ইনসাইড পলিটিক্স

বেগম জিয়ার চিকিৎসা: শেষ পরিণতি ঝাঁড়-ফুক?


প্রকাশ: 10/03/2023


Thumbnail

বিএনপি চেয়াপারসন বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে সরকারের মন্ত্রীদের এতো দরদী হওয়ার দরকার নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কিমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। তিনি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য উনাদের (মন্ত্রীদের) তো এতো দরদী হওয়ার দরকার নাই। আমরা দেশনেত্রীর নিঃশর্ত মুক্তি চাই। নিঃশর্ত মুক্তি পাওয়ার পর উনি বিদেশে চিকিৎসা করবেন না দেশে চিকিৎসা করবেন, না ডাক্তারের কাছে চিকিৎসা করাবেন, না ফকিরের কাছে ঝাঁড়-ফুক নেবেন, না তাবিজ নেবেন সেটা একান্তই তার নিজস্ব ব্যাপার।’

এদিকে শর্ত সাপেক্ষে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির মেয়াদ বাড়ানোর আবেদনে এবং এই আবেদন ও সরকারের দুই মন্ত্রী সম্পর্কে গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের এমন বক্তব্যকে খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসা পরিপন্থী বক্তব্য বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তাঁরা মনে করছেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায় তারেক পন্থী হয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম জিয়াকে মাইনাস করার ফর্মুলা অনুসারেই এমন বক্তব্য দিয়েছেন।  

শুক্রবার (১০ মার্চ) সকালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর পর খালেদা জিয়ার মুক্তি ও তার চিকিৎসা নিয়ে কথা বলেন সরকার হঠানোর আন্দোলনে থাকা বিএনপির এই স্থায়ী কমিটির সদস্য। বাংলাদেশ মেডিকেল টেকনোলজিস্ট অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ- ‘এমট্যাব’-এর ১৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সংগঠনটির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় জিয়াউর রহমানের কবরে শ্রদ্ধা জানাতে যান।

এ সময় তিনি বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে সরকারের মন্ত্রীরা আগ বাড়িয়ে কথাবার্তা বলছেন। এসব করে মানুষের মধ্যে ‘বিভ্রান্তি’ তৈরির পাঁয়তারা চলছে। নিঃশর্ত মুক্তির পর খালেদা জিয়ার চিকিৎসা দেশে না বিদেশের মাটিতে হবে, নাকি তিনি পীর ফকিরের শরণ নেবেন, সেটা একান্তই তার নিজস্ব সিদ্ধান্ত। এখানে আগ বাড়াইয়া মাঝে মধ্যে আইনমন্ত্রী বা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যেসব কথা বলেন তাতে জনগণের মধ্যে একটা বিভ্রান্তি, কনফিউশন সৃষ্টি করার পাঁয়তারা চলে।’

এদিকে পরিবারের পক্ষ থেকে খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেওয়ার অনুমতির আবেদন করা হলে- তার প্রেক্ষিতে তাকে বিদেশে চিকিৎসা করার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে বৃহস্পতিবার (৯ মার্চ) কয়েকটি টেলিভিশন চ্যানেলে টিকার প্রচার করা হয়। পরে ওই তথ্যকে ‘সর্বৈব অসত্য’ বলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। 

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘তার (খালেদা জিয়ার) বিদেশে চিকিৎসার বিষয়টি আগের শর্তে নেই। তার বিদেশে চিকিৎসার আবেদন নাকচ করা হয়েছে বলে যে সংবাদ এসেছে সেটিও সত্যি নয়। এমন কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। জামিন দেওয়ার এখতিয়ার আদালতের, সরকারের না। প্রথমবার যখন আবেদন করা হয়েছিল তখন প্রধানমন্ত্রীর মহানুভবতার কারণেই নিষ্পত্তি করে খালেদা জিয়াকে দণ্ডাদেশ স্থগিত করে ছয় মাসের জন্য মুক্তি দেওয়া হয়েছিল।’  

সূত্র জানায়, গত সোমবার (৬ মার্চ) বেগম জিয়ার ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির মেয়াদ বাড়াতে পরিবারের পক্ষ থেকে আবেদন করেন। আবেদনে এবারও সাজা মওকুফ ও শর্ত শিথিল করে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে নেওয়ার অনুমতি চাওয়া হয়েছে। মতামতের জন্য আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ইতোমধ্যে পাঠানো হয়েছে আইন মন্ত্রণালয়ে। আইনি মতামতের পর এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে সরকার।

এসব বিষয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বেগম জিয়ার মুক্তির মেয়াদ বৃদ্ধির বিষয়ে আবেদনটি যেহেতু স্বরাষ্ট্র এবং আইন মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট, সেক্ষেত্রে এই দুই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীদ্বয় এ ব্যাপারে গণমাধ্যমের সাথে কথা বলতেই পারেন। গণমাধ্যমের মাধ্যমে দেশের জনসাধারণের মাঝে এই তথ্য ছাড়াতেই পারে। তাতে বিভ্রান্তি ছড়ানোর কিছু নেই। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় সরকারের  এই দুই মন্ত্রীর বক্তব্য সম্পর্কে যে মন্তব্য করেছেন, সেটা কি বেগম জিয়ার চিকিৎসা বিরোধী বক্তব্য নয়? তবে কি গয়েশ্বর চন্দ্র রায় চান না যে- বেগম জিয়ার বিদেশে চিকিৎসা হোক?

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা আরও বলছেন, বিএনপিতে তারেক এবং খালেদাপন্থী দুইটি গ্রুপ রয়েছে। খালেদা জিয়া বিএনপিতে এলে তারেক জিয়ার ক্ষমতা খর্ব হবে, যে কারণে তারেকসহ তার অনুসারীরা চান বেগম জিয়া মাইনাস হোক। বিএনপি নেতা গয়েশ্বরের এমন বক্তব্য খালেদা জিয়ার চিকিৎসা পরিপন্থী বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তাঁরা মনে করেন, বেগম জিয়ার সুচিকিৎসা কিভাবে নিশ্চিত করা যায়,সেক্ষেত্রে এখন বিএনপি নেতাদের উচিৎ সরকারের সাথে সমঝোতার মাধ্যমে তার বিদেশে চিকিৎসা নিশ্চিত করা। বেগম জিয়ার রাজনীতি করা না করা নিয়ে কথা ওঠলেও- তার চিকিৎসার ব্যাপারে সরকারের মন্ত্রীদ্বয়ের নেতবিাচক কোনো বক্তব্য আজও কোনো গণমাধ্যমে প্রতিফলিত হয়নি।  

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ইতিমধ্যে সরকার বেগম জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসা করাতে অনুমতি দিচ্ছেন বলেও গুঞ্জন রয়েছে। যদিও আইনমন্ত্রী তথ্যটি সত্য নয় বলে দাবি করেছেন। তথাপিও বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, সরকারের সাথে বেগম জিয়া এবং তার অনুসারীদের একটা গোপন সমঝোতা রয়েছে। কিন্তু তারেক এবং তার অনুসারীরা এক্ষেত্রে বিরোধী ভূমিকা পালন করছে বলেও জানিয়েছে বিএনপির একাধিক সংশ্লিষ্ট সূত্র। এখন দেখার বিষয় হচ্ছে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় কি তারেক অনুসারী হয়ে খালেদা জিয়ার বিদেশ চিকিৎসার বিরোধীতা করছেন কি না? নাকি বেগম জিয়াকে ফকিরের কাছে ঝাঁড়-ফুক করাবেন তারেকপন্থী গয়েশ্বর?



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭