ইনসাইড বাংলাদেশ

১২০ টাকায় পুলিশের চাকুরী, বাবাকে আর নৈশ প্রহরীর কাজ করতে দিবে না মেয়ে


প্রকাশ: 20/03/2023


Thumbnail

জামালপুর সদর উপজেলার তুলশীরচর ইউনিয়নের টিকরাকান্দি গ্রামের সোমাইয়া আক্তার রিচি। বাবা-মা ও ছোট ভাইকে নিয়ে তাদের অভাবের সংসার। তার বাবা হাফিজুল ইসলাম বিনা বেতনে স্থানীয় একটি স্কুলের নৈশ প্রহরী। এবারই প্রথম পুলিশে আবেদন করে রিচি। কিন্তু পরীক্ষা কেন্দ্রে যাওয়ার মত টাকাও ছিল না তার কাছে। পরে বান্ধবীর কাছ থেকে ৪০০ টাকা ধার করে রিচি দাঁড়িয়েছিলেন জামালপুর পুলিশ লাইন্সে। পুলিশ কনস্টেবল পদে চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হওয়ার ঘোষণা শুনে আনন্দে কেঁদে ফেলেন তিনি।সোমাইয়া আক্তার রিচি  বলেন, ‘সংসারে আয় রোজগারের কেউ নেই। তার বাবা যে স্কুলে নৈশ প্রহরীর চাকুরি করেন সেখান থেকে কোন বেতন পান না। নাম মাত্র বেতনে প্রায় ২০ বছর ধরে নৈশ প্রহরীর কাজ করছেন তার বাবা। তাই চাকুরিটা তার খুবই প্রয়োজন ছিল। এখন থেকে বাবাকে আর নৈশ প্রহরীর চাকুরি করেতে দিব না’।

মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে মাত্র ১২০ টাকা আবেদন ফি- দিয়েই জামালপুরে পুলিশের চাকুরি পেয়েছেন ৮৭ নারী-পুরুষ।

রোববার (২৯ মার্চ) রাত ১২টার দিকে জামালপুর পুলিশ লাইন্সে পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকুরি প্রার্থীদের চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করা হয়। যারা চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হন তাদেরকে পুলিশ সুপার নাছির উদ্দিন আহামেদ ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। আর যারা চাকুরি পাননি তাদেরকে চলে যেতে হয়। এ সময় আনন্দ-বেদনার অশ্রুতে ভারী হয়ে উঠে সেখানকার পরিবেশ।

সদর উপজেলার দিগপাইত এলাকার লাইজু আক্তার লাম জানান, এবারই তিনি এইচএসসি পাশ করেছেন। তার বাবা একজন ইলেকট্রিশিয়ান ছিলেন। কিন্তু তিনি হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। ফলে আর কোন কাজ করতে পারেন না তিনি। এরপর থেকে ছোট ছোট বাচ্চাদের প্রাইভেট পড়িয়ে নিজের পড়াশোনা চালিয়ে গেছেন। ১২০ টাকায় চাকুরি পেয়ে সে আনন্দে আত্মহারা।

ভেলামারি গ্রামের মাহমুদ হাসান সোহানের মা-বাবা মারা গেছেন কয়েক বছর আগে। ছোট বোন সোমাইয়াকে নিয়ে দুই ভাই-বোনের সংসার চলতো তার প্রাইভেট পড়ানোর টাকায়। বিনা পয়সায় পুলিশে চাকুরি পেয়ে সোহান এখন অনেকই নির্ভার।

তারতাপাড়া গ্রামের বর্গা চাষী আকরাম হোসেনের ছেলে রাশেদুল এর আগেও কনস্টেবল পদে চাকরির জন্য মুখোমুখি হয়েছিলেন ৩ বার। কিন্তু মৌখিক পরীক্ষায় এসে বাদ পড়ে যায়। তবে হতাশ হয়নি। কঠোর পরিশ্রম আর চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিয়ে আবারও অংশ নেয়। অবশেষে সফলতা আসে। 

নিয়োগ পরীক্ষা যুদ্ধে অংশ নেন ২ হাজার ৯৫৪ জন। পরে শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তাদের লিখিত পরীক্ষা হয়। সবশেষ সেই পরীক্ষায় যারা কৃতকার্য হয় তাদের মধ্য থেকে ১৬৮ জন মৌখিক পরীক্ষার মুখোমুখি হয়। আর সবশেষে নারী-পুরুষ মিলে চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হন ৮৭ জন।

পুলিশ সুপার নাছির উদ্দিন আহমেদ বলেন, আবেদনকারীদের ঘুষ কিংবা দালালদের মাধ্যমে চাকুরির সুযোগ দেওয়া হয়নি। কোন চাকুরি প্রত্যাশী যেন কোন দালালের ক্ষপ্পরে না পড়ে সে জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ও মাইকিং করে প্রচারণা চালানো হয়। ধরণের তদবির ছাড়াই শুধু মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে ১৩ জন নারী ও ৭৪দল জনকে কনস্টেবল পদে চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত করা হয়েছে।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭