ইনসাইড আর্টিকেল

‘উত্তাল মার্চের দিনগুলো’: বঙ্গবন্ধু-ইয়াহিয়া বৈঠক - ১৬ মার্চ ১৯৭১


প্রকাশ: 16/03/2023


Thumbnail

১৯৭১ সালের ১৬ মার্চ। অসহযোগ আন্দোলনের নবম দিনে ঢাকায় মুজিব-ইয়াহিয়া বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বঙ্গবন্ধু একটি সাদা গাড়িতে চড়ে বৈঠকে যান। গাড়ির সামনে ছিল একটি কালো পতাকা। আর গাড়ির উইন্ডস্ক্রিনে ছিল বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত একটি পতাকার প্রতিকৃতি এবং দলীয় প্রতীক নৌকা। প্রেসিডেন্ট ভবনের উদ্দেশ্যে বের হওয়ার পূর্বে বঙ্গবন্ধু স্থানীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনা করেন। এর আগের দিন ইয়াহিয়া বাংলাদেশে আসেন ঠিকই কিন্তু বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের সঙ্গে সাক্ষাত করেননি।

অসহযোগ আন্দোলনের মাস মার্চ। বিশ্ব মানচিত্রে নতুন একটি বাংলাদেশ নামক মানচিত্র সৃষ্টির মাস এই মার্চ মাস। এ মাসেই বীর বাঙালি স্বাধীনতার নেশায় মহান মুক্তিযদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। উত্তাল এই মার্চেই জন্ম হয়েছিল স্বাধীন বাংলাদেশের। ‘উত্তাল মার্চের দিনগুলো’র ষষ্ঠদশ পর্বে থাকছে ১৬ই মার্চের ঘটনাপ্রবাহ।

১৬ মার্চ ১৯৭১, সকাল পৌনে ১১টা। ধানমণ্ডির বাড়ি থেকে বঙ্গবন্ধুর গাড়ি বের হল। বঙ্গবন্ধুর ব্যবহৃত মাজদা গাড়ির ফ্ল্যাগস্ট্যান্ডে শোক আর প্রতিবাদের প্রতীক কালো পতাকা উড়ছে, আর উইন্ড স্ক্রিনে বাংলাদেশের প্রস্তাবিত পতাকা। বাঙালি হত্যার প্রতীকী প্রতিবাদ হিসেবে গাড়িতে কালো পতাকা উড়িয়ে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে বৈঠকে বসেন বঙ্গবন্ধু। ঢাকায় প্রেসিডেন্ট ভবনে ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে আড়াই ঘণ্টা বৈঠক করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। প্রেসিডেন্ট ভবনের বাইরে বাঙালি ইপিআর সদস্যদের হাতে ছিল বাঁশের লাঠি। পাকিস্তানি সামরিক কর্তৃপক্ষ ইপিআর জওয়ানদের হাত থেকে সেদিন অস্ত্র তুলে নেয়।

সকাল থেকেই উৎসুক জনতা অপেক্ষা করছিল বঙ্গবন্ধু ইয়াহিয়া খানের বৈঠকের ফল কি হয় তা জানতে। এক হাতে কালো পাইপ, অন্য হাতটি নাড়ছেন জনতার উদ্দেশ্যে। সঙ্কট নিরসনের আন্তরিক আশা নিয়ে তিনি যাচ্ছেন প্রেসিডেন্ট হাউসে ইয়াহিয়ার সঙ্গে বৈঠক করতে। সকাল ১০টায় শুরু হওয়া বৈঠকটি শেষ হয় দুপুর ১২টা ৫০ মিনিটে।

বৈঠক শেষে নির্বাচনে জয়ী পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ দল আওয়ামী লীগের প্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আলোচনা শেষে প্রেসিডেন্ট ভবন থেকে বেরিয়ে অপেক্ষমাণ দেশি-বিদেশি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি রাজনৈতিক এবং অন্যান্য সমস্যা সম্পর্কে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলোচনা করেছি। আরও আলোচনা হবে। কাল সকালে আমরা আবার বসছি। এর চেয়ে বেশি কিছু আমার বলার নেই।’

প্রেসিডেন্ট ভবন থেকে নিজ বাসভবনে ফিরে বঙ্গবন্ধু দলের শীর্ষস্থানীয় সহকর্মীদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। গভীর রাত পর্যন্ত আলোচনা চলে।

সংবাদ সংস্থা এএফপির খবরে সেদিন বলা হয়, ভারত সরকার তার ভূখণ্ডের ওপর দিয়ে সব বিদেশি বিমানের পূর্ব পাকিস্তানে যাতায়াতের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। পশ্চিম পাকিস্তান থেকে বিদেশি বিমানে পূর্ব পাকিস্তানে সৈন্য পরিবহন বন্ধ করার জন্যই এ ব্যবস্থা।

ঢাকায় আর্ট কলেজের ছাত্র-শিক্ষকরা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সভা করেন। সভাশেষে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন নেতৃত্বে মিছিল হয়।

 শাসনতন্ত্র প্রণয়নের আগে আওয়ামী লীগ ও পিপলস পার্টির সমন্বয়ে কোয়ালিশন সরকার গঠনে পিপিপি চেয়ারম্যান ভুট্টোর প্রস্তাবের তীব্র নিন্দা ও সমালোচনা করে এদিনও পশ্চিম পাকিস্তানের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও নেতারা বিবৃতি দেন।

করাচিতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি কাজী ফয়েজ মোহাম্মদ বলেন, গণতন্ত্রের নিয়ম অনুযায়ী সংখ্যাগরিষ্ঠ দল একটি, তাই সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে, অন্যের কাছে নয়।

বাংলাদেশে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে সেনা ও অস্ত্র পরিবহনের কাজে শিপিং করপোরেশনের জাহাজ ব্যবহার করার প্রতিবাদ জানিয়ে করাচিতে করপোশেন কার্যালয়ে চিঠি দেন দুজন পরিচালক।

(সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক, রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী ‘৭১ এর দশ মাস’)।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭