ইনসাইড ইনভেস্টিগেশন

স্বাস্থ্যের তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ১০% কমিশন নেয়ার অভিযোগ


প্রকাশ: 19/03/2023


Thumbnail

কাজ পাইয়ে দেয়া হবে এমন প্রতিশ্রুতি দিয়ে ১০% কমিশন নেয়া অভিযোগ এনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুদকে অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে। 

সম্প্রতি সময় এমন অভিযোগ করেছেন ধ্রুব কথাচিত্র নামের একটি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী মো. আশরাফুল আলম। 

তিনি লিখিতভাবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল করে তাদের কাছ থেকে টাকা ফেরত চেয়েছেন। আবেদনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের (লাইফস্টাইল, হেলথ এডুকেশন অ্যান্ড প্রমোশন) দশ কোটি টাকার স্বাস্থ্যসেবা প্যাকেজের কনসালট্যান্ট ও ঠিকাদার নিয়োগে দুর্নীতি ও অনিয়মের তদন্ত চাওয়া হয়েছে। পাশাপাশি দশ কোটি টাকার স্বাস্থ্যসেবা প্যাকেজের কনসালট্যান্ট ও ঠিকাদার নিয়োগ কার্যক্রম স্থগিত রাখার দাবি জানানো হয়েছে।

গত ৫ মার্চ দুদকে এ অভিযোগ জমা দিয়েছেন আশরাফুল। এর আগে স্বাস্থ্য সচিব বরাবর একই অভিযোগ দাখিল করেন তিনি। সেই আবেদনে তারিখ লেখা আছে ২২/০৩/২০২৩। অথচ ওই চিঠিটি গত ২৬ ফেব্রুয়ারি গ্রহণ করেছেন স্বাস্থ্য সচিব ড. মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার । এক মাস পরের তারিখ দেয়া চিঠি কীভাবে স্বাস্থ্য সচিব আগেই গ্রহণ করলেন- এ বিষয়ে মো. আশরাফুল আলম ভোরের আকাশকে বলেন, ‘স্বাস্থ্য সচিবের কাছে করা আবেদনে তারিখ ভুল হয়েছে। ২২ মার্চের জায়গায় ২২ ফেব্রুয়ারি হবে।’

দুদক চেয়ারম্যান বরাবর দেয়া অভিযোগে বলা হয়েছে, ‘বিগত দুই অর্থবছর ধরে বর্তমান লাইন ডাইরেক্টর ডা. মো. মিজানুর রহমান আরিফ যোগদানের পর থেকে ১০ শতাংশ হারে কোটি টাকা কমিশন নিয়ে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নিজস্ব পছন্দের প্রতিষ্ঠানকে কাজ দিচ্ছেন। আর এ কমিশনের টাকা সংগ্রহের দায়িত্ব পালন করছেন দরপত্র মূল্যায়ন/অন্য কমিটির সভাপতি ডা. মো. শাখাওয়াত হোসেন, প্রোগ্রাম ম্যানেজার (টিএসডি) এবং দরপত্র মূল্যায়নের জন্য কমিটির সদস্য মো. মোখলেচুর রহমান, সহকারী প্রধান (কাঃ সঃ) ও ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার। এই দুই কর্মকর্তা বিগত ২০২১-২০২২ অর্থবছরে আমাকে একটি সার্ভিস প্যাকেজের কাজ দেয়ার কথা বলে আমার কাছ থেকে নগদ দশ লাখ টাকা কমিশন নেন। প্রকাশ থাকে যে, ওই দশ লাখ টাকা ফেরত না দিয়ে আমাকে ২০২২-২৩ অর্থবছরে আহ্বানকৃত প্যাকেজ নং-৭ প্রোডাকশন অব এসবিসিসি ম্যাটারিয়াল অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইন্টারভেনশন ফর প্রিভেনশন ডায়বেটিসের প্রস্তাব দাখিলের পরামর্শ প্রদান করেন এবং আমাকে ওই কাজ দিয়ে তাদের নেয়া দশ লাখ টাকা সমন্বয় করে দেবেন।’

অভিযোগে আরও বলা হয়, ‘আমি বাধ্য হয়ে তাদের কথায় বিশ্বাস করে যথানিয়মে সব কাগজপত্র, অভিজ্ঞতা, দক্ষতা ও আর্থিক সক্ষমতা সংযুক্ত করি। এক্সপ্রেশন অব ইন্টারেস্ট (ইওআই) দাখিল করি। আমার এক্সপ্রেশন অব ইন্টারেস্ট (ইওআই) যাচাই-বাছাই করে আমাকে রিকোয়েস্ট ফর প্রোপোজাল প্রদান করেন। আমরা রিকোয়েস্ট ফর প্রপোজালের চাহিদা মোতাবেক সব তথ্যাদি সংযুক্ত করে টেকনিক্যাল এন্ড ফাইন্যান্সিয়াল প্রস্তাব দাখিল করি। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, আমার কাছ থেকে অগ্রিম নগদ দশ লাখ টাকা কমিশন নেয়ার পরও দরপত্র মূল্যায়ন ক্রয় কমিটির সভাপতি ডা. মো. শাখাওয়াত হোসেন এবং দরপত্র মূল্যায়ন ক্রয় কমিটির সদস্য মো. মোখলেছুর রহমান আমার টেকনিক্যাল এন্ড ফাইন্যান্সিয়াল প্রস্তাব বিবেচনা না করে অধিক কমিশন গ্রহণ করে অযোগ্য, অদক্ষ ও ভুয়া প্রতিষ্ঠানকে ঊর্ধ্ব রেটে কাজ দিয়ে সরকারের কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করছেন। আমি টাকা ফেরত চাইলে ওই দুই কর্মকর্তা আমার দশ লাখ টাকা ফেরত না দিয়ে আমাকে নানাভাবে হয়রানির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। সব প্যাকেজের কাগজপত্র তদন্ত করলে অনিয়ম ও দুর্নীতির আসল চিত্র সহজেই পাওয়া যাবে।’

অভিযোগে বলা হয়েছে, ‘দরপত্র মূল্যায়ন/ক্রয় কমিটির সভাপতি ডা. মো. শাখাওয়াত হোসেন এবং দরপত্র মূল্যায়ন ক্রয় কমিটির সদস্য মো. মোখলেছুর রহমান নগদ ৫০ লাখ টাকা কমিশন নিয়ে প্লে-ডক্টরস নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে সব ভুয়া কাগজপত্রের ভিত্তিতে সরকারি ও বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে প্রচারের জন্য ৪.৫০ কোটি টাকার চুক্তি স্বাক্ষর করেন। পরে ২০২২-২৩ অর্থবছরে দরপত্র আহ্বান না করে পুনরায় ৫০ লাখ টাকা কমিশন নিয়ে এক বছর মেয়াদ বৃদ্ধি করে প্রচার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন এবং সরকারি টাকা আত্মসাৎ করে চলছেন। সরকারি ও বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে প্রচারের কাজের জন্য দরপত্র দলিলে চার কোটি টাকার কাজের অভিজ্ঞতা, আড়াই কোটি টাকার আর্থিক সক্ষমতা এবং এক বছরে সাড়ে তিন কোটি টাকার টার্নওভার চাওয়া হয়। এস কে শাহিন রহমানের প্লে-ডক্টরস নামক প্রতিষ্ঠানটির দেশের কোথায় চার কোটি টাকার প্রচার কাজসহ আর্থিক সক্ষমতা ও টার্নওভার আছে- এমন ইতিহাস কারো জানা নেই। ওই প্রতিষ্ঠানের দাখিলকৃত সব কাগজপত্র ভুয়া এবং নীলক্ষেত থেকে তৈরি করে দাখিল করা হয়।’

অভিযোগে আরও বলা হয়, ‘প্রকাশ থাকে যে, এস কে শাহিন রহমানের আরেকটি প্রতিষ্ঠান RIAND Bangladesh Limited একই কায়দায় ভুয়া এবং নীলক্ষেত থেকে তৈরি করা কাগজপত্র নিয়ে বিগত তিন বছর ধরে লাখ লাখ টাকা কমিশন দিয়ে লাইফস্টাইল, হেলথ এডুকেশন অ্যান্ড প্রমোশন দপ্তরে কোটি কোটি টাকার কাজ করে যাচ্ছেন। ওই দুজন কর্মকর্তা ভুয়া এবং নীলক্ষেত থেকে তৈরি করা কাগজসমূহ যাচাই না করে টাকার বিনিময়ে কাজ প্রদান করে যাচ্ছেন। তথ্য অধিকার আইনে একটি প্রতিষ্ঠান প্লে-ডক্টরস কর্তৃক দাখিলকৃত ভুয়া ও নীলক্ষেত থেকে তৈরিকৃত কাগজপত্র চেয়ে আবেদন করলেও ওই কর্তকর্তারা কোনো প্রকার কাগজপত্র সরবরাহ করেননি। দাখিলকৃত কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করলে আসল রহস্য উদ্ঘাটিত হয়ে যাবে। এ ছাড়াও ওই প্রতিষ্ঠানটি বিগত তিন বছর ধরে ভুয়া এবং নীলক্ষেত থেকে তৈরি কাগজপত্রের মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা কমিশন দিয়ে কোটি কোটি টাকার কাজ ভাগিয়ে নিচ্ছেন।’



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭