ইনসাইড আর্টিকেল

সঞ্চয় ভেঙে ও ধারদেনা করে চলছে সংসার


প্রকাশ: 13/03/2023


Thumbnail

নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়তে বাড়তে ক্রয়ক্ষমতার বাহিরে চলে যাচ্ছে দিনমজুর,নিম্নবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের লোকজনের। 

নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে,লাগাম ধরার যেন নেই কেউ। এতে বিপাকে পড়েছেন নিম্নআয়ের মানুষ। রোজগারের চেয়ে তাদের খরচ বেশি। তাই সংসারের চাহিদা মেটাতে সঞ্চয় ভেঙে ও ধারদেনা করে চলতে হচ্ছে। এরপরেও কুলিয়ে উঠতে না পেরে খাদ্যতালিকা থেকে বাদ দিতে হচ্ছে মাছ-মাংস ও ফলমূল।

সোমবার (৬ মার্চ) দিনব্যাপী ময়মনসিংহ নগরীর প্রধান কাঁচাবাজার ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য মিলেছে।

সকালে নগরীর সানকিপাড়া থেকে  অটোরিকশায় গাঙ্গিনারপাড় যাওয়ার পথে কথা হয় চালক জাকির মিয়ার সঙ্গে। তিনি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে,লাগাম ধরার যেন নেই কেউ। এতে বিপাকে পড়েছেন নিম্নআয়ের মানুষ। রোজগারের চেয়ে তাদের খরচ বেশি। তাই সংসারের চাহিদা মেটাতে সঞ্চয় ভেঙে ও ধারদেনা করে চলতে হচ্ছে। এরপরেও কুলিয়ে উঠতে না পেরে খাদ্যতালিকা থেকে বাদ দিতে হচ্ছে মাছ-মাংস ও ফলমূল। ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা। দুই ছেলে,এক মেয়েসহ পাঁচজনের সংসার।

জাকির বলেন,দুইদিন আগেও অটোরিকশার দৈনিক জমা ছিল ৫০০ টাকা। এখন তা বেড়ে হয়েছে ৫৫০ টাকা। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ার অজুহাতে টাকা বাড়িয়েছে মালিকরা। কিন্তু রোজগার বাড়েনি। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত রিকশা চালিয়ে এক হাজার থেকে ১২ শত  টাকা রোজগার করা যায়।এর মাঝে ৫৫০ টাকা মালিককে জমা দিলে ৬০০ টাকা থাকে। এই ৬০০ টাকা দিয়ে দুইদিন চলতে হয়। আজ সারাদিন রিকশা চালাতে পারলেও আগামীকাল বাড়িতে বসে থাকতে হবে। কারণ,সিটি করপোরেশনের নিয়ম অনুযায়ী একদিন লাল রঙের অটোরিকশা চলবে ও অন্যদিন নীল রঙের রিকশা চলবে।

তিনি আরও বলেন,আমার সংসারে দুইদিনে পাঁচ কেজি চাল লাগে,যার দাম ৩২০ টাকা। বাকি ১৮০ টাকা দিয়ে দুইদিনের সবজি,তেল,আলু ও ডালের দামই হয় না। নিজের গচ্ছিত সঞ্চয় ভেঙে অথবা প্রতিবেশীর কাছে ধারদেনা করে সংসার চালাতে হয়। মাসের পর মাস ডাল ও শুকটি খেয়ে দিন পার করছি। মাছ-মাংস ছেলে মেয়েদের কিনে খওয়ানোর সামর্থ্য হয় না। তাই, খাওয়াতেও পারি না। মাছ-মাংস এখন আমাদের কাছে বিলাসিতা ছাড়া কিছুই না।

দুপুরে নগরীর মেছুয়াবাজারে ঘুরে কথা হয় মুরগি বিক্রেতা মোহাম্মদ আলীর সঙ্গে। তিনি বলেন,সপ্তাহের ব্যবধানে দেশি মুরগির দাম কেজিতে ৮০ টাকা বেড়ে ৫৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। এদিকে, ব্রয়লার,সোনালী,সাদা কক,লেয়ার মুরগির দাম বেড়েছে কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা। সোনালী মুরগি ৩৩০ টাকা, ব্রয়লার ২৪০ থেকে ২৫০ টাকা, লেয়ার মুরগি ৩২০ টাকা, সাদা কক ৩১০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।

নগরীর গাঙ্গিনারপাড় এলাকার প্রেস ক্লাবের নিচে জুতা সেলাইয়ের কাজ করেন পরেশ দাস। তার সংসারে দুই ছেলে ও দুই মেয়ে। দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। দুই ছেলের মাঝে এক ছেলে বিয়ে করেছেন। ছেলের বউ নিয়ে পাঁচজনের সংসার।

তিনি বলেন,৪০ বছর ধরে এ কাজই করছি। আমার ভাগ্যের উন্নয়ন হয়নি। দিনের পর দিন যেভাবে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ছে তাতে মনে হচ্ছে, আমার ভাগ্যের অবনতি হয়েছে। আগে তো মাংস বছরে একবার হলেও কিনে খেতে পারতাম। এখন তাও পারি না। করোনার পরে খাসির মাংস কিনে খেতে পারি না। কারণ,এখন দৈনিক ৪০০ টাকার মতো রোজগার করতে পারি। এই টাকা চাল,ডাল,তেল,সবজি কিনতেই লাগে। মাংস কেনার টাকা থাকে না।

সবজি বিক্রেতা আকরাম হোসেন বলেন, বাজারে শীতের সবজি কমে আসছে। তাই,কেজিতে পাঁচ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে। তিনি বলেন,সিম ৩৫ টাকা,লাউ ৬০ টাকা,ফুলকপি-বাঁধাকপি ৩০ টাকা, টমেটো ৩০ টাকা,গাজর ৪০ টাকা,শশা ৩৫ টাকা,বেগুন ৪০ টাকা,মটরশুঁটি ৬০ টাকা, কাঁচা মরিচ ৮০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।

এছাড়া সজনে ১৮০ টাকা, এলাচি লেবু ৩৫ টাকা হালি,পাতি লেবু ৩০ টাকা হালি,ধুন্দল ৫০ টাকা কেজি,পটল ৮০ টাকা,করলা ৭০ টাকা,বরবটি ১৫০ টাকা,পেঁপে ৩০ টাকা কেজি,কাঁচকলা ৩০ টাকা হালি বিক্রি হচ্ছে।

একই বাজারের মাংস বিক্রেতা হেলাল মিয়া বলেন,রোজার পরেই ঈদ। যে কারণে এখন বাজারে গরু-খাসি বিক্রি কমে গেছে। তাই গরুর মাংস সপ্তাহের ব্যবধানে ৫০ টাকা বেড়ে ৭৫০ টাকা, খাসির মাংস এক হাজার টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে দেশি মুরগির ডিম ৭০ টাকা, সোনালী মুরগির ডিম ৬০ টাকা,ফার্মের মুরগির ডিম ৪৫ টাকা,হাঁসের ডিম ৬৫ টাকা হালি বিক্রি হচ্ছে।

মাছ মহালের মাছ বিক্রেতা হিমেল মিয়া বলেন, মাছের দাম কেজিতে ২০ থেকে ২৫ টাকা বেড়েছে। তেলাপিয়া ২০০ টাকা, পাঙাশ ১৮০ টাকা, সিলভার মাছ ২৬০ টাকা, রুই ৩২০ টাকা, রাজপুটি ২৫০ টাকা, কাতলা ৩৫০ টাকা, চাপিলা ৭০০ টাকা, বাইম এক হাজার টাকা, মলা ৪০০ টাকা, টাকি ৪০০ টাকা,পাবদা ৩৫০ টাকা, টেংরা ৫০০ টাকা, বোয়াল ৮০০ টাকা, মাগুর ৪০০ টাকা, শিং ৩৫০ টাকা, কই ২৫০ টাকা, আইড় মাছ এক হাজার টাকা, ফলি মাছ ৫০০ টাকা, গলদা চিংড়ি ৬৫০ টাকা,চিতল ৬৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।

ময়মনসিংহের বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা দিনমজুর,রিকশা, অটোরিকশা ও সিএনজি চালকসহ ১২০ জনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে বিভিন্ন অজুহাতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ছে ঠিকই কিন্তু সেই তুলনায় তাদের রোজগার বাড়েনি। ফলে তাদের সংবাদ চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭