ইনসাইড ইনভেস্টিগেশন

মাহিয়া মাহির গ্রেপ্তারের নেপথ্যে ‘সনি রাজ কার প্যালেস’-এর জমি


প্রকাশ: 20/03/2023


Thumbnail

চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহির স্বামী মামলার আসামী রকিব সরকার গতকাল রোববার (১৯ মার্চ) সকালে সৌদি আরব থেকে দেশে ফিরেছেন। তবে পুলিশের তদন্তকারী কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এ বিষয়ে কিছু জানেন না তাঁরা। মাহিয়া মাহি ফেসবুক লাইভে পুলিশের বিরুদ্ধে তাঁর স্বামীর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখলে সহযোগিতা করার অভিযোগ করেন। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা করে। অন্যদিকে মাহিয়া মাহির অভিযোগের বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে বলে গত শনিবার (১৮ মার্চ) স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন। তবে গতকাল রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশ সদর দপ্তর থেকে কোনো তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়নি বলে জানা গেছে।

এদিকে গতকাল মাহিয়া মাহির স্বামী রকিব সরকার সৌদি আরব থেকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পৌঁছার পর উত্তরার নিজ বাসায় যান। সেখান থেকে বিকেলে তিনি গাজীপুরে যান। কিছু সময় ছিলেন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সনি রাজ কার প্যালেসেও। রকিব সরকার দেশে ফিরলে ফুল দিয়ে তাঁকে শুভেচ্ছা জানান স্ত্রী মাহি। পরে শুভেচ্ছা জানানোর ছবি নিজের সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করেন। তবে রকিব সরকারের দেশে ফিরে আসার বিষয়টি জানা নেই বলে জানিয়েছেন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম। একই কথা জানান বাসন থানার ওসিও।

গতকাল রোববার (১৯ মার্চ) দুপুরে মোবাইল ফোনে রকিব সরকার জানান, আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করে দ্রুত তিনি জামিন নিতে আদালতে যাবেন। এছাড়া তাঁর শোরুম দখলের চেষ্টা, হামলা-ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় মামলাও করবেন। 

রকিব সরকারের দেশে ফেরার বিষয়ে জানতে চাইলে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী কমিশনার (মিডিয়া) আসাদুজ্জামান বলেন, ‘এ সম্পর্কে কোনো তথ্য আমার কাছে নেই।’

বিরোধের নেপথ্যে ৩২ শতক জমি: গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তায় ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজের ২ নম্বর গেটের পূর্ব পাশে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক ঘেঁষে ৩২.৩৪ শতক জমির ওপর ‘সনি রাজ কার প্যালেস’। এই জমির মালিকানা নিয়ে রকিব সরকারের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসায়ী ইসমাইল হোসেনের বিরোধ চলে আসছে।

স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা গেছে, ২০০৭ সাল থেকে এই জমি রকিব সরকারের দখলে। ২০১২ সালে স্থাপনা নির্মাণ করে তিনি গড়ে তোলেন সনি রাজ কার প্যালেস ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। অন্যদিকে ইসমাইল হোসেন চাইছেন এই জমি তাঁর দখলে নিতে। ২০১২ সাল থেকে কয়েক দফা দখলের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন তিনি। সর্বশেষ গত শুক্রবার ভোরে আবারও চেষ্টা চালান। শনিবার রকিব সরকারের স্ত্রী মাহিয়া মাহি পুলিশের হাতে গ্রেপ্তারের পর ইসমাইল হোসেন দাবি করেন, ওই শোরুম তাঁর, দখলও তাঁর।

গতকাল দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, শোরুমে ‘সনি রাজ কার প্যালেস’ লেখা সাইনবোর্ড। একটি ছাড়া শোরুমের সব শাটার বন্ধ। সামনে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে লোহার পাইপ ও কয়েকটি টিনের বেড়া।

ভেতরে থাকা নিরাপত্তা প্রহরী মুন্না সরকার (৫৩) বলেন, ইসমাইল হোসেন এসব নিয়ে এই শোরুম দখল করতে এসেছিলেন। নষ্ট করা সাইনবোর্ড গতকাল দুপুরে মেরামত করে আবার টানানো হয়েছে।

জমির মালিকানা বিষয়ে জানতে ইসমাইল হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘রকিব সরকার প্রকৃত মালিকের কাছ থেকে এই জমি নেননি। এসব নিয়ে অনেক সালিস-দরবার হয়েছে। কিন্তু রকিব সরকার দখল ছাড়ছেন না। সবাই জানে এই জমির প্রকৃত মালিক আমি।’

এ প্রসঙ্গে রকিব সরকার বলেন, ‘রেকর্ডীয় মালিক ফজল বাদ্যকরের কাছ থেকে আমি দুটি দলিলে ইটাহাটা মৌজার এই জমিটি কিনেছি। নামজারির মাধ্যমে খাজনা পরিশোধ করে ভোগদখলে আছি। ইসমাইল হোসেনের দলিলে মৌজা উল্লেখ করা হয়েছে ‘আমিরাবাদের চালা’, যা টঙ্গী এলাকায়।’

সৌদি আরব থেকে পুলিশের বিরুদ্ধে ফেসবুক লাইভে অভিযোগ করার পর চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি ও তাঁর স্বামী রকিব সরকারের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করে পুলিশ। এ ছাড়া এক ব্যবসায়ী জমি দখলের অভিযোগ এনে মামলা করেন তাঁদের বিরুদ্ধে। দুই মামলায় গত শনিবার সকালে দেশে ফিরলে বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার করা হয় নায়িকা মাহিয়া মাহিকে। পরে পুলিশ আদালতে পাঠালে আদালত তাঁকে কারাগারে পাঠান। এর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে একই আদালত থেকে জামিন পান মাহি। অবশেষে গত শনিবার গ্রেপ্তারের সোয়া আট ঘণ্টা পর মুক্তি পান মাহিয়া মাহি।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭