কোর্ট ইনসাইড

বিএনপি-জামায়াতপন্থী আইনজীবীদের ব্যালট ছিনতাই-ভাঙচুর, মামলা


প্রকাশ: 16/03/2023


Thumbnail

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ২০২৩- ২৪ সালের নির্বাচন ১৫ ও ১৬ মার্চ। পূর্ব নির্ধারিত তারিখ হিসেবে আজ বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) দ্বিতীয় দিনের ভোট গ্রহণ অনষ্ঠিত হয়েছে। এর আগে আগামী ১৫ ও ১৬ মার্চ অনুষ্ঠিত নির্বাচনের জন্য গত ২৩ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করে একটি নোটিশ জারি করা হয়। আজ বৃহস্পতিবার সুপ্রীম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে দ্বিতীয় দিনের ভোটগ্রহণের দিনও বিএনপি ও আওয়ামী লীগপন্থী আইনজীবীদের মধ্যে আবারও হট্টগোল ও ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটেছে। সকাল থেকেই টানা মিছিল ও শ্লোগানে উত্তাল হয়ে ওঠে সুপ্রীম কোর্ট এলাকা।

এদিকে গত মঙ্গলবার (১৪ মার্চ) রাতে বিএনপি এবং জামায়াত পন্থীদের ভাঙচুর-সন্ত্রাসের ঘটনা এবং গতকাল বুধবার (১৫ মার্চ) নির্বাচন বানচালের জন্য ভাঙচুর ও সন্ত্রাসের ঘটনায় রাজধানীর শাহবাগ থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলার বাদী হয়েছেন সুপ্রীম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচন সাব-কমিটির আহবায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট মো. মুনিরুজ্জামান। এই মামলায় (মামলা নং ৩০/১১৫, তারিখ: ১৫ মার্চ) বিএনপিপন্থী আইনজীবী মাহবুব উদ্দিন খোকন, রহুল কুদ্দুস কাজল, কামরুল হাসান সজলসহ ১২ জনকে আসামী করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

মামলার অভিযোগে বলা হয়, মঙ্গলবার (১৪ মার্চ) রাতে রাত ৮টার দিকে বিএনপি-জামায়াতপন্থী আইনজীবীরা সুপ্রীম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচন বানচালের জন্য রাত ৮ টার দিকে সুপ্রীম কোর্ট আইনজীবী সমিতির তৃতীয় তলায় কনফারেন্স রুমে ব্যারিষ্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন এবং মোহাম্মদ রহুল কুদ্দুস কাজলের নেতৃত্বে শতাধিক আইনজীবী বেআইনী প্রবশ করে ভাঙচুর, ব্যালট চুরি এবং ভয়ভীতি প্রদর্শন করে। 

মামলার অভিযোগে আরও বলা হয়, ১৫ মার্চ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপি-জামায়াতপন্থী আইনজীবী কর্তৃক বড় ধরনের নাশকতা ও ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের সম্ভাবনার আগাম গোয়েন্দা তথ্য থাকায় সুপ্রীম কোর্ট চত্বরে পুলিশ এব এপিবিএন ফোর্স মোতাযেন করা হয়। এদিন নির্বাচন কমিশন কার্যক্রম শরু করতে গেলে, সকাল থেকেই বিএনপি-জামায়াতপন্থী আইনজীবী ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন এবং রুহুল কুদ্দুস কাজল, সাংবাদিক, আইনজীবী ও বহিরাগতদের নিয়ে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়ে  নির্বাচন কার্যক্রমে বাধার সৃষ্টি করতে আক্রমনাত্মক আচরণ শুরু করে।            

সূত্র জানায়, আজ বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) সুপ্রীম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে পুলিশের নিরাপত্তা বেষ্টনীতে দ্বিতীয় দিনের ভোটগ্রহণ চলছে। নতুন নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠনের দাবিতে বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা দফায় দফায় বিক্ষোভ করছেন। বেলা ১১টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত ভোট কেন্দ্রের মুখে বিএনপি ও আওয়ামী লীগপন্থী আইনজীবীদের মধ্যে হট্টগোল ও ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে। এদিকে সুপ্রীম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আদালত প্রাঙ্গণে আজও বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়।

পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নারী পুলিশ ও আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নসহ (এপিবিএন) পাঁচ শতাধিক পুলিশ সুপ্রীম কোর্ট প্রাঙ্গণে মোতায়েন করা হয়েছে। সমিতির সভাপতি ও সম্পাদকসহ আওয়ামী লীগ অংশের মনোনীত উপ-কমিটির আহ্বায়ক মো. মনিরুজ্জামানের নেতৃত্বে ভোটগ্রহণ হচ্ছে। এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকে বিরত রয়েছেন বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা। নতুন নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠনের দাবিতে আন্দোলন করছেন তারা।

বুধবার ( ১৫ মার্চ) যা ঘটেছিল

দিনভর হট্টগোল, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, পুলিশের লাঠিচার্জ, ভাংচুর, পাল্টাপাল্টি মিছিল আর শ্লোগানের মধ্যে দিয়ে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনের প্রথম দিনের ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়। সমিতির সভাপতি ও সম্পাদকসহ আওয়ামী লীগ অংশের মনোনীত উপ-কমিটির আহ্বায়ক মো. মনিরুজ্জামানের নেতৃত্বে ভোটগ্রহণ হয়। নির্বাচনে আওয়ামীপন্থী আইনজীবীরা ভোট প্রদান করলেও ভোট প্রদান থেকে বিরত থেকেছেন বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা। গতকাল (বুধবার) দুপুর থেকে শুরু হওয়া ভোটে দুই হাজার ২১৭ আইনজীবী ভোট দিয়েছেন বলে জানান আওয়ামী লীগ সমর্থিত সাদা প্যানেলের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির যুগ্ম-আহ্বায়ক খান মোহাম্মদ শামীম আজিজ।

নির্বাচন পরিচালনা সংক্রান্ত কমিটি নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি-সমর্থিত আইনজীবীদের মধ্যে দ্বন্দ্বের জের ধরে এই হট্টগোলের সৃষ্টি হয়। হট্টগোলের কারণে নির্ধারিত সময় সকাল ১০টায় ভোটগ্রহণ শুরু করা যায়নি। নির্ধারিত সময়ের প্রায় দুই ঘণ্টা পর ভোটগ্রহণ শুরু হয়। সকাল পৌনে ১০টা থেকে ভোটকেন্দ্রে অবস্থান নেন বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা। তারা নতুন নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠনের দাবিতে শ্লোগান দিতে থাকেন। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ভোটকেন্দ্রের ভেতরে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ। এসময় বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের মিলনায়তনের ভেতর থেকে বের করে দেয় পুলিশ। পুলিশের লাঠিচার্জে আইনজীবী ও সাংবাদিকসহ প্রায় ৩০ জন আহত হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনে দুপুর ১২টার দিকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। পরে একাধিকবার বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা সংগঠিত হয়ে ভোটকেন্দ্রের দিকে বিক্ষোভ নিয়ে এগিয়ে আসেন। পুলিশ ধাওয়া ও লাঠিচার্জ করে বারবার তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

পরে বিকেল ৩টার দিকে প্রেস ব্রিফিং করেন বিএনপি সমর্থিত প্যানেলের সভাপতি ও সম্পাদক প্রার্থী। এরপর সাড়ে ৩টার দিকে তারা মিছিল নিয়ে সমিতি প্রাঙ্গণে থাকা ভোটের প্যান্ডেলের দিকে যান। এক পর্যায়ে প্যান্ডেল ভাঙচুর ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এর পরপরই শ্লোগানসহ পাল্টা মিছিল করেন আওয়ামীপন্থী আইনজীবীরা। বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা সমিতি ভবনের মিলনায়তনের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। তাদের আবারও ধাওয়া করে পুলিশ। এমন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে সমিতির দুই দিনব্যাপী ভোটগ্রহণের প্রথম দিন অতিবাহিত হয়।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭