ইনসাইড আর্টিকেল

‘মার্চের উত্তাল দিনগুলো’: ২৫ মার্চের অধিবেশন স্থগিত - ২২ মার্চ ১৯৭১


প্রকাশ: 22/03/2023


Thumbnail

একাত্তরের লাগাতার অসহযোগ আন্দোলনের ২১তম দিবস ২২ মার্চ। স্বাধীনতার দাবিতে বিক্ষুব্ধ মানুষের ‘উত্তাল’ সভা-সমাবেশ, শোভাযাত্রা ও গগনবিদারী স্লোগানে ঢাকার আকাশ-বাতাস মুখরিত। এদিন সকালে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ২৫ মার্চ ঢাকায় অনুষ্ঠেয় জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, পাকিস্তানের উভয় অংশের নেতৃবৃন্দের মধ্যে আলোচনাক্রমে এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্যের পরিবেশ সম্প্রসারণের সুযোগ সৃষ্টির জন্য ২৫ মার্চের অধিবেশন স্থগিত রাখা হয়েছে।

অসহযোগ আন্দোলনের মাস মার্চ। বিশ্ব মানচিত্রে বাংলাদেশ নামক নতুন একটি মানচিত্র ঘোষণার মাস এই মার্চ মাস। এ মাসেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। এ মাসেই বীর বাঙালি বঙ্গবন্ধুর আহবানে স্বাধীনতার নেশায় মহান মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। উত্তাল এই মার্চেই জন্ম হয়েছিল স্বাধীন বাংলাদেশের। ‘উত্তাল মার্চের দিনগুলো’র দ্বাবিংশ পর্বে থাকছে ২২ই মার্চের ঘটনাপ্রবাহ।

সকালে রমনার প্রেসিডেন্ট ভবনে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ও জুলফিকার আলী ভুট্টো আলোচনা বৈঠকে মিলিত হন। এদিন ছিল প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর ষষ্ঠ দফা বৈঠক। বৈঠক সোয়া ঘন্টা স্থায়ী হয়। প্রেসিডেন্ট ভবন থেকে নিজ বাসভবনে ফিরে আওয়ামী লীগ প্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা আন্দোলনে আছি এবং লক্ষ্য অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।’ জয় বাংলা শ্লোগানে মুখরিত হাজার হাজার মানুষ বঙ্গবন্ধুর বাসভবনের দিকে দৃপ্ত পদক্ষেপে এগিয়ে যায়। বাসভবনে সমবেত জনতার উদ্দেশে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘বন্দুক, কামান, মেশিনগান কিছুই জনগনের স্বাধীনতা রোধ করতে পারবে না।’

দুপুরে প্রেসিডেন্ট ভবন থেকে কড়া সামরিক প্রহরায় হোটেলে ফিরে ভুট্টো তার উপদেষ্টাদের নিয়ে বৈঠকে বসেন। এই বৈঠক শেষে ভুট্টোর নেতৃত্বে পিপলস পার্টির নেতৃবৃন্দ সন্ধ্যায় প্রেসিডেন্ট ভবনে যান। রাতে ভুট্টো ফেরার সময় হোটেলের বাইরে ভুট্টো-বিরোধী স্লোগান দিতে থাকেন বিক্ষুব্ধরা। সেখান থেকে ফিরে হোটেল লাউঞ্জে এক অনির্ধারিত সংবাদ সম্মেলনে ভুট্টো বলেন, প্রেসিডেন্ট এবং আওয়ামী লীগ প্রধান বর্তমান রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসনের জন্য একটি সাধারণ ঐকমত্যে পৌঁছেছেন। তবে এ ঐকমত্য অবশ্যই পিপলস পার্টির কাছে গ্রহণযোগ্য হতে হবে। পিপলস পার্টির অনুমোদন ছাড়া কোনো সিদ্ধান্ত পশ্চিম পাকিস্তানিরা মেনে নিতে পারে না।

এদিন বায়তুল মোকাররম প্রাঙ্গণে সশস্ত্র বাহিনীর সাবেক বাঙালি সৈনিকেরা সমাবেশ ও কুচকাওয়াজ করেন। তারা বলেন, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের জন্য যে অভূতপূর্ব ঐক্য গড়ে উঠেছে, তাতে তারা আর প্রাক্তন হিসেবে বসে থাকতে পারেন না।

রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী লিখেছেন, ঢাকার কয়েকটি পত্রিকায় এদিন ‘বাংলার স্বাধিকার’ শিরোনামে একটি ক্রোড়পত্র প্রকাশিত হয়। ক্রোড়পত্রে প্রকাশিত হয় বঙ্গবন্ধু স্বাক্ষরিত একটি বাণী। ওই ক্রোড়পত্রে অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ চৌধুরী, অধ্যাপক রেহমান সোবহান প্রবন্ধ লেখেন। অবজারভার গ্রুপের পত্রিকাগুলো সেদিন এই ক্রোড়পত্র প্রকাশ করেনি। তারা পরদিন ছাপে। এই ক্রোড়পত্রে মূল পরিকল্পনায় ছিলেন নাট্য আন্দোলনের কর্মী রামেন্দু মজুমদার।   

২২ মার্চ সাংবাদিকদের সংগ্রহ করা  ভুট্টো-বিরোধীদের অবস্থানের খবর ও আলোকচিত্রের একটি আলোকচিত্র পরদিন ইত্তেফাকের প্রথম পাতায় প্রকাশিত হয়। এদিন জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে মিছিলের ঢল ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে যায়। দৈনিক পত্রিকাগুলো পরদিন সেই খবর প্রকাশ করে লেখে, একদিনে এত মিছিল এর আগে কখনও ৩২ নম্বরে যায়নি।

বাসভবনে জনতার উদ্দেশে বঙ্গবন্ধু এদিনও বেশ কয়েকবার বক্তৃতা দেন। জনতার গগনবিদারী শ্লোগান‘জয় বাংলা’ ‘জয় বঙ্গবন্ধু’ ধ্বনি ও করতালির মধ্যে জনগণের নেতা ঘোষণা করেন, ‘সাত কোটি বাঙালি যখন ঐক্যবদ্ধ হয়েছে, তখন আমি অবশ্যই দাবি আদায় করে ছাড়ব। ২৩ বছর মার খেয়েছি, আর মার খেতে রাজি নই। শহীদদের রক্ত বৃথা যেতে দেওয়া হবে না। প্রয়োজন হলে আরও রক্ত দেব। কিন্তু এবার সুদে-আসলে বাংলার দাবি আদায় করে আনব।’

(সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী ‘৭১ এর দশ মাস’)।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭