ইনসাইড গ্রাউন্ড

বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের হারিয়ে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক সিরিজ জয়


প্রকাশ: 12/03/2023


Thumbnail

মঞ্চটা আগেই প্রস্তুত করে দিয়েছিলেন বোলাররা। মিরাজের ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ের দিন বাকিরাও কম যান নি। দুই পার্টটাইমার ছাড়া একমাত্র নাসুম আহমেদই কোন উইকেটের দেখা পাননি। এক ওভার হাত ঘুরিয়ে ১৩ রান দেয়ার পর তাকে আর বোলিংয়েই আনেন নি সাকিব। বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে ১১৭ রানে অলআউট করে উৎসবের উপলক্ষ্য তো বোলাররাই তৈরি করে রেখেছিলো। বাকি কাজটা সারার দ্বায়িত্ব বর্তায় ব্যাটসম্যানদের কাঁধে। সে চ্যালেঞ্জ সামলে নিয়ে বাংলাদেশকে ৪ উইকেটের জয় এনে দিয়েছেন ব্যাটসম্যানরা। তাতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথমবার কোন সিরিজ জয়ের স্বাদ পেলো টাইগাররা।

প্রথম ম্যাচ জিতে সিরিজে এগিয়ে থাকা বাংলাদেশের সামনে ছিলো সিরিজ নিশ্চিত করার হাতছানি। শুধু সিরিজ নয়, অজেয় ইংল্যান্ডের বাঁধা টপকে যাওয়ার সুযোগও। ক্রিকেটের তিন সংস্করণের কোন ফরম্যাটেই এখন পর্যন্ত একমাত্র ইংল্যান্ডের বিপক্ষেই কোন সিরিজ জিততে পারেনি বাংলাদেশ। ইংল্যান্ডের জন্য ম্যাচটি ছিলো বাঁচা-মরার লড়াই। এরকম ভিন্ন ভিন্ন সমীকরণ সামনে নিয়ে মাঠে নামে বাংলাদেশ ও ইংল্যান্ড।

এদিন সফরকারিদের ব্যাটিং অর্ডারের শুরুতেই পরিবর্তন দেখা যায়। ফিল সল্টের সাথে জশ বাটলারের জায়গায় ইনিংস শুরু করেন ডেভিড মালান। মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ইংল্যান্ডের শুরুর আভাস দিলেও ছন্দ হারিয়েছে দ্রুতই। ইনিংসের তৃতীয় ওভারে প্রথম সাফল্য পায় বাংলাদেশ। তাসকিন আহমেদের বলে হাসান মাহমুদের হাতে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন মালান। এর পর দলের হাল ধরার চেষ্টা করেন ফিল সল্ট ও মঈন আলী। নাসুম আহমেদের করা ষষ্ঠ ওভার থেকে ১৩ রান তুলে নিয়ে পাওয়ার প্লে শেষে ভাল স্থানে ছিলো ইংলিশরা। ৬ ওভার শেষে তাদের সংগ্রহ দাড়ায় ১ উইকেটে ৫০ রান। তবে এরপরই ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নেয় বাংলাদেশ।

৭ম ওভারে বোলিংয়ে এসেই দলকে ব্রেক থ্রু এনে দেন সাকিব। দারুণ এক টার্নিং ডেলিভারিতে পরাস্ত হয়ে সাকিবের হাতে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ফিল সল্ট। পরের ওভারে দারুণ এক ইয়র্কারে ইংলিশ অধিনায়ক জশ বাটলারের স্টাম্প ভেঙে দেন হাসান মাহমুদ। টানা দুই ম্যাচে এই পেসারের কাছেই উইকেট হারালেন জশ বাটলার। ৮ম ওভারে প্রথমবার বোলিংয়ে আসেন মেহেদী মিরাজ। বল হাতে নিয়েই অধিনায়কের আস্থার প্রতিদান দিয়েছেন মিরাজ। মাত্র ২ রান দিয়ে সে ওভারের শেষ বলে মঈন আলির উইকেট তুলে নেন এই অফ স্পিনার। পাওয়ার প্লের পর স্কোরবোর্ডে ৭ রান যোগ করতেই ৩ উইকেট হারিয়ে ব্যাকফুটে চলে যায় ইংলিশরা।

তবে ১৫তম ওভারে ম্যাচের পুরো নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় বাংলাদেশ। দ্বিতীয় স্পেলে বল করতে এসে এক বলের ব্যবধানে দুই ইংলিশ ব্যাটসম্যানকে সাজঘরে ফেরান মিরাজ। দ্বিতীয় বলে স্যাম কারেন এবং চতুর্থ বলে ক্রিস ওকসকে স্টাম্পিংয়ের ফাঁদে ফেলেন তিনি। 

এতে বড় সংগ্রহের আশা ভেস্তে যায় ইংলিশদের। নিজের শেষ ওভারেও দলকে উইকেট এনে দিয়েছেন মিরাজ। নিজের কোটার শেষ বলে ক্রিস জর্ডানের উইকেট তুলে নিয়ে ম্যাচটি রাঙিয়ে গেলেন তিনি। ৪ ওভারে মাত্র ১২ রান দিয়ে ৪ উইকেট নিয়ে বোলিং শেষ করেন মিরাজ। যা তার ক্যারিয়ার সেরা। সেই সাথে দলকে নিয়ে যান সুবিধাজনক স্থানে। এই ম্যাচের আগে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে ২৯ রানে ৩ উইকেট ছিলো তাঁর সেরা।

বেন ডাকেট একাই যা একটু লড়াই করেছেন। সতীর্থদের যাওয়া-আসার মিছিলে মাটি কামড়ে পরে ছিলেন তিনি। স্পিনারদের সুইপ-রিভার্স সুইপে রান বের করেছেন। তবে ইনিংসের শেষ ওভারের প্রথম বলেই মুস্তাফিজের একটি লাফিয়ে উঠা ডেলিভারিতে পরাস্ত হন এই বাঁ-হাতি ব্যাটার। বেশ খানিকটা দৌড়ে এসে শূন্যে ভেসে দারুণ এক ক্যাচ নেন শান্ত। যা বাংলাদেশের সমর্থকদের চোখে লেগে থাকবে অনেকদিন। ২৮ রান আসে ডাকেটের ব্যাট থেকে, যা ম্যাচে দলের পক্ষে সর্বোচ্চ। গ্রাউন্ড ফিল্ডিংয়ে আজ দুর্দান্ত করেছে বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। তাদের শরীরি ভাষাতেই তা ছিলো স্পষ্ট। বেন ডাকেটের পর চতুর্থ বলে রেহান আহমেদ এবং শেষ বলে জফরা আর্চার রান আউট হলে ১১৭ রানে অলআউট হয় ইংল্যান্ড।

১১৮ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা ভাল হয়নি বাংলাদেশের। দুই ওপেনার লিটন দাস ও রনি তালুকদার আশা জাগিয়েও ব্যর্থ হন। দলীয় ১৬ রানে স্যাম কারেনের বলে বাউন্ডারি লাইনের কাছে ফিল সল্টের হাতে লিটন ক্যাচ দিয়ে ফিরলে ভাঙে উদ্বোধনী জুটি। আর্চারের পেসে ঠিকমতো টাইমিং করতে না পারার খেসারত দিয়ে ২৭ রানে আউট হন রনি তালুকদার। পাওয়ার প্লে'র ৬ ওভার শেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ দাড়ায় ২ উইকেটে ৩২ রান।

লক্ষ্য ছোট হলেও দ্রত দুই উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় বাংলাদেশ। সেই সাথে নিয়ন্ত্রিত বোলিংকে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের হাত খুলে খেলতে দেন নি ইংলিশরা। সিঙ্গেল-ডাবলসে রানের চাকা সচল রাখেন শান্ত ও তৌহিদ হৃদয়। তবে ম্যাচের ১০ম ওভারে এসে আদিল রশিদের উপর চড়াও হন তৌহিদ হৃদয়। সে ওভার থেকে দুই চারে ১০ রান তুলে নেয় দল। পরের ওভারে অভিষেক ম্যাচ খেলা রেহান আহমেদের অফ স্টাম্পের অনেক বাইরের বল খেলতে গিয়ে উইকেট বিলিয়ে দেন হৃদয়। নিজের দ্বিতীয় বলেই প্রথম আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি উইকেটের দেখা পেয়ে যান এই লেগ স্পিনার। ৫৬ রানে তৃতীয় উইকেটের পতন হয় বাংলাদেশের।

তবে চতুর্থ উইকেটে শান্ত ও মিরাজ ৪১ রানের জুটি গড়ে দলকে জয়ের কাছাকাছি নিয়ে যান। ওভার প্রতি রানরেট বাড়লেও ইংলিশদের দেখেশুনে খেলতে থাকেন দুজনে। এসময় বাউন্ডারির চেয়ে স্ট্রাইক বদলের ক্ষেত্রে মনেযোগ দেন দুই ব্যাটার। তবে আদিল রশিদের করা ইনিংসের ১৪তম ওভার থেকে ১১ এবং মঈন আলীর করা পরের ওভার থেকে ১২ রান তুলে নিয়ে বলের সাথে রানের ব্যবধান কমিয়ে আনেন দুই ব্যাটসম্যান। তবে ১৬তম ওভারে আর্চারের বলে মিডঅনে সহজ ক্যাচ দিয়ে ফেরেন মিরাজ।

ক্রিজে এসে রানের খাতা খোলার আগেই বিদায় নেন সাকিব আল হাসান। দল যখন জয় থেকে ১৮ রান দূরে তখন মঈন আলীর শিকারে পরিণত হন তিনি। পরের ওভারে আর্চারের বলে বোল্ড হয়ে যান আফিফ হোসেন। ম্যাচে নাটকীয়তা ফিরে আসে। শেষ দুই ওভারে বাংলাদেশের জয়ের জন্য প্রয়োজন হয় ১৩ রানের।

ক্রিস জর্ডানের করা ১৯তম ওভারের প্রথম বলে বাউন্ডারি মেরে সে শঙ্কা কমান নাজমুল হোসেন শান্ত। স্ট্রাইকে গিয়ে জর্ডানকে টানা দুই চার মেরে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক সিরিজ জয় নিশ্চিত করেন তাসকিন আহমেদ। ৭ বল হাতে রেখেই জয়ের বন্দরে নোঙর করে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭