ইনসাইড পলিটিক্স

বাংলাদেশ নিয়ে আন্তর্জাতিক চক্রান্তে ইউনূস: নিজের শেষ রক্ষা হবে কি?


প্রকাশ: 10/03/2023


Thumbnail

ড. ইউনূসকে নিয়ে ‘বিশ্বনেতাদের বিবৃতি’র খবর প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘এটিকে বিবৃতি বলা যাবে না, এটি একটি বিজ্ঞাপন। ওয়াশিংটন পোস্টে প্রায় কোটি টাকা খরচ করে ৪০ জনের নামে একটি বিজ্ঞাপন ছাপানো হয়েছে। বিজ্ঞাপন আর বিবৃতির মধ্যে পার্থক্য আছে।’

তিনি বলেন, ‘ড. ইউনূস বাংলাদেশের জেষ্ঠ্য নাগরিক। তার প্রতি যথাযথ সম্মান ও শ্রদ্ধা রেখেই বলতে চাই, এইভাবে বিজ্ঞাপন দিয়ে বিবৃতি আমি বাংলাদেশে দেখি নাই। বিশ্ব অঙ্গনেও এ রকম হয় কিনা জানিনা। এ রকম বিবৃতি কেনা (ক্রয় করা) বা বিজ্ঞাপন দিয়ে বিবৃতি, সেটাকে আবার কোটি টাকা খরচ করে প্রকাশ করা‌ কতটুকু যুক্তিযুক্ত, সেটিই হচ্ছে প্রশ্ন। যেভাবেই হোক ইউনূস সাহেব নোবেল জয়ী। তার পক্ষে এ রকম একটা বিবৃতি বিজ্ঞাপন দিয়ে ছাপানো- এটি তার ব্যক্তিত্বকেই খর্ব করেছে। আমার প্রশ্ন- তার এতো টাকা কোথা থেকে আসে?’ শুক্রবার (১০ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডের বাসভবনে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণা সংস্থা ফ্রিডম হাউস প্রকাশিত বিশ্ব গণতন্ত্রচর্চা সূচকে বাংলাদেশের অগ্রগতি প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি এসব কথা বলেন। 

জানা গেছে, গ্রামীণ টেলিকমের মালিক ও গ্রামীণ ফোনের প্রায় ৩৪ শতাংশের মালিক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রশংসা করে বিশ্বের ৪০ জন খ্যাতনামা ব্যক্তির বক্তব্য গত ৭ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকায় পুরো এক পাতাজুড়ে একটি বিজ্ঞাপন আকারে ছাপা হয়। এর পর থেকেই দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে এই নিয়ে চলছে নানা আলোচনা, মুখরোচক গল্প আর ওঠেছে নানা প্রশ্ন। ইতিমধ্যেই তথ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিয়কালে প্রশ্ন রেখেছেন- বিদেশি পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেয়ার এতো টাকা তাঁর (ড. ইউনূস) কোথা থেকে আসে? আবার কেউ কেউ বলছেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশের একজন সম্মানিত জেষ্ঠ্য নাগরিক। তিনি একজন নোবেল বিজয়ী বিশ্বখ্যাত ব্যক্তি। তিনি তাঁর দুর্নীতির মামলা থেকে আত্মরক্ষার জন্য নিজের অর্থ ব্য়য় করে বিদেশি পত্রিকায় বিজ্ঞাপন আকারে বিবৃতি প্রকাশ করে শুধুমাত্র দেশের অর্থই নষ্ট করেননি, সেইসঙ্গে নষ্ট হয়েছে তাঁর সুনাম এবং ব্যক্তিত্বও।

সূত্রমতে, শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি বাংলাদেশ সরকারের আচরণের বিষয়ে গভীর উদ্বেগ জানান ৪০ বিশ্বনেতা। এ বিষয়ে তাঁরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে একটি খোলাচিঠি দিয়েছেন। গত মঙ্গলবার (৮ মার্চ) রাজনীতি, কূটনীতি, ব্যবসা, শিল্পকলা ও শিক্ষাক্ষেত্রের ৪০ বিশ্বনেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে এই খোলা চিঠি পাঠান। চিঠিটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকায় পূর্ণ পাতাজুড়ে বিজ্ঞাপন হিসেবেও প্রকাশিত হয়েছে সোমবার (৭ মার্চ)। এই ৪০ বিশ্বনেতার মধ্যে রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন, দেশটির সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট আল গোর, জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুন, আয়ারল্যান্ডের সাবেক প্রেসিডেন্ট মেরি রবিনসন, প্রয়াত মার্কিন সিনেটর এডওয়ার্ড এম কেনেডির ছেলে টেড কেনেডি জুনিয়রের মতো আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব।  

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নরওয়ে ভিত্তিক রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন চ্যানেলে ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে গ্রামীণ ব্যাংকের কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের বিষয়ে একটি তথ্যচিত্র সম্প্রচার করা হয় প্রায় এক যুগ আগে। এছাড়াও ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে গ্রামীণ টেলিকমের দুর্নীতির একটি মামলার অনুসন্ধান করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে শ্রমিকদের অর্থ লোপাট, কল্যাণ তহবিলের অর্থ বিতরণ না করে ৪৫ কোটি ৫২ লাখ ১৩ হাজার টাকা আত্মসাৎ এবং দুই হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে সহযোগী অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে স্থানান্তর করারও অভিযোগ রয়েছে ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে। অভিযোগের বিষয়ে এরই মধ্যে গ্রামীণ টেলিকমের এমডি নাজমুল ইসলামকে জিজ্ঞাসাবাদও করেছে দুদক। এসব মামলা থেকে অব্যহতি পেতেই তিনি বিশ্বনেতাদের স্মরণাপন্ন হয়েছেন, তাদের দিয়ে খোলা চিঠি লিখিয়েছেন, তাদের চিঠিগুলো বিবৃতি আকারে বিজ্ঞাপন দিয়ে বিদেশি গণমাধ্যমে প্রকাশ করেছেন। সর্বোপরি তিনি বৈদেশিক অঙ্গনে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করতেই এই কাজটি করেছেন। এটি এক ধরনের কুটচাল, চাক্রান্ত, দেশের বিরুদ্ধে সড়যন্ত্র।    

সূত্র বলছে, এসব মামলা ছাড়াও ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে বেশ কিছু মামলা চলমান রয়েছে। এসব মামলাগুলো দেশের প্রচলিত আইনেই পরিচালিত হচ্ছে। শুধু ড. মুহাম্মদ ইউনূস নয়, দুর্নীতিসহ নানান অভিযোগে অনেক প্রথিতযশা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধেও বাংলাদেশের প্রচলিত আইন এবং দুদকের আইনে বিভিন্ন মামলা চলমান রয়েছে। প্রতিটি দেশের আইনের মধ্যেই কিছুটা পার্থক্য থাকে। তেমনি যুক্তরাষ্ট্রের আইন এবং বাংলাদেশের আইনের মধ্যেও যথেষ্ট পার্থক্য রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন বা বিবৃতি প্রকাশ, এমনকি দেশিয় পত্র-পত্রিকায় এ ধরনের বিজ্ঞাপন বা বিবৃতি প্রকাশ আইনের ওপর কোনো প্রভাব ফেলে না। এসব ক্ষেত্রে যদি সর্বোচ্চ আদালতের কোনো বিচারক স্ব-প্রণোদিত হয়ে কোনো রুল জারি করেন, সেটা ভিন্ন কথা। তবে টাকা খরচ করে বিভিন্ন বিশিষ্ট ব্যক্তিদের বক্তব্য বিজ্ঞাপন হিসেবে প্রচার করা আইনের সাথে সম্পৃক্ত নয়। 

এসব বিষয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে ড. ইউনূসের পক্ষে বিশ্বনেতাদের যে খোলা চিঠি, সে খোলা চিঠিটি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মহানুভবতার পরিচয় দিয়ে আমলে নিতে পারেন। কিন্তু আইনের উর্ধ্বে কেউই নয়। আইন আইনের গতিতে চলবে। তাছাড়া ড. মুহাম্মদ ইউনূস কোনো সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তিও নন। তার বিরুদ্ধে যেসব মামলাগুলো রয়েছে, সে মামলাগুলোও চলমান রয়েছে। ড. ইউনূস যদি কোনো মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হন, সেক্ষেত্রে মাননীয় রাষ্ট্রপতির কাছে সাধারণ ক্ষমার আবেদন করলে, মাননীয় রাষ্ট্রপতি বিশেষ বিবেচনায় যে কোনো ব্যক্তিকে ক্ষমা করতে পারেন। কিন্তু বিশ্বনেতাদের বাংলাদেশ প্রসঙ্গে নেতিবাচক তথ্য দিয়ে এবং বিদেশি পত্রিকায় টাকা দিয়ে বিজ্ঞাপন আকারে বিবৃতি প্রচার করে তিনি রাষ্ট্রদ্রোহিতার মতো কাজ করেছেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা আরও বলছেন,  ড. ইউনূস সরকারের ‘অন্যায় আচরণের শিকার’- এমন অভিযোগ করে বিশ্বনেতাদের দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে যে খোলা চিঠি তিনি লিখিয়েছেন- তা তিনি গত মঙ্গলবার (৭ মার্চ) মার্কিন দৈনিক ওয়াশিংটন পোস্টে বিজ্ঞাপন আকারে প্রকাশও করেছেন। যার পেছনে খরচ রয়েছে ৭৩ হাজার ৩৩ ডলার- যা বাংলাদেশি টাকায় দাঁড়ায় ৭৮ লাখ ১৪ হাজার ৫৮৪ টাকা (ডলারের দাম ১০৭ টাকা ধরে)। নিজ দেশের বিরুদ্ধে ভিনদেশি নেতাদের কাছে এমন অভিযোগ করে ড. মুহাম্মদ ইউনূস শুধুমাত্র দেশের বিরুদ্ধে চক্রান্তই করছেন না, তিনি রাষ্ট্রদ্রোহিতার কাজটিও করেছেন। এখন দেখার বিষয হচ্ছে, এ ধরনের কর্মকাণ্ড করে শেষ রক্ষা হবে কি ড. ইউনূসের? 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭