ইনসাইড আর্টিকেল

‘উত্তাল মার্চের দিনগুলো’: ‘অপারেশন সার্চলাইট’ অনুমোদন - ২০ মার্চ ১৯৭১


প্রকাশ: 20/03/2023


Thumbnail

১৯৭১ সালের এই দিনে মুজিব-ইয়াহিয়ার মধ্যে চতুর্থ দফায় বৈঠক হয়। সেদিনও খুব বেশি এগোয়নি কোনও আলাপ-আলোচনা। সোয়া দুই ঘণ্টা স্থায়ী এই বৈঠকে আলোচনায় কিছু অগ্রগতি হয়েছে বলে পরবর্তীতে উল্লেখ করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে ১৩০ মিনিট আলোচনা শেষে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর সহকর্মীরা প্রেসিডেন্ট ভবন থেকে বেরিয়ে আসেন। 

অসহযোগ আন্দোলন, সেই সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধে ঝপিয়ে পড়ার মাস মার্চ। একটি নতুন বাংলাদেশ নামক সৃষ্টির মাস এই মার্চ মাস। এ মাসেই বীর বাঙালি স্বাধীনতার নেশায় মহান মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। উত্তাল এই মার্চেই জন্ম হয়েছিল স্বাধীন বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের। ‘উত্তাল মার্চের দিনগুলো’র বিংশ পর্বে থাকছে ২০ই মার্চের ঘটনাপ্রবাহ।

পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ও আওয়ামী লীগের প্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মধ্যে চতুর্থ দিনের মতো বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় সকাল ১০টায়। বৈঠক শেষে বঙ্গবন্ধু যখন প্রেসিডেন্ট ভবন থেকে বাইরে এলেন, তখন শত শত কণ্ঠের ‘জয় বাংলা’ স্লোগান তাঁকে আচ্ছন্ন করে।

বৈঠকে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তার ছয় শীর্ষ সহযোগী - সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, এ এইচ এম কামরুজ্জামান, এম মনসুর আলী, খন্দকার মোশতাক আহমদ ও কামাল হোসেন উপস্থিত ছিলেন। সোয়া দুই ঘণ্টার বৈঠক শেষে বঙ্গবন্ধু দেশি-বিদেশি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আলোচনায় কিছু অগ্রগতি হয়েছে। সময় এলে অবশ্যই আমি সবকিছু বলব। রাজনৈতিক সংকট সমাধানের পথে তারা এগোচ্ছেন।’

পরে রাতে এক বিবৃতিতে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘মুক্তি অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত সংগ্রাম চলবে। বাংলাদেশ আজ বিশ্ব দরবারে এক অনুপ্রেরণাদায়ী দৃষ্টান্ত।’

পাকিস্তান সেনাবাহিনীর তৎকালীন মেজর সিদ্দীক সালিকের বই থেকে জানা যায়, ২০ মার্চ ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান তার সামরিক উপদেষ্টা জেনারেল হামিদ খান, পূর্ব পাকিস্তানের সামরিক প্রশাসক টিক্কা খান, জেনারেল পীরজাদা, জেনারেল ওমর, জেনারেল মিঠঠাসহ সামরিক বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে জরুরি গোপন বৈঠকে বসেন। এ বৈঠকে তিনি সামরিক প্রস্তুতির পর্যালোচনা করেন। শেখ মুজিবের সঙ্গে বৈঠক ব্যর্থ হলে কী করণীয় হবে সে বিষয়েও আলোচনা হয় এবং ‘অপারেশন সার্চলাইট’ অনুমোদন করা হয়। একাত্তরের ২০ মার্চ ‘অপারেশন সার্চলাইট’ অনুমোদনের মধ্য দিয়ে পাকিস্তানি সামরিক জান্তা বাঙালির স্বাধীকারের আন্দোলন চিরতরে দমনের নীলনকশা বাস্তবায়নের অনুমোদন দেয়।

এদিকে মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে প্রতিদিন ছয়টি থেকে ১৭টি পর্যন্ত পিআইএ ফ্লাইটে করে সৈন্য ও রসদ ঢাকায় আনা হচ্ছিল। কয়েকটি জাহাজ পূর্ণ করে সৈন্য ও অস্ত্রশস্ত্র আনা হচ্ছিল চট্টগ্রাম বন্দরে। অসহযোগ আন্দোলনের শুরুতে বাংলাদেশে পাকিস্তানের স্থলবাহিনীর শক্তি ছিল এক ডিভিশন, ২০ মার্চ তা হয় দুই ডিভিশনের বেশি।

ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ এক বিবৃতিতে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে সামরিক বাহিনী ও অস্ত্রশস্ত্র বোঝাই বিমান চলাচল বন্ধের জন্য প্রতিবেশী দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানায়। জয়দেবপুরে সেদিনও সান্ধ্য আইন অব্যাহত ছিল। 

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সাবেক নৌসেনাদের সমাবেশে বঙ্গবন্ধু ঘোষিত মুক্তি সংগ্রামের প্রতি সংহতি প্রকাশ করা হয়। স্বাধীনতা সংগ্রামে সহযোগিতার জন্য একটি সম্মিলিত মুক্তিবাহিনী কমান্ড গঠনে সশস্ত্র বাহিনীর সাবেক বাঙালি সৈনিকদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। এদিন একের পর এক শোভাযাত্রা ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে যায়। সমবেত জনতার উদ্দেশে একাধিক সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, ‘মুক্তিপাগল সাড়ে সাত কোটি বাঙালির চূড়ান্ত বিজয়কে পৃথিবীর কোনো শক্তিই রুখতে পারবে না।’

করাচিতে পিপিপি নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টো সাংবাদিকদের জানান, তিনি প্রেসিডেন্টের আমন্ত্রণে সন্তোষজনক জবাব পেয়ে ঢাকা যাচ্ছেন। সুপ্রীম কোর্টের প্রখ্যাত আইনজীবী ও আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার অন্যতম কৌসুলী এ কে ব্রোহি এদিন সকালে করাচি থেকে ঢাকায় আসেন।

(সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক, রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী ‘৭১ এর দশ মাস’।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭