ইনসাইড বাংলাদেশ

দল আওয়ামী লীগ, অন্তরে জামায়াত


প্রকাশ: 15/03/2023


Thumbnail

২০১৯ সালে দলের ২১ তম জাতীয় কাউন্সিলের আগে সারাদেশে অনুপ্রবেশকারীদের একটি তালিকা করেছিল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। সে তালিকায় প্রায় পাঁচ হাজার অনুপ্রবেশকারীকে চিহ্নিত করা হয়েছিল। জানা যায়, তালিকাভুক্ত পাঁচ হাজার নেতার মধ্যে আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশকারী ছিলেন দেড় হাজার এবং বিতর্কিত দুই হাজার নেতা। এছাড়া সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনে অনুপ্রবেশকারী ও বিতর্কিত নেতার সংখ্যা প্রায় দেড় হাজার। এ সমস্ত অনুপ্রবেশকারীরা যেন কোন ভাবেই কমিটিতে ঠাঁই না পায় সেজন্য সব জেলায় অনুপ্রবেশকারীদের তালিকা পাঠানো হয়েছিল। পাঠানো হয়েছিল ৮ বিভাগের দায়িত্বে থাকা সাংগঠনিক সম্পাদকের হাতে। কিন্তু সে সময় অনুপ্রবেশকারীদের কতটুকু ঠেকানো গেছে তা নিয়ে এখন আবার নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে। সেই অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে নতুন করে চোখ রাঙ্গানো অভিযোগ উঠেছে। আর এ ধরনের অভিযোগ উঠেছে চট্টগ্রামের সাতকানিয়া-লোহাগাড়ার সংসদ সদস্য আবু রেজা নেজামুদ্দিন নদভী এর বিরুদ্ধে।

অভিযোগ উঠেছে, সম্প্রতি সময়ে তিনি দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়ে বিদ্বেষ ছড়াচ্ছেন। চট্টগ্রামের সাতকানিয়া সদর ইউনিয়নের চিববাড়ি এমএ মোতালেব কলেজের ভবন উদ্বোধন ঘিরে এই বিদ্বেষ ছড়িয়েছেন তিনি। গত শনিবার এক স্মরণ সভায় আবু রেজা নেজামুদ্দিন নদভী দলের এক কেন্দ্রীয় নেতার ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এ ঘটনায় প্রকাশ্যে কেউ কিছু না বললেও নদভী এর এমন আচরণে বিরক্ত স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। কেউ কেউ নদভী এর এমন আচরণে বিস্ময় প্রকাশ করেন। আবার কেউ কেউ তার দলীয় আদর্শ নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। তারা বলেন, নির্বাচনকে ঘিরে এখন বিভিন্ন ধরনের ষড়যন্ত্র হচ্ছে, শুরু হয়েছে বিভিন্ন ধরনের তৎপরতা। এমন পরিপ্রেক্ষিতে দলের ঐক্যবদ্ধ অত্যন্ত জরুরী। সেখানে সাংসদ আবু রেজা নেজামুদ্দিন নদভী দলের মধ্যে বিদ্বেষ ছাড়াচ্ছেন। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন স্থানীয় নেতা বলেন, দলের কারোর বিরুদ্ধে নদভী এর কোন অভিযোগ থাকলে তিনি দলীয় ফোরামে বা কেন্দ্রে বিষয়টি অবহিত করতেন। কিন্তু তিনি সেটি করেননি। বরং তিনি প্রকাশ্যে একজন নেতার বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। যা মোটেও কাম্য ছিল না। ফলে দলের প্রতি তার আনুগত্য এবং দলীয় আদর্শ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। 

নেজামুদ্দিন নদভী এর বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ এবারই প্রথম নয়। এর আগে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তার বিরুদ্ধে উদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের অভিযোগ উঠে। প্রধান ফটকে গিয়ে স্বাগত না জানানোয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতিকে গালাগালি এবং তাদের দিকে তেড়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছিল চট্টগ্রাম-১৫ আসনের এই সাংসদের বিরুদ্ধে। 

খোজঁ নিয়ে জানা গেছে, সাংসদ আবু রেজা নেজামুদ্দিন নদভী আওয়ামী লীগের হলেও প্রকৃত পক্ষে আদর্শিক ভাবে তিনি একজন জামায়াত ঘরোনার। আওয়ামী লীগের সাংসদ হলেও তিনি অন্তরে জামায়াতের আদর্শ ধারন করেন। উল্লেখ্য, আবু রেজা মোহাম্মদ নেজামুদ্দীন নদভীও জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। তার শশুর মুমিনুল হক চৌধুরী। চট্টগ্রামের সবাই মুমিন রাজাকার নামেই চেনে। একাত্তরে আলবদর কমান্ডার মুমিনুল হক চৌধুরী চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা জামায়াতের প্রতিষ্ঠাতা আমির ছিলেন। জামায়াতের কেন্দ্রীয় শুরা সদস্য মুমিনুল হক চৌধুরী জামায়াতের মনোনয়নে দুইবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশও নিয়েছিলেন, যদিও তিনি নির্বাচনে হেরে যান। যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার ফাঁসির পর চট্টগ্রামে গায়েবানা জানাযায় ইমামতি করেছিলেন এই মুমিনুল। এই মুমিনের কন্যা রিজিয়া রেজা চৌধুরীর সঙ্গে বিবাহ হয় সাংসদ আবু রেজা নেজামুদ্দিন নদভী এর। রিজিয়া রেজা চৌধুরীও ২০০২-২০০৪ সালে চট্টগ্রাম মহানগর ইসলামী ছাত্রী সংস্থার সভানেত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৪ সাল পর্যন্ত তিনি দক্ষিণ জেলা জামায়াতের সক্রিয় নেত্রী ছিলেন। 


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭