে শুক্রবার থেকে তিন দিনব্যাপী বার্ষিক সালানা জলসার আয়োজন করে আহমদিয়া মুসলিম জামাত।অন্যদিকে তৌহিদী জনতার ব্যানারে স্থানীয় মুসল্লিরা তা প্রতিহতের চেষ্টা করে হামলা চালায়। এ নিয়ে উভয়পক্ষের পাল্টাপাল্টি অবস্থানের কারণে সংর্ঘষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষের পর পুলিশ শহরে মাইকে ঘোষণা দিয়ে জানায় যে, ‘সালানা জলসা বন্ধ করা হয়েছে।’

দেশের কয়েকটি এলাকার বিভিন্ন মসজিদের মুসল্লিদের ‘অনৈসলামিক কার্যকলাপ প্রতিরোধ কমিটি’ গঠন করা কিংবা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য পুলিশ, বিজিবি ও র‌্যাবের টহল অব্যাহত রাখা- এ উভয় বিষয়ের মধ্যে প্রথমটি নিয়ে আমাদের আপত্তি আছে। কারণ ‘অনৈসলামিক কার্যকলাপ প্রতিরোধ কমিটি’ গঠন করে আইন নিজেদের হাতে তুলে নেওয়ার এ ধরনের প্রবণতা কখনই একটি দেশের সাংবিধানিক ভিত্তিকে মজবুত করতে পারে না।আহমদিয়া জামাতকে অমুসলিম কিংবা কাফের ঘোষণার মধ্যেও আছে অপরের অধিকার হরণের অপচেষ্টা।তবে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে হামলা-অগ্নিসংযোগ-লুটপাট, হত্যা এবং এর ধারাবাহিকতায় গুজব সৃষ্টি করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির ঘটনায় ৩টি মামলা হয়েছে। ওই ঘটনায় পুলিশ ২৪ জনকে গ্রেফতার করেছে। আর মামলায় সাড়ে ৬ থেকে ৭ হাজার ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে।দেশের নানা জায়গায় হামলা, লুটপাট এবং গুজব ছড়িয়ে যে ঘটনাগুলো তৈরি করা হয়েছে তা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী এবং অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ নির্মাণের পরিপন্থী।এখানে আহমদিয়া জামাত সম্পর্কে বিস্তারিত বলা দরকার।

২.

ঊনবিংশ শতকে ভারতবর্ষে ব্যাপক খ্রিষ্টান ও আর্য সমাজবাদী ধর্মপ্রচারের জবাবে ইসলামের অন্তর্ভুক্ত একটি আন্দোলন হিসেবেই গড়ে ওঠে আহমদীয়া সম্প্রদায়। পত্রিকা, অনলাইন এবং বিশ্বকোষ সূত্র মতে, মুসলিম ধর্মীয় পুনর্জাগরণ অথবা মসিহবাদী এই আন্দোলনের উদ্ভব হয়েছিল ব্রিটিশ ভারতের কাদিয়ান এলাকার মির্যা গোলাম আহমদের জীবন ও শিক্ষার ভিত্তিতে। মির্যা গোলাম আহমদ (১৮৩৫-১৯০৮) দাবি করেছিলেন যে আল্লাহ তাকে আখেরী জামানায় প্রতিশ্রুত ও মুসলমানদের প্রতীক্ষিত ইমাম মাহদী ও প্রতিশ্রুত মসীহ (যীশু বা ঈসা) উভয় হিসেবেই প্রেরণ করেছেন ইসলামের চূড়ান্ত বিজয় শান্তিপূর্ণভাবে সংঘটিত করতে এবং অন্যান্য ধর্মীয় মতবাদের প্রতীক্ষিত পরকালতাত্ত্বিক ব্যক্তিত্বদের মূর্ত করতে। নবী মোহাম্মদের বিকল্প নাম ‘আহমদ’ থেকে এই আন্দোলন ও সদস্যগণ (‘আহমদী মুসলিম’ বা সংক্ষেপে ‘আহমদী’) নিজেদের নামকরণ করলেও সাধারণভাবে মুসলিম বিশ্বে তাদের প্রতিষ্ঠাতার জন্মগ্রহণকারী অঞ্চলের নাম কাদিয়ান এর নামে কাদিয়ানী হিসেবেই আখ্যায়িত করা হয়।অবশ্য ১৮৮৯ সালে ভারতের পাঞ্জাব অঞ্চলে আহমদীয়া আন্দোলনের প্রতিষ্ঠা হলেও ‘আহমদীয়া' নামটি রাখা হয় আরও এক দশক পর। ১৯০০ সালের ৪ নভেম্বরের একটি ইস্তেহারে গোলাম আহমদের ভাষ্যে নামটি নিজের নাম ‘আহমদ’-কে ইঙ্গিত করছে। ‘আহমদ’ নামটি নবীজির মক্কা জীবনকালে তার খোতবার সৌন্দর্য, শান্তি প্রতিষ্ঠার পথ এবং উদ্যম ও ধৈর্য বহন করে এবং ‘মোহাম্মদ’ ও ‘আহমদ’-এর মধ্যে দ্বিতীয়টি বেশি মনোযোগ দখল করে। উপরন্তু তিনি বলেন বাইবেলের পুরাতন নিয়মে মোশির (নবী মুসার) মত নবী বলে নবী মোহাম্মদের আগমনের উল্লেখ আছে এবং কোরআনে নবী ঈসা সেই নবীর ব্যাপারে ইঙ্গিত করেন ‘আহমদ’ নামটি দ্বারা। তাই ‘মোহাম্মদ’ নামটিকে নবী মুসার জুলুমের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামী কর্মকাণ্ড এবং ‘আহমদ’-কে নবী ঈসার শান্তিপূর্ণ ধর্মোপদেশ কার্যের সঙ্গে তিনি যুক্ত করেন এবং মুসলিম বিশ্বে অন্যান্য আন্দোলন থেকে আলাদা করতে তিনি ‘আহমদীয়া’ নামটি বেছে নেন-‘যে নামটি এই আন্দোলনের সবচেয়ে উপযোগী এবং আমার ও আমার জামাতের জন্যে আমি পছন্দ করি তা হল ‘আহমদীয়া বর্গের মুসলমানগণ’। তবে এটি ‘আহমদী মাজহাবের মুসলমানগণ’ হিসেবে উল্লেখ হলেও তা গ্রহণযোগ্য।’(মাজমু'আ ইশ্তেহারাত, ৩য় খণ্ড, পৃ. ৩৬৪)২৩ মার্চ ১৮৮৯ তারিখে পাঞ্জাবের লুধিয়ানায় তার বাড়িতে মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী তার সহচরী অনুসারীদের কাছ থেকে (মুসলমানদের নেতা মাহদী হিসেবে) ইমামত বা খেলাফতের বায়াত (আনুগত্যের শপথ) গ্রহণ করেন। এর পূর্ব তিনি সুত্র অনুযায়ী তার ভবিষ্যৎ সম্পর্কে ওহী বা আপ্তবাক্য পেতে শুরু করেন। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে তিনি নিজেকে মোজাদ্দেদ (মুসলিম বিশ্বে প্রতি একশত বছর পর আগত ইসলামের পুনরুদ্ধারকারী), রূপক অর্থে মসীহের পুনরাগমন এবং মুসলমানদের প্রতীক্ষিত মাহদী হিসেবে দাবি করেন এবং ব্রিটিশ ভারতের যুক্তপ্রদেশ (বর্তমানে উত্তরাখণ্ড ও উত্তর প্রদেশ), পাঞ্জাব ও সিন্ধুপ্রদেশে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক অনুসারী লাভ করেন। তিনি ও তার অনুসারীরা দাবি করেন যে নবী মোহাম্মদসহ বিশ্বের বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থ তার আগমনের ব্যাপারে ভবিষ্যদ্বাণী করে গেছেন। মির্যা গোলাম আহমদ নিজে আহমদীদের বিশ্বাসের ব্যাপারে বলেছেন, ‘আমরা ঈমান রাখি, খোদা তা‘লা ব্যতীত কোন মা‘বুদ নাই এবং সৈয়্যদানা মুহাম্মাদ মুস্তাফা সাল্লাল্লাহু আলায়হে ওয়া সাল্লাম আল্লাহ্‌র রসূল এবং খাতামুল আম্বিয়া। আমরা ঈমান রাখি, কুরআন শরীফে আল্লাহ্ তা‘আলা যা বলেছেন এবং আমাদের নবী (সা.)-এর পক্ষ থেকে যা বর্ণিত হয়েছে উল্লিখিত বর্ণনানুসারে তা সবই সত্য। আমরা এ-ও ঈমান রাখি, যে ব্যক্তি এই ইসলামী শরীয়ত থেকে বিন্দুমাত্র বিচ্যুত হয় অথবা যে বিষয়গুলি আবশ্যকরণীয় বলে নির্ধারিত তা পরিত্যাগ করে এবং অবৈধ বস্তুকে বৈধকরণের ভিত্তি স্থাপন করে, সে ব্যক্তি বে-ঈমান এবং ইসলাম বিরোধী। আমি আমার জামা‘তকে উপদেশ দিচ্ছি, তারা যেন বিশুদ্ধ অন্তরে পবিত্র কলেমা ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ্’-এর উপর ঈমান রাখে এবং এই ঈমান নিয়ে মৃত্যুবরণ করে। কুরআন শরীফ হতে যাদের সত্যতা প্রমাণিত, এমন সকল নবী (আলাইহিমুস সালাম) এবং কিতাবের প্রতি ঈমান আনবে। নামায, রোযা, হজ্জ ও যাকাত এবং এতদ্ব্যতীত খোদা তা‘লা এবং তাঁর রসূল (সা.) কর্তৃক নির্ধারিত কর্তব্যসমূকে প্রকৃতপক্ষে অবশ্য-করণীয় মনে করে যাবতীয় নিষিদ্ধ বিষয়সমূহকে নিষিদ্ধ মনে করে সঠিকভাবে ইসলাম ধর্ম পালন করবে। মোট কথা, যে সমস্ত বিষয়ে আকিদা ও আমল হিসেবে পূর্ববর্তী বুজুর্গানের ‘ইজমা’ অর্থাৎ সর্ববাদী-সম্মত মত ছিল এবং যে সমস্ত বিষয়কে আহলে সুন্নত জামা’তের সর্বাদি-সম্মত মতে ইসলাম নাম দেয়া হয়েছে, তা সর্বতোভাবে মান্য করা অবশ্য কর্তব্য। যে ব্যক্তি উপর্যুক্ত ধর্মমতের বিরুদ্ধে কোন দোষ আমাদের প্রতি আরোপ করে, সে তাকওয়া বা খোদা-ভীতি এবং সততা বিসর্জন দিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ রটনা করে। কিয়ামতের দিন তার বিরুদ্ধে আমাদের অভিযোগ থাকবে, কবে সে আমাদের বুক চিরে দেখেছিল, আমাদের এই অঙ্গীকার সত্বেও অন্তরে আমরা এসবের বিরুদ্ধে ছিলাম?’

১৯১৩ সনের দিকেই আহমদীয়া জামাত বিদেশে তাদের প্রচার কর্ম শুরু করে (যেমন লন্ডনে ফজল মসজিদ নির্মাণ)। অনেক ঐতিহাসিকের মতে, আহমদীয়া আমেরিকায় ‘সিভিল রাইটস মুভমেন্ট’ বা নাগরিক অধিকার আন্দোলনের অগ্রদূত। এটি ১৯৫০ পর্যন্ত ‘আফ্রিকান-আমেরিকান ইসলামে তর্কসাপেক্ষে সবচেয়ে প্রভাবশালী সম্প্রদায়’ হিসেবে বিবেচিত এবং বিশেষ করে আফ্রিকা মহাদেশে বিপুল একটি ধর্মমত।

স্পষ্টত দেখা যাচ্ছে মির্যা গোলাম আহমদ মুসলিম জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি এবং তিনি নিজের অনুসারীদেরও পবিত্র কলেমা ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ্’-এর উপর ঈমান রাখার কথা বলে গেছেন।অথচ দেশ-বিদেশের ধর্মীয় উগ্রবাদীরা তাদের বিরুদ্ধে মানুষকে লেলিয়ে দিয়ে ইসলাম রক্ষার নামে অপকর্মে লিপ্ত হচ্ছে। বাংলাদেশে আহমদীয়া জামাতের ১০৩টি শাখা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ৪২৫টি স্থানে আহমদীদের বসবাস বা কার্যক্রম রয়েছে। পঞ্চগড়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সুন্দরবন, আহমদনগর-শালসিঁড়ি, রাজশাহী, কুমিল্লা এবং জামালপুর-ময়মনসিংহ অঞ্চলে আহমদীদের সংখ্যা উল্ল্যেখযোগ্য। জামাতের সাংগঠিক কার্যক্রম স্বেচ্ছাসেবকদের দ্বারা পরিচালিত হয়। জামাতের ৬৫জন মোবাল্লেগ রয়েছে যারা জামাতের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে থাকে। এই জামা’ত ১৯২০ সন থেকে বাংলাদেশের প্রাচীনতম পাক্ষিক পত্রিকা ‘আহ্‌মদী’ নিয়মিতভাবে বের করে আসছে। অঙ্গসংগঠনসমূহের নিজস্ব ম্যাগাজিন/বুলেটিন রয়েছে।

৩.

পঞ্চগড়ে সংঘর্ষের পরিপ্রেক্ষিতে ৫ মার্চ ( ২০২৩) কালের কণ্ঠ সম্পাদকীয়তে লিখেছে-‘মহান মুক্তিযুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার পেছনের চালিকাশক্তি ছিল অসাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ঐতিহ্য।সারা পৃথিবী আজ ধর্মীয় সন্ত্রাসবাদের উগ্র আক্রমণের বিষয়ে উদ্বিগ্ন। ধর্মকে অপব্যবহার করা হচ্ছে রাজনৈতিক ঘুঁটির চাল হিসেবে। বাংলাদেশেও এক শ্রেণির রাজনৈতিক দল ও গোষ্ঠী এই স্পর্শকাতর হাতিয়ার ব্যবহার করেছে।বাংলাদেশকে একটি সাম্প্রদায়িক দেশের তকমা লাগানোর জন্য দেশের অভ্যন্তরের একটি চিহ্নিত গোষ্ঠীর পাশাপাশি আন্তর্জাতিক গোষ্ঠী অত্যন্ত সক্রিয়।কখনো জঙ্গিবাদকে উসকে দিয়ে, কখনো আগুন সন্ত্রাস করে তারা দেশকে অস্থিতিশীল করতে চেয়েছে।...কায়েমি স্বার্থের টানে বিভিন্ন সময়ে ঘটেছে ভিন্ন সম্প্রদায়ের ওপর হামলা। এ ধরনের ঘটনা কেমন নির্মম, কদর্য ও ক্ষতিকারক হতে পারে সেটা আমরা সবাই জানি।... বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাসে ঘৃণ্য সাম্প্রদায়িকতার স্থান ছিল না, আজও নেই এবং ভবিষ্যতেও থাকবে না—এই বোধ আজ নতুন করে ছড়িয়ে দিতে হবে সবার মাঝে।’

আসলে ৩ এবং ৪ মার্চ সংঘটিত সহিংসতা আমাদের রাষ্ট্রের মৌল চেতনাকে আঘাত করেছে। কারণ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা করা বাংলাদেশের মৌল লক্ষ্য।পবিত্র সংবিধান সকল ধর্ম পালনে সমমর্যাদা ও সমঅধিকার নিশ্চিত করেছে।সেখানে ধর্মনিরপেক্ষতার কথা এবং স্বাধীনভাবে প্রত্যকের ধর্ম পালনের অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে।আর লেখাবাহুল্য, ধর্মনিরপেক্ষতা মানে ধর্মহীনতা নয়। অপরদিকে ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি ইসলাম সমর্থন করে না।তাছাড়া রাষ্ট্র কোন সম্প্রদায় বা ব্যক্তিকে তার ধর্মবিশ্বাস বা বিশেষ ধর্মীয় আচার পরিপালনের কারণে ‘কাফের' বা অমুসলিম বলতে পারে না। এজন্য কাদিয়ানিদের মতবাদ নিয়ে অন্য কারো বাড়াবাড়ি করা সমীচীন নয়। ধর্মের নামে কোন ব্যক্তি বা সম্প্রদায় সন্ত্রাসী কার্যকলাপে লিপ্ত না হলে, জঙ্গীবাদে সম্পৃক্ত না থাকলে কিংবা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বা রাষ্ট্র বিরোধী কোন কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত না হলে কারও বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারে না সরকারের প্রশাসন। কারণ জাতি, ধর্ম, বর্ণ ও গোত্র নির্বিশেষে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিণির্মাণে সকল নাগরিককে একীভূতভাবে এগিয়ে আসতে হবে।আবহমানকাল ধরে বাঙালি সমাজ অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে ধারণ করে এসেছে। কে কোন ধর্মের অনুসারী, কিংবা কে মুসলিম, কে খ্রিষ্টান, কে হিন্দু আর কে অনুসারী নয়- এটা বলার বা ঘোষণা দেয়ার অধিকার সরকার কিংবা কোন দল বা কোন ব্যক্তির নেই। ধর্মের অনুসরণ নিয়ে মতের ভিন্নতা থাকতেই পারে, তবে আলোচনার মাধ্যমে এর সমাধান করা দরকার।সকল মতাদর্শীদের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান একটি পূর্ণাঙ্গ রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্য। বাংলাদেশে মত প্রকাশের স্বাধীনতা, চিন্তার স্বাধীনতা ও ধর্মপালনের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য- একদল লোকের ধর্মবিশ্বাস অন্যের সঙ্গে না মিললেও তার জন্যে তাকে আঘাত করা যাবে না।মনে রাখা দরকার, আহমদিয়া সম্প্রদায়ের লোকজন নিজেদেরকে মুসলমান বলেই চিহ্নিত করে।

প্রত্যেকে নিজের মতো ধর্ম পালন করবেন, যেমন আহমদিয়া সম্প্রদায়ের লোকজন ওদের মতো পালন করে থাকেন। এজন্য জোর করে, আক্রমণ করে, হত্যা করে অপরের কণ্ঠ রুদ্ধ করা, তাদের ধর্মীয় আচার-আচরণে বাধা দেওয়া দুঃখজনক।এটা অন্যায়-অপরাধ ও রাষ্ট্রবিরোধী কাজ। আমাদের প্রত্যাশা, এসব ঘটনার সাথে যারা জড়িত তাদের সবাইকে অতিদ্রুত বিচারের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা করা।

(লেখক : ড. মিল্টন বিশ্বাস, অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান, বাংলা বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, বিশিষ্ট লেখক, কবি, কলামিস্ট, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রগতিশীল কলামিস্ট ফোরাম, নির্বাহী কমিটির সদস্য, সম্প্রীতি বাংলাদেশ email-drmiltonbiswas1971@ gmail.com)



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭