ইনসাইড পলিটিক্স

কাদিয়ানিদের ওপর অগ্নিসন্ত্রাস: বিএনপি-জামায়াতের নতুন ষড়যন্ত্র


প্রকাশ: 12/03/2023


Thumbnail

পঞ্চগড়ে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের (কাদিয়ানি) ওপর অগ্নিসন্ত্রাসী হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে টালমাটাল অবস্থা বিরাজ করছে। এ ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত করতে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিএনপি। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সোমবার (৬ মার্চ) রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সম্প্রতি পঞ্চগড়ে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের ওপর হামলার বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মন্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ করা হয়। প্রকৃতপক্ষে সরকার জনগণের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের চলমান আন্দোলন থেকে জনগণের দৃষ্টি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য এ ভয়ানক হীন সাম্প্রদায়িক সংঘাত সৃষ্টি করছে।

অন্যদিকে রোববার (১২ মার্চ) ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাসান মাহমুদ। ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী বলেছেন,‘পঞ্চগড়ে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের ওপর অগ্নিসন্ত্রাসী হামলা এবং উস্কানি বিএনপি-জামাতের ২০১৩-১৪-১৫ সালের নৈরাজ্যের মতোই এবং ঢাকা ও লন্ডন থেকে তা মনিটর করা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘বাঁশের কেল্লা’ কারা পরিচালনা করে আপনারা জানেন। সেই বাঁশের কেল্লা  পেজ থেকে এবং কাদিয়ানিদের বিরুদ্ধে ‘ঐক্যপরিষদে’র পক্ষ থেকে রুমিন ফারহানা, বিএনপির সাবেক এমপি হারুন অর রশীদের ফেসবুক পেজ থেকে উস্কানি ছড়ানো হয়েছে। একইসাথে এখানকার যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তার মোটর সাইকেল সংক্রান্ত উস্কানি ছড়িয়েছে, শিবিরের তেঁতুলিয়ার সভাপতি সেও উস্কানি ছড়িয়েছে এবং এখানে যারা যুক্ত ছিলো তাদের বেশিরভাগই বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মী। তারা ব্যবহার করেছে অন্য ব্যানার, কিন্তু মূলত: তারা বিএনপি-জামাতের নেতাকর্মী।’

একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, পঞ্চগড়ে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের ওপর অগ্নিসন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটিয়ে ষড়ষন্ত্রের নতুন জাল বুনতে চেষ্টা করছে বিএনপি-জামায়াত। আবার অন্যদিকে এই ঘটনায় নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করে লোক দেখানো নাটকও সাজিয়েছে দলটি। পঞ্চগড়ে সাম্প্রদায়িক গণ্ডগোল লাগিয়ে সারাদেশে একটা গণ্ডগোল লাগানোর চেষ্টা ছিল তাদের। সূত্রগুলো বলছে, জামায়াতের ছাত্র সংগঠন দ্বারা পরিচালিত সামাজিক যোগাযোগ  মাধ্যম ফেইসবুকের পেইজ ‘বাঁশের কেল্লা’র মাধ্যমে আহমদিয়া (কাদিয়ানি) সম্প্রদায়ের ওপর হামলার উস্কানি দেওয়া হয়। এছাড়া পদত্যাগকৃত বিএনপির সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি ব্যারিষ্টার রুমিন ফারহানার ফেইসবুক পেইজ থেকেও এই ধরনের উস্কানির তথ্য পাওয়া গেছে।      

সোমবার (৬ মার্চ) রাতে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মির্জা ফখরুল বলেন, এ ঘটনায় সরকার এখন পর্যন্ত প্রায় ৯০ জন বিএনপি সমর্থককে গ্রেপ্তার করেছে, যা সম্পূর্ণ বেআইনি। রেলমন্ত্রী সুজন পঞ্চগড় সফরে গেলে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের সদস্যরা তাকে স্পষ্ট জানান যে, আক্রমণকারীরা তার সঙ্গেই রয়েছেন। সভা মনে করে, এ ঘটনা প্রমাণ করে সরকারের হীন পরিকল্পনা অনুযায়ী আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের দ্বারা এ সাম্প্রদায়িক হামলা সংঘটিত হয়েছে। এ সরকার অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করার পর থেকেই ধারাবাহিকভাবে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর একের পর এক হামলা, অগ্নিসংযোগ ও লুটের ঘটনা ঘটছে। যা এ অবৈধ সরকারের ক্ষমতায় অবৈধভাবে টিকে থাকার নীল নকশার অংশ। এ বিষয়ে নিরপেক্ষ তদন্ত করার জন্য দলের ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি দল অতি দ্রুত পঞ্চগড়ে সফর করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

রোববার (১২ মার্চ) দুপুরে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদের নেতৃত্বে একটি দল পঞ্চগড় জেলার বোদা উপজেলার ফুলতলা আহমদনগরে সন্ত্রাসীদের হামলায় আহমদিয়া সম্প্রদায়ের ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িঘর পরিদর্শনে যান। বোদা’র সংসদ সদস্য রেলপথমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন, আওয়ামী লীগের রংপুর বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, পঞ্চগড় জেলা সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার সাদাত, জেলার ডিসি মো. জহুরুল ইসলাম, পুলিশ সুপার এস এম সিরাজুল হুদা এ সময় উপস্থিত ছিলেন। 

ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনকালে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘গত ২, ৩, ৪ মার্চ আহমদিয়া সম্প্রদায়ের ওপর যে নারকীয় হামলা পরিচালনা করা হয়েছে সেটি সরেজমিনে দেখার জন্য বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আমরা এসেছি। এই জঘন্য হামলা পরিচালনা করার আগে থেকেই কিন্তু উস্কানি ছড়ানো হয়েছে। ২০১৩, ১৪, ১৫ সালে যেভাবে সরকারি স্থাপনায় আক্রমণ পরিচালনা করা হয়েছিল ঠিক একই কায়দায় আহমদিয়া সম্প্রদায়ের মাহফিলকে কেন্দ্র করে আগে থেকে উস্কানি ছড়ানো হয়েছে। উস্কানি ছড়িয়ে সংগঠিত করে তারপর এই হামলা পরিচালনা করা হয়েছে। যারা সারা বাংলাদেশে বিশৃঙ্খলা তৈরি করতে চায়, ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চায়, তাদের সেই মহাপরিকল্পনার অংশ হিসেবে এই হামলা পরিচালনা করা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘বাঁশের কেল্লা’ কারা পরিচালনা করে আপনারা জানেন। সেই বাঁশের কেল্লা  পেজ থেকে এবং কাদিয়ানিদের বিরুদ্ধে ‘ঐক্যপরিষদে’র পক্ষ থেকে রুমিন ফারহানা, বিএনপির সাবেক এমপি হারুন অর রশীদের ফেসবুক পেজ থেকে উস্কানি ছড়ানো হয়েছে। একইসাথে এখানকার যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তার মোটর সাইকেল সংক্রান্ত উস্কানি ছড়িয়েছে, শিবিরের তেঁতুলিয়ার সভাপতি সেও উস্কানি ছড়িয়েছে এবং এখানে যারা যুক্ত ছিলো তাদের বেশিরভাগই বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মী। তারা ব্যবহার করেছে অন্য ব্যানার, কিন্তু মূলত: তারা বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মী।’

হাছান মাহমুদ বলেন, ‘ধর্মের নামে এভাবে কারো ওপর হামলা পরিচালনা করা ইসলাম কোনোদিন অনুমোদন করে না। রাসুল (সা.) এভাবে মানুষের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়ার জন্য কখনো বলেন নাই। এভাবে ইসলামের নামে যারা মানুষের ওপর হামলা পরিচলনা করে তারা ইসলামেরও শত্রু। তারা ইসলামের গায়ে কালিমা লেপন করছে। এই শত্রুদের প্রতিহত করার জন্য আমি দেশবাসীকে আহ্বান জানাই এবং তাদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি বিধান করতে আমরা বদ্ধপরিকর।’ 

এসব বিষয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বিএনপি ইসলামপন্থী দলগুলোকে বরাবরই আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে আসছে। পঞ্চগড়ের ঘটনার দিনও স্থানীয় বিএনপির নেতা-কর্মীরা জামায়াতের সাথে যুক্ত হয়ে আহমদিয়াদের (কাদিয়ানি) ওপর হামলা চালিয়েছে- যা গণমাধ্যমের খবরে প্রকাশিত হয়েছে। তবে তারা ধর্মের নামে অগ্নি-সন্ত্রাস করছে। ইসলাম ধর্ম শান্তির ধর্ম। ইসলাম ধর্ম কখনই এ ধরনের কর্মকাণ্ডকে সমর্থন করে না। তাছাড়া, পরোক্ষভাবে এ ঘটনা ঘটিয়ে বিএনপির নেতারা নিজেদের দোষ ঢাকার জন্য সরকারের রেলমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের ওপর দোষ চাপানোর চেষ্টা করছে। বিএনপি নেতা মির্জা ফকরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্যে এইটা স্পষ্ট। স্থানীয় লোকজন এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষীর ভিত্তিতেই পুলিশ স্থানীয় বিএনপি কর্মীদের গ্রেপ্তার করেছে। তবুও মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এসব ঘটনার দায় সরকারের ওপর চাপাতে চেষ্টা করছেন। মূলত আহমদিয়া (কাদিয়ানি) সম্প্রদায়ের ওপরে হামলার ঘটনা ঘটিয়ে নতুন ষড়যন্ত্রের জাল বুনতে চাইছে বিএনপি। কিন্তু এই ষড়যন্ত্র খুব একটা বেশি ফলপ্রসু হয়নি। এখন দেখার বিষয় এই ষড়যন্ত্র করে বিএনপি কতদূর এগিয়ে যেতে পারে?


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭