ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুক হামলা বন্ধে ছয় প্রস্তাব

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 22/02/2018


Thumbnail

যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় মার্জরি স্টোনম্যান ডগলাস হাইস্কুলে গত বৃহস্পতিবার এক তরুণ গুলি চালিয়ে ১৭ জনকে হত্যা করে। এই ঘটনায় আহত হয় আরও ১৪ জন। যুক্তরাষ্ট্রে গুলি চালিয়ে হত্যাযজ্ঞ চালানো নতুন কিছু নয়। দেশটির ইতিহাসে এরকম হত্যাকাণ্ড ঘটেছে শত শত বার।
ফ্লোরিডার স্কুলের হত্যাকান্ডকে কেন্দ্র করে দেশটিতে গণজাগরণ শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যেই দেশটির তরুণরা শুরু করেছেন ‘নেভার এগেইন’ আন্দোলন। এদিকে এ ধরনের হামলা রুখতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প স্কুলের শিক্ষকদের অস্ত্র বহনের প্রস্তাব করেছেন। তবে ইতিহাসে কখনোই অস্ত্র দিয়ে হত্যাকাণ্ড রোধ করা যায় নি। বিশেষজ্ঞরা রক্তক্ষয়ী হামলা প্রতিরোধে ছয়টি প্রস্তাব করেছেন।

১. ঘাতকের নাম প্রকাশ করবেন না
আরিজোনা স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যানবিদ ড. শেরিন টাওয়ার্সের নেতৃত্বে একদল গবেষক বলেছেন, প্রতি ১৩ দিনে এ ধরণের গণহত্যার আশঙ্কা আছে। আর এ ধরনের হত্যাকাণ্ড মানুষের মনে সংক্রমিত হচ্ছে। এমন কোনো হত্যাকাণ্ড নেই যেখানে ঘাতকের নাম গণমাধ্যমে প্রকাশ করা হয় নি। তাই তিনি ঘাতকের নাম পরিচয় প্রকাশ না করতে গণমাধ্যমের প্রতি অনুরোধ জানান। তারা ‘ডোন্ট নেইম দেম’ নামে একটি ক্যাম্পেইনও চালাচ্ছেন।
আরেক জন গবেষক ড. পিট ব্লেয়ার ঘাতকদের নাম প্রকাশের পক্ষে। তবে তিনি মনে করেন গণমাধ্যমকে এই হামলাগুলো প্রতিরোধে বীরদের সম্পর্কে প্রচারণা চালানোর উচিত। অনেক সাংবাদিক যেমন সিএনএনের এন্ডারসন কুপার এখন গণমাধ্যমে ঘাতকদের নাম প্রকাশ করেন না। নাম প্রকাশ না হলে অনেকেই ঘাতক হতে চাইবে না।

২. শিক্ষকদের বন্দুক বহন
২০১২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের স্যান্ডি হুক ইলিমেন্টারি স্কুলে গুলি চললে দ্রুত পুলিশে খবর দেওয়া হয়। আর পুলিশ চার মিনিটের মধ্যেই ঘটনাস্থলে পৌঁছে যায়। ততক্ষণে বন্দুক ২০ জনকে হত্যা করে নিজে আত্মহত্যা করে। এ ধরণের হামলা রোধে শিক্ষকদের হাঁতে অস্ত্র তুলে দেওয়ার চিন্তা করছে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের ১০ টি স্টেটে বন্দুক নিষিদ্ধ আর আটটিতে বন্ধুক গাড়িতে বন্দুক বহন করা যাবে। তবে বাকি ৩২ টি স্টেটে শিক্ষকরা স্কুলে বন্দুক বহন করতে পারে। এবছর ২০০ থেকে ৪০০ জন শিক্ষককে অস্ত্র চালনার প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। তবে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে অস্ত্র বহন শিক্ষকদের জন্য দুঃখজনক। যেমন নাইন ইলেভেনের আগে বিমানের পাইলটরা অস্ত্র বহন সম্পর্কে এমনটাই ভাবতেন।

৩। প্রতি শ্রেণীকক্ষে দুইটি দরজা
মার্জরি স্টোনম্যান ডগলাস হাইস্কুলে যখন গুলি চলছিল ১৭ বছর বয়সী ডেভিড হগ রান্নার ক্লাসরুমে আশ্রয় নেয়। এল আকৃতির এই রুমে দুটি দরজা ছিল। হগ ভেবেছিল যদি ঘাতক কক্ষে প্রবেশ করলে ষে অন্য দরজা দিয়ে পালাবে। তার এই সিদ্ধান্তকে বিশেষজ্ঞরা সমর্থন করেছে।
এ প্রসঙ্গে ড. পিট ব্লেয়ার বলেন, ‘ছোট্ট এলাকাতে আটকে পড়া মানুষ এই ধরণের ঘোটনায় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন।’

৪। সঙ্কটাপন্ন নাগরিকদের কাছ থেকে অস্ত্র সরাতে হবে
লন্ডনে এলিয়ট রজার ২০১৪ সালে ছয় জনকে গুলি করে হত্যা করে। স্থানীয় শেরিফ বলেন এলিয়ট রজার মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত ছিল।
এই ঘটনার চার মাস পর ক্যালিফোর্নিয়ার আইন প্রণেতারা পুলিশ, নাগরিকদের মানসিক ভাবে বিপর্যস্তদের কাছ থেকে অস্ত্র সরিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানান। তবে রাষ্ট্রীয় আইনে মানসিক ভাবে অসুস্থ কেউ অস্ত্র কিনতে পারে না। অস্ত্র বিক্রেতাদের ক্রেতাদের পূর্ব ইতিহাস জেনে অস্ত্র বিক্রয় করতে হয়। ক্রেতা যদি মানসিক ভাবে অসুস্থ কিংবা পূর্বে কোনো মানসিক প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়ে থাকেন তবে সে অস্ত্র কিনতে পারবে না।

৫। স্কুলে বিমানবন্দরের আদলে নিরাপত্তা ব্যবস্থা
স্কুলে বিমান বন্দরেরে আদলে নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে ঘাতক সহজে স্কুলে প্রবেশ করতে পারবে না। ফ্লোরিডার স্কুলগুলোর জন্য ২০ হাজার মার্কিন ডলার ব্যায়ে পাঁচটি মেটাল ডিটেক্টর ক্রয় করা হয়েছে। সেই সাথে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের প্রশিক্ষণে পাঁচ হাজার মার্কিন ডলার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
কিন্তু স্কুল নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ কেন ট্রাম্প এই মেটাল ডিটেক্টর দরজা হামলা রোধে কতটা কার্যকর হবে তা নিয়ে সন্দিহান। তিনি বলেন, ‘এই ব্যবস্থা ব্যবহারিক ভাবে কার্যকর নয়।’

৬। দ্বিতীয় সংশোধনী রদ
যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান অস্ত্রের ক্রেতাদের অধিকার সংরক্ষণ করে। দেশটির ১৭৯১ সালের দিত্বিয় সংশোধনীতে নাগরিকরা অস্ত্র রাখতে ও বহন করতে পারবে বলে অনুমোদন দেয়। এই আইন পরিবর্তনীয়। যেমন দেশটির ১৮ তম সংশোধনীতে এলকোহল নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। আর ২১ তম সংশোধনীতে এটি রদ করা হয়।

ফ্লোরিডার স্কুলে গুলি চলার পর দ্বিতীয় সংশোধনী বাতিলে অনেকে মত প্রকাশ করেছে। তবে শুধু জাতীয় সংবিধানই যুক্তরাষ্ট্রে অস্ত্রে স্বাধীনতা দেয় না। দেশটির আরও ৪৪ টি স্টেটের সংবিধানেও নাগরিকদের অস্ত্র বহনের অনুমতি দেয়। এই কারণে দ্বিতীয় সংশোধনী রদ করলেই অস্ত্র নিষিদ্ধ হবে না। এটি শুধু মাত্র মার্কিন নাগরিকদের অস্ত্র বহনের অধিকার রদ করবে।

বাংলা ইনসাইডার/ডিজি/জেডএ



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭