ইনসাইড পলিটিক্স

‘চুরি’ এবং ‘চোর’ নিয়ে পাল্টাপাল্টি: কে করছেন মিথ্যাচার?


প্রকাশ: 19/03/2023


Thumbnail

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ শুধু ভোট চুরি নয়, সবকিছু চুরি করে খেয়ে ফেলছে। এখন বাংলাদেশের মানচিত্রও খেয়ে ফেলতে শুরু করেছে।’ তিনি বলেন, ‘এই সরকারের দুর্নীতির ফিরিস্তি যদি আমরা দিতে চাই, তাহলে এক দিনে এক মিটিংয়ে হবে না, এক মাস লাগবে।’ শনিবার (১৮ মার্চ) বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনে ‘সরকারের সর্বগ্রাসী দুনীতির প্রতিবাদে এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের ১০ দফা দাবিতে’- এক প্রতিবাদ সমাবেশে মির্জা ফখরুল ইসলাম এসব কথা বলেন।

অন্যদিকে বিএনপিকে দুর্নীতিবাজদের দল আখ্যা দিয়ে তাদের মুখে দুর্নীতির কথা মানায় না বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনা চুরি করেন না। তিনি চুরি থেকে দেশকে বাঁচিয়েছেন। রাজনীতিকে দুর্নীতিমুক্ত ও গণতান্ত্রিক করেছেন।’ ওই একই দিন শনিবার (১৮ মার্চ) বিকেলে রাজধানীর ধোলাইখাল এলাকায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৩তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন ওবায়দুল কাদের।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আওয়ামী লীগের মূলনীতি হচ্ছে টাকা পাচার আর দুর্নীতি। এই দুর্নীতি বন্ধ করতে হলে এই সরকারকে সরাতে হবে। নাইলে দেশ টিকবে না। ভারতে একটা সরকার নির্বাচনে হেরে গিয়েছিল মাত্র একটি স্লোগানে। সেটি হচ্ছে, অলিগলিমে শোর হ্যায়, অমুক নেতা চোর হায়। আমি তাঁর নাম বললাম না। আজকে একসঙ্গে আওয়াজ তুলতে হবে আওয়ামী লীগের মূলনীতি, টাকা পাচার আর দুনীতি। গলি গলি মে শোর হ্যায়, আওয়ামী লীগ চোর হ্যায়।’

অন্যদিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘মির্জা ফখরুল নামের একটা লোক! দেখতে ভদ্রলোক মনে হয়। কিন্তু অন্তরে বিষ আর বিষ। এত মিথ্যাচার করতে পারে! সেরা প্যাথলজিক্যাল লায়ার, সেরা মিথ্যাবাদী। দুর্নীতিতে বিএনপি পরপর পাঁচবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। এরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে যখন কথা বলে, তখন জনগণের মাঝে হাস্যরস সৃষ্টি হয়। দুর্নীতিবাজের মুখে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলে, এদের লজ্জা-শরম বলতে কিছুই নেই। বিএনপি ক্ষমতায় এলে দেশকে আবার দেউলিয়া করে দেবে। তারেক রহমান কোটি কোটি টাকা পাচার করবে। এই অপশক্তি সাম্প্রদায়িকতার পৃষ্ঠপোষক। জঙ্গিদের হাতে চলে যাবে দেশ। সেটা হতে দেওয়া হবে না।’

এসব বিষয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ডিজিটাল বাংলাদেশের জনগণ এখন আর বোকার স্বর্গে বাস করেন না। হাতের নাগালে ইন্টারনেট আর তথ্য-প্রযুক্তির এই যুগে সকল তথ্যই এখন মানুষের সামনে চলে আসছে। পর পর দুটি দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। এসব মামলায় বেগম খালেদা জিয়ার পরিবারের আবেদনের ভিত্তিতে তাঁর অসুস্থতার কারণ বিবেচনায় সরকারের নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতাবলে দণ্ড স্থগিত করে খালেদা জিয়াকে গুলশানের বাসভবনে থেকে চিকিৎসা নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। বেগম খালেদা জিয়া দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত হয়ে ২০১৮ সালে কারাগারে গিয়েছিলেন। আজ রোববার (১৯ মার্চ) বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে নাইকো দুর্নীতি বিষয়ে আরও একটি মামলার বিচার শুরু হয়েছে বলে গণমাধ্যমে খবর হয়েছে।

এছাড়া বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার স্ত্রী জোবাইদা রহমানকে গত বছরের (২০২২ সাল) ২৬ মাস পলাতক ঘোষণা করেছেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত। ২০০৮ সাল থেকে তারেক রহমান ও তার স্ত্রী জোবাইদা রহমান লন্ডনে পলাতক রয়েছেন। ২০০৭ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও হিসাববিবরণীতে সম্পদ গোপন করার অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়। এই মামলার বিরুদ্ধে সে সময়ে তারেক রহমান ও তার স্ত্রী জোবাইদা রহমানের পক্ষে তিনটি রিট আবেদনও করা হয়েছিল। কিন্তু ২০০৮ সাল থেকে লন্ডনে অবস্থানরত তারেক রহমান ও জোবাইদা রহমান এ মামলায় পলাতক কিনা- এমন প্রশ্নে শুনানি শেষে বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি এজারুল হক আখন্দের বেঞ্চ ২০২২ সালের ২৬ মার্চ (রোববার) তাদেরকে পলাতক সাব্যস্ত করে এই রায় দেন এবং রিট আবেদনগুলো খারিজ করে দেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা আরও বলছেন, এসব ঘটনা এখন সাধারণ মানুষের অজানা নয়। এসব ঘটনায় গণমাধ্যমে অহরহ সংবাদ হয়েছে- স্মার্ট ফোনের কল্যাণে এখন সংবাদ মানুষের হাতের মুঠোয়। সাধারণ মানুষের মধ্যে এসব ঘটনা নিয়ে আলোচনা হয়। এখন মানুষ এসব ঘটনা জানেন। সাধারণ মানুষ নিশ্চয়ই বলতে পারবেন কে করছেন মিথ্যাচার? কেন করছেন মিথ্যাচার?


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭