নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: 21/02/2018
পৃথিবীতে একমাত্র আমরাই ভাষার জন্য বুকের রক্ত দিয়েছি। আমরা বাঙালিরা বাংলা ভাষা নিয়ে যতটুকু গর্ব করতে পারি, পৃথিবীর কোনো জাতি তা পারে না। তবে কষ্টের বিষয় সালাম, বরকত, রফিক, জব্বারসহ শহীদদের রক্তে অর্জিত ভাষা ব্যবহারে আমরা মোটেও সচেতন নই । আমাদের চারপাশের বাংলা লেখা দেখলেই এর প্রমাণ মেলে।
রাজধানীতে বিভিন্ন বাণিজ্যিক ভবন,দোকানের নাম, সাইনবোর্ডের বানান ভুলে ভরা। রাস্তাঘাট, অফিস-আদালত, বিলবোর্ড, সাইনবোর্ড থেকে শুরু করে যানবাহনসহ সর্বত্রই ভুল বাংলা বানানের ছড়াছড়ি আমরা দেখতে পাই।
টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া, বেনাপোল থেকে তামাবিল সর্বত্র চলছে বানান ভুলের মহোৎসব। দোকানপাট থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ভবনের সাইনবোর্ডের দিকে তাকালেই গুমরে কাঁদতে দেখা যায় মাতৃভাষা বাংলাকে। একটু খেয়াল করুন চোখে পড়বে‘আইনজীবি’ (আইনজীবী), ‘বিরাণী’ (বিরিয়ানি), ‘কর্ণেল’ (কর্নেল), ‘ষ্ট্যাম্প’ (স্ট্যাম্প), ‘ফটোষ্ট্যাট’ (ফটোস্ট্যাট), ‘ভ্রাম্যমান’ (ভ্রাম্যমাণ),‘ডায়াগনষ্টিক’, (ডায়াগনস্টিক) ‘ব্যাটারী’ (ব্যাটারি),‘ষ্টোর’ (স্টোর), ‘এণ্ড’ (অ্যান্ড), ‘ঘন্টা’ (ঘণ্টা), ‘ইনষ্টিটিউট’(ইনস্টিটিউট), ‘ষ্ট্যান্ড’ (স্ট্যান্ড), ‘ফ্যাক্টরী’ (ফ্যাক্টরি), ‘ফার্ণিচার’ (ফার্নচার), ‘মডার্ণ’ (মডার্ন), ‘রেষ্টুরেন্ট’ (রেস্টুরেন্ট), ‘কম্পানী’(কোম্পানি) ‘মেশিনারী’ (মেশিনারি), ‘রিয়েল এষ্টেট’ (রিয়েল এস্টেট), ‘ভবণ’ (ভবন) প্রভৃতি। তার পর খেয়াল করুন বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই‘রেস্তোরাঁ’ শব্দটিকে ‘রেঁস্তোরা’ বা ‘রেস্তোরা’ বানানে লিখতে দেখা যায়। সরকারি কর্মকর্তাদের বাসভবনের মুল ফটকেই ঝুলতে দেখা যায় ভুল বানান। সরকারি হাসপাতালেও বানান ভুলে ভরপুর।
পথ চলতে চলতে একটু খেয়াল করলেই দেখা যায় টু-লেট, রুমমেট আবশ্যক, লেডিস টেইলার্স, পলাশ ফার্মেসি, সালেহা এন্টারপ্রাইজ, অ্যাডমিশন গোয়িং অন, রোমিও ভিডিও সোসাইটি, কালার হেয়ার কাটিং, কুইন্স ফার্মা পথের দুপাশে এ রকম নামফলক প্রতিদিনই চোখে পড়ে। ইংরেজি শব্দকে বাংলায় লেখা আজকাল যেন নিয়মিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং এফএম রেডিওগুলোতে বিকৃত উচ্চারণে কথা বলা বন্ধ হয়নি। এ সংক্রান্ত গবেষণাতেও ভাষা বিকৃতির ভয়াবহ চিত্রের প্রমাণ মিলেছে। এসব ভুল ও বিকৃতি রোধে সচেতনতাকে প্রধান নিয়ামক উল্লেখ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এসব ভুল ও বিকৃতির বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।‘
আমাদের নতুন প্রজন্ম প্রতিদিন এইসব ভুল ও বিকৃত বাংলা বানান দেখছে এবং তারা ভুল বাংলা বানানটাই শিখছে, যার কারণে ভবিষ্যতে বাংলা ভাষা নিঃশ্চিতভাবেই আরও খারাপ অবস্থার দিকে যাচ্ছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ ঘোষ বলেছেন, ‘মাতৃভাষার প্রতি শ্রদ্ধা না থাকার কারণেই সর্বত্র ভুল বানানের শব্দ লেখা হচ্ছে। উচ্চ আদালত, বাংলা একাডেমি, বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ দেশের সর্বত্রই এখন ভুল বানানের মহড়া চলছে। বিভিন্ন রেস্তোরাঁ ও দোকানের সাইনবোর্ড, ব্যানার ও দেয়াল লিখনে একটু মনোযোগ দিলেই দেখা যায় বাংলা শব্দের করুণ পরিণতি। এসব ভুল বানান প্রতিনিয়ত শিক্ষার্থীদের বিভ্রান্ত করছে। কারণ পাঠ্যবইয়ে তারা এক রকম পড়ছে, আবার অন্যান্য ক্ষেত্রে দেখছে ভিন্ন বানান।‘
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন বাংলা বানানের ভুল ব্যবহার ভাষা এবং এর শহীদদের প্রতি চরম উদাসীনতা। বাংলা বানানের এমন ভুলের জন্য আমাদের সকলের আন্তরিকতার বড়ই অভাব। সকলকে বাংলা বানানের বিষয়ে আরোও বেশি সচেতন হতে হবে বলে বিশেষজ্ঞদের মতামত।
আমাদের সকলকেই বাংলা ভাষার প্রতি অনেক বেশি মনোযোগি হতে হবে। যে ভাষায় আমাদের পরিচিতি এবং বিশ্বে গৌরব এনে দিয়েছে সে ভাষার সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করাই আমাদের সকলের জন্য মঙ্গলজনক।
বাংলা ইনসাইডার/আরকে/জেডএ
প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান
বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭