বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে নতুন করে ষড়যন্ত্র শুরু করেছেন শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি সরকারের ‘অন্যায় আচরণের শিকার’- এমন অভিযোগ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে খোলা চিঠি লিখেছেন বিশ্বের ৪০ বিশিষ্ট ব্যক্তি। যা গত মঙ্গলবার (৭ মার্চ) মার্কিন দৈনিক ওয়াশিংটন পোস্টে বিজ্ঞাপন আকারে প্রকাশ করা হয়। যার পেছনে খরচ রয়েছে ৭৩ হাজার ৩৩ ডলার। ডলারের দাম ১০৭ টাকা ধরে টাকায় যার মূল্য দাঁড়ায় ৭৮ লাখ ১৪ হাজার ৫৮৪ টাকা। সেই বিজ্ঞাপনকে খবর আকারেও প্রকাশ করেছে দেশের ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টার।
কিন্তু ড. ইউনূস কী ধরনের অন্যায় আচরণ কিংবা আক্রমণের শিকার; তার কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য ওই বিজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়নি। ওয়াশিংটন পোস্টের সপ্তম পাতায় বিজ্ঞাপনটি ছাপানোর পরদিন (৮ মার্চ) ডেইলি স্টার এটিকে সংবাদ হিসেবে প্রকাশ করে।
ডেইলি স্টারের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, নোবেল জয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মতো ‘একজন অনবদ্য পরিশুদ্ধ মানুষ এবং তার কার্যক্রমগুলো বাংলাদেশ সরকারের অন্যায় আক্রমণের শিকার হচ্ছে এবং বারবার হয়রানি ও তদন্তের মধ্যে পড়ছে।’ এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে ‘গভীর উদ্বেগ’ প্রকাশ করেছেন ৪০ জন বিশ্বনেতা।
ওয়াশিংটনে পোস্টে ৭৩ হাজার ৩৩ ডলারে খোলা চিঠি
ওয়াশিংটন পোস্টের সাত নম্বর পৃষ্ঠাটি বিজ্ঞাপনের জন্য ব্যবহার হয়। ৭ মার্চ ওই পৃষ্ঠায় সাড়ে ১৮ ইঞ্চি, পাঁচ কলামে ওই খোলা চিঠিটি ছাপানো হয়। ওই বিজ্ঞাপনের আকার ছিল সাড়ে ৯০ কলাম ইঞ্চি। ওই পৃষ্ঠায় মোট ছয় কলামের মধ্যে এক কলাম নিউজ ছিল। আর নিচের দিকে অন্য একটি বিজ্ঞাপন ছিল আড়াই ইঞ্চির।
হিসাব করে দেখা গেছে, ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারির রেট অনুসারে বিজ্ঞাপনে খরচ পড়েছে ৫২ হাজার ১২৮ মার্কিন ডলার। টাকার হিসাবে যা দাঁড়ায় ৫৫ লাখ ৭৭ হাজার ৬৯৬ টাকা। কিন্তু গেল দুই বছরে সবকিছুর খরচ বেড়েছে। যে কারণে পত্রিকার বিজ্ঞাপন রেটও বেড়েছে। অনলাইনে পাওয়া তথ্যানুসারে বর্তমানে ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতি কলাম ইঞ্চি বিজ্ঞাপনের রেট ৮০৭ ডলার। সে হিসাবে ইউনূসের এই বিজ্ঞাপনে খরচ পড়েছে ৭৩ হাজার ৩৩ ডলার। ডলারের দাম ১০৭ টাকা ধরে টাকায় যার মূল্য দাঁড়ায় ৭৮ লাখ ১৪ হাজার ৫৮৪ টাকা।
উল্লেখ্য যে, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে সরকার একাধিক আর্থিক অনিয়ম, দুর্নীতির অভিযোগ পায়। বিশেষ করে গত বছরের মে মাসে মামলা প্রত্যাহারের জন্য ড. ইউনূসের অস্বাভাবিক লেনদেনের ঘটনাটি প্রকাশ পায়। যা ড. ইউনূসকে এক বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে ফেলেছিলো। আর এতে করে কোণঠাসা হয়ে পড়েন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আর একারণে তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত মামলা এবং অভিযোগ থেকে দায় মুক্তি পাওয়া তার জন্য অত্যন্ত জরুরি। আর সে কারণেই হয়তো তিনি এখন এই পন্থা অবলম্বন করেছেন বলে মনে করছেন বিশিষ্টজনরা।
ইউনূসের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ
ইউনূসের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ নতুন নয়। এক যুগ আগে নরওয়ের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে ইউনূসের বিরুদ্ধে গ্রামীণ ব্যাংকের কোটি কোটি টাকা সরানোর বিষয়ে একটি তথ্যচিত্র সম্প্রচার করা হয়।
এছাড়া ড. ইউনূসের গ্রামীণ টেলিকমের দুর্নীতির অনুসন্ধান চলছে। প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে শ্রমিকদের অর্থ লোপাট, কল্যাণ তহবিলের অর্থ বিতরণ না করে ৪৫ কোটি ৫২ লাখ ১৩ হাজার টাকা আত্মসাৎ এবং দুই হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে সহযোগী অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে স্থানান্তর করার অভিযোগ রয়েছে।
অভিযোগের বিষয়ে এরই মধ্যে গ্রামীণ টেলিকমের এমডি নাজমুল ইসলামকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুদক।
এ ছাড়া ১/১১ সেনাসমর্থিত সরকারের সময় প্রধান দুই দলের নেত্রীকে মাইনাস করে রাষ্ট্রক্ষমতায় আসতে চেয়েছিলেন তিনি। সে সময় গ্রামীণ পার্টি নামে একটি দল করারও ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি। পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন বাতিলের নেপথ্যে ঘুরেফিরে এসেছে তার নাম।