কোর্ট ইনসাইড

২০০৬ সালের পুণরাবৃত্তি ঘটাচ্ছে বিএনপি-জামায়াত!


প্রকাশ: 16/03/2023


Thumbnail

দেশের সর্বোচ্চ আদালতে নজিরবিহীন তাণ্ডব চালিয়েছে বিএনপি-জামায়াতপন্থী আইনজীবীরা। সুপ্রীম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গত দুই দিনে নির্বাচনকে বানচাল করার লক্ষ্যে পূর্ব-পরিকল্পিতভাবে নাশকতামূলক ভাঙচুর ও সন্ত্রাস চালিয়েছে তারা। ২০০৬ সালেও দেশের সর্বোচ্চ আদালতে ভাঙচুর-সন্ত্রাসের মতো তাণ্ডব চালিয়েছিল বিএনপি-জামায়াত। জোট সরকারের আমলে রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ড. ইয়াজ উদ্দিন আহম্মেদের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার পদ গ্রহণ ও কার্যক্রম পরিচালনাকে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে তিনটি রিট করা হয়েছিল, এসব রিটের রায়ের ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিএনপি-জামায়াত দেশের সর্বোচ্চ আদালতে ভাঙচুর এবং সন্ত্রাসের ঘটনা ঘটিয়েছিল বলে জানিয়েছে একাধিক সংশ্লিষ্ট সূত্র।  

সূত্রগুলো বলছে, সে সময়ে অন্যান্য উপদেষ্টাদের সাথে কোনো ধরনের পরামর্শ না করেই সব সিদ্ধান্ত একাই নিচ্ছিলেন অধ্যাপক ইয়াজ উদ্দিন আহম্মেদ। বিএনপি - জামায়াতের বিরুদ্ধে অভিযোগ, ইয়াজ উদ্দিন আহমেদ কিভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার পদ গ্রহণ করে? - এ বিষয়টিকে চ্যালেঞ্জ করে সে সময়ে সুপ্রীম কোর্টে রিট করা হয়েছিল। এছাড়া ইয়াজ উদ্দিন আহম্মেদের তত্ত্ববধায়ক সরকারের প্রধান হওয়া এবং কিভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করেন? - এ বিষয়গুলোকে চ্যালেঞ্জ করে আরও দুইটি রিট করা হয়। 

সূত্র জানায়, এসব রিটের রায় হওয়ার কথা ছিল ২০০৬ সালের ৩০ নভেম্বর। যখন রিটের রায় হওয়ার সময় হলো, তখন বিএনপির মনোনীত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের যিনি প্রধান ছিলেন, তিনি আদালত থেকে সব নথি তুলে নিয়ে আসেন তার কাছে এবং এ রায় ঘোষণা বন্ধ করে দেন। এই নজিরবিহীন ঘটনায় আইনজীবীরা তখন প্রতিবাদ জানাতে গেলে বিএনপি-জামায়াত সম্মিলিতভাবে ওইসব আইনজীবীদের ওপর আক্রমণ করে। সে সময় ২০০৬ সালের ৩০ নভেম্বর সুপ্রীম কোর্টে ভাঙচুর, হুলুস্থুল এবং আগুন লাগিয়ে দেয় বিএনপি-জামায়াতপন্থীরা। এসব ঘটনা ঘটিয়ে রিটকারী আইনজীবীদের কাঁধে দোষ চাপানো হয়।    

এদিকে গত মঙ্গলবার (১৪ মার্চ) রাতে বিএনপি এবং জামায়াত পন্থীদের ভাঙচুর-সন্ত্রাসের ঘটনা এবং গতকাল বুধবার (১৫ মার্চ) নির্বাচন বানচালের জন্য ভাঙচুর ও সন্ত্রাসের ঘটনায় রাজধানীর শাহবাগ থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলার বাদী হয়েছেন সুপ্রীম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচন সাব-কমিটির আহবায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট মো. মুনিরুজ্জামান। এই মামলায় (মামলা নং ৩০/১১৫, তারিখ: ১৫ মার্চ) বিএনপিপন্থী আইনজীবী মাহবুব উদ্দিন খোকন, রহুল কুদ্দুস কাজল, কামরুল হাসান সজলসহ ১২ জনকে আসামী করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

অন্যদিকে সূত্রগুলো বলছে, ২০০৬ সালে এসব ঘটনা ঘটিয়ে দেশে ১/১১ আনার একটা প্রেক্ষাপট তৈরি করা হয়েছিল। এখন বিএনপি আবার যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবির কথা বলছে, আন্দোলন করছে, সুপ্রীম কোর্টে আবার ভাঙচুর করেছে, সে কারণেই আবার ১/১১ সৃষ্টি করতেই একই ধরনের পরিস্থিতি তৈরি করার চেষ্টা করছে বিএনপি-জামায়াত। কেননা গত দুই দিনে সুপ্রীম কোর্টে যে ঘটনা ঘটানো হয়েছে, তা ছিল পূর্ব পরিকল্পিত এবং এক ধরনের নাশকতামূলক। দেশে একটা অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করার জন্যই এ ধরনের পূর্ব পরিকল্পিত ঘটনা ঘটানো হয়েছে।      

জানা গেছে, জোট সরকারের আমলে রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ড. ইয়াজ উদ্দিন আহম্মেদের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার পদ গ্রহণ ও কার্যক্রম পরিচালনা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্ট দায়ের করা তিনটি রিট আবেদনের শুনানির কার্যক্রম হাইকোর্ট থেকে রুল জারি করার পূর্ব মুহূর্তে প্রধান বিচারপতি স্থগিত করে দেন। ২০০৬ সালের ৩০ নভেম্বর তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ জেআর মোদাচ্ছের হোসেন একটি রিট স্থগিত করেন। এ ঘটনায় আইনজীবীরা প্রতিবাদ জানালে বিএনপি-জামায়াতপন্থী আইনজীবীরা ওই আইনজীবীদের ওপর চড়াও হয় এবং আক্রমণ করে। এ সময় তারা আদালতে ভাঙচুর এবং অগ্নি সংযোগ ঘটায়। এ সময় তারা সুপ্রীম কোর্টের আপিল বিভাগ, প্রধান বিচারপতির কক্ষ, অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ও ভাংচুর করে। 

এছাড়াও, একদল আইনজীবী প্রধান বিচারপতিকে না পেয়ে তার চেম্বারে অতর্কিতে ঢুকে পড়েন এবং দরজা-জানালার কাঁচ ভাংচুর করেন। সে সময়ে আইনজীবী নেতৃবৃন্দ তাদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। এরপরে আইনজীবীরা আপিল বিভাগের এক নম্বর এজলাসকক্ষে (প্রধান বিচারপতির কোর্ট) ঢুকে চেয়ার ভাংচুর করে। প্রধান বিচারপতির এজলাসের আসবাবপত্র, চেয়ার-টেবিল, ফাইলপত্র ও ফ্যান ভেঙে তছনছ করে। পরে বিক্ষুব্ধ আইনজীবীরা অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ের দরজা ভাংচুর করে। ওই দিন এক পর্যায়ে বিএনপি-জামায়াতপন্থী এবং তাদের বিপক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়। উভয় পক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।

এসব বিষয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বিএনপি-জামায়াত দীর্ঘ দিন ধরেই সরকারকে বিতর্কিত করা এবং দেশে একটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতেই বিভিন্ন ধরনের ষড়যন্ত্র করে চলেছে। দেশের সর্বোচ্চ আদালতে যে ঘটনা ঘটানো হয়েছে, তা নিঃসন্দেহে পূর্ব পরিকল্পিত একটি ঘটনা। এর আগেও বিএনপি জামায়াত পঞ্চগড়ের আহমদিয়া (কাদিয়ানি) সম্প্রদায়ের ওপরও হামলা চালিয়েছিল। এটাও ছিল পূর্ব পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের একটা অংশ। এর আগেও বিএনপি- জামায়াত দেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে দেশের বিভিন্ন  স্থানে হামলা, অগ্নিসংযোগ ও নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড চালিয়েছে। গত দুই দিনে সুপ্রীম কোর্টে যে ঘটনাগুলো ঘটানো হয়েছে, তা-ও একই ষড়যন্ত্রের অংশ। এখন দেখার বিষয় হলো নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে নির্বাচনকে বিতর্কিত করার ষড়যন্ত্র করে, দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করে বিএনপি-জামায়ত কি ফল পায়?



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭