ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

অকাস চুক্তি ও এনপিটি নিয়ে শঙ্কায় চীন, পশ্চিমের সাথে বাড়ছে উত্তেজনা


প্রকাশ: 15/03/2023


Thumbnail

২০২১ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর অকাস (AUKUS অথবা Aukus) নামে একটি নতুন জোট আবির্ভুত হয়ে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন এবং অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন এক ভার্চুয়াল সম্মেলনে যৌথ বিবৃতির মাধ্যমে এই জোটের ব্যাপারে বিশ্বকে জানান। এখানে Aukus এর পূর্ণরূপ হলো- Australia, the United Kingdom, and the United States। স্বাভাবিকভাবেই অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্র- এই তিনটি দেশ হলো অকাসের সদস্য।

সোমবার (১৩ মার্চ) এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চীনের আধিপত্য রুখতে ক্যালিফোর্নিয়ার সান ডিয়েগোর নৌ-ঘাঁটিতে মিলিত হন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক ও অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ। সেখানে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ার অংশগ্রহণে গঠিত জোট অকাস-এর পরিকল্পনা গণমাধ্যমের সামনে তুলে ধরা হয়।

নতুন চুক্তির আওতায় যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে পারমাণবিক শক্তিচালিত তিনটি সাবমেরিন কিনছে অস্ট্রেলিয়া। প্রয়োজনে আরো দুটি ভার্জিনিয়া শ্রেণির সাবমেরিন নিতে পারবে দেশটি। এগুলোর প্রথম চালান আগামী ১০ বছরের মধ্যে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হস্তান্তর করা হবে।

অস্ট্রেলিয়ার কাছে এসএসএন-অকাস মডেলের সাবমেরিন সরবরাহ করবে যুক্তরাজ্য। এ সাবমেরিনগুলো যুক্তরাজ্যের নকশা ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তিতে তৈরি হবে। এর ফলে হাজারো মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি হবে বলে মনে করেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী জানান, দেশটির প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বাড়াতে সর্ববৃহৎ একক কোনো বিনিয়োগ হলো অকাস চুক্তি।

২০২১ সালে তিন দেশ অকাস চুক্তির ঘোষণা দেয়। এ চুক্তির আওতায় নিজেদের মধ্যে হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ও সাইবার যুদ্ধের সরঞ্জাম সংক্রান্ত সহযোগিতা করার কথা রয়েছে। এ চুক্তির শুরু থেকে নিন্দা জানিয়ে আসছে চীন।

এ চুক্তি একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুকে সামনে এনেছে। আর তা হলো, নন-প্রলিফারেশন ট্রিটি (এনপিটি) বা পরমাণু অস্ত্রের বিস্তার রোধ চুক্তির ভবিষ্যৎ। সাধারণভাবে ধরা হতো, পরমাণু শক্তিধর কোনো দেশ এ সংক্রান্ত কোনো প্রযুক্তি বা উপাদান পরমাণু শক্তিধর নয় এমন কোনো দেশের কাছে হস্তান্তর করতে পারবে না। কিন্তু ১৯৬৮ সালে স্বাক্ষরিত এ চুক্তিতে একটি ফাঁক রয়ে গেছে। সেটি হলো চুক্তির অনচ্ছেদ নম্বর-১৪। এতে বলা হয়েছে, জাতিসংঘের কোনো তত্ত্বাবধায়ক সংস্থার অধীনে এ কাজটি করা যাবে। এ সুযোগই নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য।

এই ‘অকাস’ গঠনের চুক্তিকে ‘চরম দায়িত্বজ্ঞানহীন’ ও ‘সংকীর্ণ মানসিকতা’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। চীন এই চুক্তির বিরোধিতা করে বলেছে, অকাস চুক্তি এনপিটির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। জাতিসংঘে নিযুক্ত চীনা মিশন মঙ্গলবার (১৪ মার্চ) বলেছে, ‘যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্য সুস্পষ্টভাবে এনপিটি চুক্তির লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য লঙ্ঘন করছে। দ্বিচারিতার এমন উদাহরণ আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে এনপিটি ব্যবস্থাকে কেবল দুর্বলই করবে।’

চীনা মিশন বিবৃতিতে আরও বলেছে, ‘অকাস প্রকাশিত পারমাণবিক সাবমেরিন সহযোগিতা পরিকল্পনাটি একটি নির্লজ্জ কাজ, যা পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তারের গুরুতর ঝুঁকি তৈরি করছে। পাশপাশি এটি আন্তর্জাতিক এনপিটি ব্যবস্থাকে দুর্বল করবে। অস্ত্র প্রতিযোগিতা উসকে দেবে এবং সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতা নষ্ট করবে।’

যদিও যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ার দাবি, তারা আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে পরমাণু উপাদান এবং প্রযুক্তি হস্তান্তর করবে। তারপরও এনপিটির ভবিষ্যৎ নিয়ে আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেছেন, ‘এ প্রচেষ্টার প্রথম দিন থেকে শুরু করে সবসময় আমরা এনপিটিকে অগ্রাধিকার দিয়েছি।’

আইএইএ প্রধান রাফায়েল গ্রসিও নিশ্চিত করেছেন তাদের তত্ত্বাবধানের কথা। তিনি বলেছেন, ‘আমি বিশ্বাস করি যে, অকাস অংশীদাররা এনপিটির শর্তগুলো পূরণ নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’

তবে সেটিও যে চীনকে স্বস্তি দিচ্ছে না, তা তাদের প্রতিক্রিয়া থেকে স্পষ্ট। চীনের উদ্বেগ এবং অকাসের কর্মকাণ্ড এনপিটি না মানার প্রবণতা তৈরি করতে পারে।

অকাস কেন গঠন করা হলো?

আনুষ্ঠানিকভাবে অকাস (Aukus) গঠনের উদ্দেশ্য হলো ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে (Indo-Pacific region) সমন্বিত নিরাপত্তা ও উন্নতি নিশ্চিতের পাশাপাশি মূল্যবোধের সুরক্ষার কথা বলা হয়েছে।

অকাস চুক্তির আওতায় যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য অস্ট্রেলিয়াকে পরমাণু চালিত সাবমেরিন নির্মাণের প্রযুক্তি দিয়ে সহযোগিতা করবে।

এখানে একটি বিষয় নিশ্চিত বলেই দাবি করছেন বিশেষজ্ঞরা, আর সেটি হলো বিরোধপূর্ণ দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব ঠেকানোই প্রধান লক্ষ্য।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭