ইনসাইড পলিটিক্স

পাঁচ সিটি নির্বাচন: বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ও তৃণমূলের মতপার্থক্য!


প্রকাশ: 17/03/2023


Thumbnail

জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্দলীয়, নিরপেক্ষ তত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন করে আসছে বিএনপি। তাদের সাথে যোগ হয়েছে সরকার বিরোধী সমমনা দলগুলোও। দীর্ঘদিন এ আন্দোলন চলমান থাকলেও আন্দোলনকে ঘিরে তেমন কোনো চমক সৃষ্টি করতে পারেনি বিএনপি এবং সমমনা দলগুলো। এর অন্যতম প্রধান কারণ কারণ হচ্ছে, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সাথে তৃণমূলের মতের অমিল বলে জানিয়েছেন দলটির তৃণমূলের নেতারা। বিএনপির তৃণমূলের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় নেতারা আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন, আসছে সিটি নির্বাচনসহ সব ধরনের নির্বাচন বর্জনের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তার সাথে একাত্ব হতে পারছেন না তারা। কেননা নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলে সে দলটির আশা-ভরসার কোনো জায়গা থাকে না। ফলে দল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে জনগণ এবং কোনো আশার জায়গা না থাকলে জনগণকে দলেও টানা যায় না।

এদিকে গত ১০ দিনে মাঠপর্যায়ের প্রায় আড়াই হাজার সাবেক ও বর্তমান জনপ্রতিনিধিকে ঢাকায় এনে মতবিনিময় করেছে বিএনপি। গতকাল বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) ১০ দিনের এ মতবিনিময় কর্মসূচি শেষ করেছে। দলটির দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, কার্যত এ মতবিনিময়ের আয়োজন করা হয় তৃণমূলের গুরুত্বপূর্ণ ও জনসম্পৃক্ত নেতাদের সরকার বিরোধী আন্দোলনে আরও সক্রিয় করতে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি যে বৃহত্তর আন্দোলন গড়তে চাইছে, তাতে সাধারণ জনগণসহ সব পক্ষের ব্যাপক অংশগ্রহণ আশা করছে দলটি। সম্প্রতি ইউনিয়ন থেকে থানা, জেলা ও মহানগরে পর্যায়ক্রমে যে পদযাত্রা কর্মসূচিগুলো করা হয়েছে, এর উদ্দেশ্য সাধারণ মানুষকে কাছে টানা। এ কর্মসূচির পরপরই একই লক্ষ্যে সারা দেশের ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) দলীয় সমর্থক সাবেক ও বর্তমান চেয়ারম্যানদের ঢাকায় এনে মতবিনিময় করা হয়েছে। গতকাল ময়মনসিংহ বিভাগের চেয়ারম্যানদের সঙ্গে মতবিনিময়ের মধ্য দিয়ে ১০ দিনের এ কর্মসূচি শেষ হয়েছে। 

কিন্তু নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির তৃণমূলের একাধিক নেতা-কর্মীরা জানিয়েছেন, আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দেশের গুরুত্বপূর্ণ পাঁচ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন। তিন ধাপে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এসব সিটির ভোটে অংশ না নিলে বিএনপি আনেক পিছিয়ে পড়বে। এই পাঁচ সিটির ভোটে সরকার বিএনপি থেকে দলছুট উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়াদের মতো প্রার্থীদের টার্গেট করে বেছে নিবে। বিশেষ করে যারা এসব সিটির বিএনপির সাবেক মেয়র এবং যারা মেয়র প্রার্থী- তাদেরকে বেছে নিতে চেষ্টা করবে সরকার। এতে করে বিএনপি আরও পিছিয়ে পড়বে বলেও মনে করছেন তৃণমূলেরে এসব নেতা-কর্মীরা। 

বিএনপির তৃণমূলের নেতারা বলছেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া- ২ আসনের উপনির্বাচনে সরকার যেভাবে ফাঁদে ও লোভে ফেলে উকিল আবদুস সাত্তার ভূইয়াকে প্রার্থী করে জয়ী করে এনেছেন, একই ফাঁদে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া সিটি ভোটেও বিষয়টি কাজে লাগানোর চেষ্টা করবে সরকার। এখানে সরকারের প্রথম টার্গেট থাকবে খুলনা সিটি নির্বাচনের বিএনপির সাবেক প্রার্থী ও দল থেকে অব্যাহতি পাওয়া সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম মঞ্জু ও রাজশাহীর সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান মিনু।

অন্যদিকে বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তর জানিয়েছে, আড়াই হাজার জনপ্রতিনিধির পাশাপাশি এ মতবিনিময় কর্মসূচিতে স্থায়ী কমিটির সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া যেদিন যে বিভাগের মতবিনিময় হয়, সেদিন সংশ্লিষ্ট বিভাগের দলের ভাইস চেয়ারম্যান, উপদেষ্টা (রাজনৈতিক), যুগ্ম মহাসচিব, সাংগঠনিক সম্পাদক, জেলা সভাপতি অথবা আহ্বায়ক, ১ নম্বর যুগ্ম আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবেরা উপস্থিত ছিলেন। এ মতবিনিময় সভায় বিএনপির ইউনিয়ন পর্যায়ের সাবেক চেয়ারম্যানদেরকেও ডাকা হয়। 

বিএনপি সূত্রগুলো জানায়, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সরকারবিরোধী একটি বৃহত্তর আন্দোলন গড়ার লক্ষ্য নিয়ে মাঠপর্যায়ের জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে এ মতবিনিময় করেন। তিনি লন্ডন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানদের সঙ্গে কথা বলেন। ১০ দিনের রুদ্ধদ্বার এক মতবিনিময় কর্মসূচিতে সাবেক ও বর্তমান মিলে ২ হাজার ৩৬৭ জন চেয়ারম্যান এ মতবিনিময় সভায় অংশ নেন। এর মধ্যে ৩৫৭ জন বক্তব্য দিয়েছেন। ২০০১ সাল থেকে এ পর্যন্ত নির্বাচিত বিএনপির সমর্থক চেয়ারম্যানদের মতবিনিময়ের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়। গত ২৩ ফেব্রুয়ারি এ মতবিনিময় শুরু হয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) শেষ হয়।  

বিএনপির নেতারা বলছেন, নানা কারণে বিএনপি থেকে বিভিন্ন সময় সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে জনপ্রিয় নেতাদের অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। আবার কাউকে-কাউকে পদাবনতি করা হয়েছে। এছাড়া কাঙ্ক্ষিত পদ-পদবি না পেয়েও বিএনপির অনেক নেতা দলের ওপর মনঃক্ষুণ্ন। আগামী নির্বাচনে বিএনপি তার সিদ্ধান্তে অটল থেকে এ সরকারের অধীনে নির্বাচনে না গেলে নানা কারণে দলের ওপর মনঃক্ষুণ্ন নেতাদের লোভে ও ফাঁদে ফেলে উকিল আবদুস সাত্তার ভূইয়া বানাতে পারে সরকার।

এ প্রসঙ্গে দল থেকে অব্যাহতি পাওয়া বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও খুলনা জেলা দলের সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু  গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা তো দলের বাইরে না। তাছাড়া দলের বাইরে গিয়ে তো নির্বাচন করতে পারি না। তবে, আমি মনে করি বিএনপি যে নির্বাচনে না যাওয়া সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেটা রিভিউ করা দরকার। না যাওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে সরে বিএনপির নির্বাচনে অংশ নেওয়া উচিত। নির্বাচন ও আন্দোলন- দুইটাতে থাকা দরকার। ২০১৯ সালে সর্বশেষ বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল। এখন নির্বাচনে গেলে- এটা তো আমরা বলতে পারব যে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে সুষ্ঠু ভোট সম্ভব নয়। আমাদের প্রতি বিএনপির কোনো করুণা চাই না। তবে, এটা আশা করি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দলের স্বার্থে আগামীতে সঠিক সিদ্ধান্ত নেবেন। এখানে (খুলনা) যে সব কুচক্রীর হাতে দল ছেড়ে দেওয়া হয়েছে তারা এখন পর্যন্ত একটা কমিটিও করতে পারে নাই।’


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭