ইনসাইড বাংলাদেশ

কেমন আছেন ইবির সেই নির্যাতিতা ছাত্রী ফুলপরী?


প্রকাশ: 22/03/2023


Thumbnail

গত ১১ ও ১২ই ফেব্রুয়ারি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের গণরুমে এক নবীন ছাত্রীকে রাতভর শারীরিকভাবে নির্যাতন ও বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ করার অভিযোগ উঠে।

ভুক্তভোগী ফুলপরী খাতুন ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী। নির্যাতনের পরদিন ১৩ই ফেব্রুয়ারি ক্যাম্পাস ছেড়ে বাসায় চলে যান ভুক্তভোগী। তবে ১৪ ফেব্রুয়ারি তিনি পুনরায় ক্যাম্পাসে ফিরে আসেন। ওইদিনই বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর ও ছাত্র উপদেষ্টার কাছে নির্যাতনকারীদের বিচার ও নিজের নিরাপত্তার জন্য লিখিত অভিযোগ দেন। পরে তিনি সাহসিকতার সহিত গণমাধ্যমের কাছে সেদিন রাতের নির্যাতনের বর্ণনা দেন। এরপর এই ঘটনা নিয়ে সারাদেশব্যাপী তোলপাড় শুরু হয়। বিভিন্ন মহলে চলে আলোচনা-সমালোচনা। এমন ঘটনায় ফুলপরীর সাহসী ভূমিকা প্রসংশিত হয়েছে সবমহলে।

ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেনও ফুলপরীর সাহসিকতার প্রশংসা করে তাকে ‘বেগম রোকেয়া ও সুফিয়া কামালের উত্তরসূরি’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। এর আগেও ক্যাম্পাসগুলোতে এমন অনেক র‌্যাগিংয়ের ঘটনা ঘটেছে। তবে তাদের মধ্যে অনেকেই ক্যাম্পাস ছেড়েছেন, আবার কেউ লোকলজ্জা, আত্মসম্মান ও প্রভাবশালীদের ভয়ে চুপ করে সবকিছু সহ্য করেছেন। তবে ফুলপরী ছিল অন্য সবার থেকে আলাদা। নির্যাতনের শিকার হয়ে ক্যাম্পাস ছাড়লেও ফের প্রতিবাদী হয়ে তিনি আবারও ক্যাম্পাসে ফিরেন। বর্তমানে ফুলপরী থাকছেন বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে। হাইকোর্টের নির্দেশনায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ফুলপরীর জন্য এই হলেই সিট বরাদ্দ দিয়েছেন। সেই প্রতিবাদী ফুলপরী বর্তমান ক্যাম্পাসে থেকে নিয়মিত ক্লাসে অংশ নিচ্ছেন।

দীর্ঘদিন বাড়িতে থাকায় ক্লাসে অংশ নিতে পারেননি ফুলপরী। তাই এখন বেশিরভাগ সময় পড়াশোনা করেই পার করছেন তিনি। ফুলপরী জানিয়েছেন, আমি একাডেমিক পড়াশোনায় একটু পিছিয়ে থাকার কারণে এখন বেশিরভাগ সময় পড়াশোনা করেই পার করছি। আমার শিক্ষকরা নিয়মিত খোঁজ খবর রাখছেন। আমি পড়াশোনায় পিছিয়ে থাকায় সহপাঠীরাও আমাকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করছেন।

নতুন হলে উঠে পর সবার সঙ্গে ভালোভাবে মিশে গেছেন ফুলপরী। তিনি জানিয়েছেন, সম্প্রতি নতুন হলে উঠেছি। হলে উঠার পর আশপাশের সবার সঙ্গে ভালোভাবে মিশে গেছি। হলের সবাই আমার সঙ্গে খুব ভালো ব্যবহার করছে। সবার সঙ্গে কথা হচ্ছে, গল্প হচ্ছে। হলের বড় আপুদের কাছ থেকেও সবধরনের সাহায্য পাচ্ছি। সবার সঙ্গে মিলেমিশে খুব ভালো সময় কাটছে।

সেদিন রাতের নির্যাতনের ভয়াবহতা এখনও পীড়া দিচ্ছে ফুলপরীকে। ফুলপরী বলেন, সেই রাতের ভয়াবহতা এখনো আমাকে পীড়া দেয়। যখন একাকী বসে থাকি তখন বেশি মনে পড়ে। ওই ঘটনা মনে পড়লে খুব কষ্ট হয়। আমি চাই, কারো জীবনে যেন কখনো এমন পরিস্থিরি মুখোমুখি না হতে হয়। আমার সঙ্গে যারা এমন ন্যাক্ক্যারজনক ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের স্থায়ী বহিষ্কার চাই। তা না হলে তারা আবার ক্যাম্পাসে ফিরে এমন ঘটনা ঘটাবে।

ছোট বেলা থেকেই অন্যায়ের প্রতিবাদ করে বড় হয়েছেন ফুলপরী। তার প্রতিবাদী হয়ে উঠার পেছনে তার বাবা-মা সর্বদা অনুপ্রেরণা ও সাহস জুগিয়েছেন। পরিবারের স্বপ্ন পুরণে শত-বাঁধা উপক্ষে করেও সামনে এগিয়ে যেতে চান ফুলপরী। তিনি বলেন, অন্যায় দেখলে প্রতিবাদ করাই আমার অভ্যাস। ছোটবেলা থেকে কখনো অন্যায়কে প্রশ্রয় দেইনি। আমার বাবা-মা আমাকে এমনভাবেই বড় করেছেন। তবে মূল অনুপ্রেরণা আমার বাবা। শত প্রতিবন্ধকতা আসলেও পরিবারের স্বপ্ন পূরন করতে চাই।

সবাইকে সাহসিকতার সঙ্গে অন্যায়ের প্রতিবাদ করা উচিত বলে জানিয়েছেন ফুলপরী। তিনি বলেন, আমার মনে হয় প্রত্যেকের অন্যায়ের প্রতিবাদ করা উচিৎ। হোক সে অন্যায় ছোট কিংবা বড়। আমারা প্রতিবাদ করলে অন্যায় থেমে যাবে। আমি প্রতিবাদ না করলে এমন ঘটনা আরো চলতো। এমনকি আমাকে আগামী পাঁচটি বছরও তাদের বিভিন্ন নির্যাতন সহ্য করে চলতে হতো। আমার প্রতিবাদের মধ্যদিয়ে এ ক্যাম্পাসে আর কোন র‌্যাগিং বা নির্যাতন হবে না বলে মনে করি।

প্রসঙ্গত, নির্যাতনের শিকার ফুলপরী খাতুনের লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে ১৫ই ফেব্রুয়ারি পৃথকভাবে তিনটি তদন্ত কমিটি করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, সংশ্লিষ্ট হল কর্তৃপক্ষ ও শাখা ছাত্রলীগ। এছাড়া হাইকোর্টের নির্দেশেও একটি তদন্ত কমিটি করে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসন। তদন্ত প্রতিবেদনে নির্যাতনের সত্যতার প্রমাণ পান হাইকোর্টও।  ফলে ১লা মার্চ জড়িত পাঁচ ছাত্রীকে বহিষ্কার, ভুক্তভোগীকে তার পছন্দমতো সিট বরাদ্দ দেয়া, দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে সংশ্লিষ্ট হল প্রভোস্টকে প্রত্যাহার ও ভিডিও ধারণকারী মোবাইল উদ্ধারসহ বিভিন্ন নির্দেশনা দেন হাইকোর্ট। পরে ছাত্রী নির্যাতনে জড়িত পাঁচ ছাত্রীকে গত ৪ঠা মার্চ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার করে কর্তৃপক্ষ। বহিষ্কৃতরা হলেন, শাখা ছাত্রলীগ সহসভাপতি ও পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের সানজিদা চৌধুরী অন্তরা, ফিন্যান্স এ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের তাবাসসুম ইসলাম, আইন বিভাগের ইসরাত জাহান মিম, চারুকলা বিভাগের হালিমা আক্তার ঊর্মি ও ফিন্যান্স বিভাগের মুয়াবিয়া জাহান। অন্তরা বাদে সকলেই ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী। তারা সকলেই ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। এই ঘটনায় গত ১লা মার্চ পাঁচজনকেই সংগঠন থেকে বহিষ্কার করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। এছাড়া তাদের দেশরত্ন শেখ হাসিনা হল থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭